• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৭ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

উপকূলীয় অঞ্চলে ইন্টারনেট সেবায় চরম ভোগান্তি

  সম্রাট, কয়রা (খুলনা)

২০ জুন ২০২৩, ১৪:৩৫
উপকূলীয় অঞ্চলে ইন্টারনেট সেবায় চরম ভোগান্তি

দুই লক্ষাধিক জনঅধ্যুষিত উপকূলীয় অঞ্চল খুলনার কয়রা উপজেলায় রবি, গ্রামীণ ও বাংলালিংক অপারেটরে দুর্বল নেটওয়ার্ক ছাড়াও ব্রডব্রান্ড ইন্টারনেট সেবায় ও ভোগান্তি চরমে।

ব্রডব্রান্ড দুর্বল নেটওয়ার্ক আর ইন্টারনেটের শম্বুকগতির কারণে মোবাইল ফোন গ্রাহকের ভোগান্তি পিছু ছাড়ছে না। পাশাপাশি ইন্টারনেট, কলসহ নানা সেবার বে-হিসাবি প্যাকেজের নামে পকেট কাটছে ফোন কোম্পানিগুলো।

প্যাকেজগুলোর অস্পষ্ট হিসাবের কারণে দ্বিধায় পড়ছেন কোনো কোনো গ্রাহক। মোবাইলের সেবা নিয়ে সন্তুষ্ট আছেন এমন গ্রাহক এখন খড়ের গাদায় সুঁই খোঁজার মতোই দুর্লভ। ব্রডব্রান্ড ইন্টারনেটের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। উপজেলার অধিকাংশ এলাকায় উচ্চগতির ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ সন্ধ্যার পর থেকে কচ্ছপ গতিতে পরিণত হয়। ফলে নানামুখী ভোগান্তিতে পড়ছে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ। এর সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে উপজেলার আইটি সেবা ব্যবসায়ী ও ফ্রিল্যান্সারদের ওপর। ধীরগতির এই ইন্টারনেটের কারণে নির্দিষ্ট সময়ে বিদেশি ক্লায়েন্টদের কাজ বুঝিয়ে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ফলে ক্লায়েন্ট ধরে রাখাই বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াচ্ছে ফ্রিল্যান্সারদের কাছে।

গ্রাহকদের অভিযোগ, একাধিকবারের চেষ্টায় ফোনের সংযোগ মেলে। একজনের সঙ্গে একবারে কথা শেষ করা যায় না। কল ড্রপ হয় একাধিকবার। অধিকাংশ কল ড্রপের আবার ক্ষতিপূরণ মেলে না। ইন্টারনেট গতির অবস্থা আরও যাচ্ছে তাই। পর্যাপ্ত ডাটা থাকলেও ভিডিও কল, ইন্টারনেট ব্রাউজিং কিংবা ভিডিও দেখা কষ্টকর হয়ে যায়। ৪/৪.৫জি তো দূরের কথা মোবাইল ব্যবহার করাই বিরক্তিকর হয়ে উঠেছে। সব জায়গায় বেশির ভাগ সময় মোবাইলে ২জি দেখায়। থ্রিজি ও পাওয়া যাচ্ছে না। হঠাৎ নেটওয়ার্ক চলে যাচ্ছে। বাংলালিংকে ও বিদ্যুৎ না থাকলে ইন্টারনেট থাকে কচ্ছপ গতি। ব্রডব্রান্ড ইন্টারনেটের মূল্য বেশি সেবা কম, ধীর গতি।

বাংলালিংক ইন্টারনেট ব্যবহারকারী সামাদ হোসেন, আলতাফ শেখ, কামরুল ঢালী, মাজেদুল, রেজাউলসহ একাধিক বাংলালিংক ইন্টারনেট ব্যবহার কারীর অভিযোগ, বারবার নম্বর ডায়াল করেও নির্দিষ্ট নম্বরে ফোন মিলছে না। যখন মিলছে, তখন কথা অস্পষ্ট। মাঝে মধ্যে কল কেটেও যাচ্ছে। এক সময় জোরে, এক সময় এমন আস্তে শব্দ আসছে যে ঠিক করে শোনাই যাচ্ছে না। ঈদের সময় শহর থেকে যখন মানুষ গ্রামে আসে ইন্টারনেট ব্যবহারের সংখ্যা বাড়ে তখন একেবারে নাজুক অবস্থা তখন ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। একই অবস্থা মোবাইল নেটেরও।

‘থ্রি-জি’ নেটওয়ার্কের ফোনেও কোন কিছু ডাউনলোড বা আপলোড করতে গিয়ে হাত ব্যথা হয়ে যাচ্ছে। লোডিং এর চাকা ঘুরেই যাচ্ছে স্ক্রিনে। বিদ্যুৎ না থাকলে তো ইন্টারনেট ই পাওয়া যায় না। চরম বাজে অবস্থায় আছে বাংলালিংকের ইন্টারনেট সেবা।

শহরের মোবাইল গ্রাহকরা সহজেই ৪ কিংবা ৪.৫জি সুবিধা পেলেও এমন সুযোগ সুবিধা থেকে প্রতিনিয়ত বঞ্চিত হচ্ছে গ্রামের গ্রাহকরা। বাংলালিংক, গ্রামীণফোন, রবি ও টেলিটক এ চার অপারেটরের গ্রাহকরাই নেটওয়ার্ক সমস্যা, কল ড্রপ ও মানসম্মত সেবা থেকে বেশি বঞ্চিত। তবে ভোগান্তি থাকলেও মানুষ তুলনামূলক কম অভিযোগ করেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে। কারণ অভিযোগের পথটি সহজ নয় এমনটি অভিযোগ ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অধিকাংশ এলাকায় পাড়া ভিত্তিক অনিবন্ধিত ইন্টারনেট প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠায় তারা গ্রাহকের চাহিদা পূরণ করতে পারছে না। তাদের নিজেদের পর্যাপ্ত ব্যান্ডউইথ না থাকায় সন্ধ্যার পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত নেট স্লো থাকে। অভিযোগ দিয়েও এই সমস্যার সমাধান হচ্ছে না।

উপজেলা মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় লক্ষাধিক। আর ব্রন্ডব্রান্ড ইন্টারনেট ব্যবহার করীর সংখ্যা প্রায় চার হাজার উপজেলায় কোনো নিবন্ধিত আইএসপি ব্রডব্রান্ড নেই। উপজেলায় রেডনেট, রামদিয়া অনলাইন, কার্নিভাল এই তিনটি ইন্টারনেট কোম্পানির সাথে পাঁচটি স্থানীয় অনিবন্ধিত ইন্টারনেট ব্যবসায়ী চুক্তি মাফিক উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলে ইন্টারনেট সংযোগ দিচ্ছেন। এই ইন্টারনেট ব্যবসায়ী অপরিকল্পিতভাবে লাইন সংযোগ, বিভিন্ন রাস্তার পথে সর্বত্রই ঝুলছে তার। বিদ্যুতের পিলার ব্যবহার করে এসব তার ছড়িয়ে পড়েছে উপজেলাজুড়ে। প্রতিটি পিলারের সাথে পাকিয়ে ফেলা হয়েছে তারের কুণ্ডলী। ঝুলে থাকা এসব তারের মাধ্যমেই মাঝে মাঝে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়াসহ নানারকম দুর্ঘটনা ঘটছে অহরহ।

অভিযোগ রয়েছে, ব্রডব্রান্ড ব্যবসায়ীদের সরকারী নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি মূল্য দিতে হয়। লাইন সংযোগ দিতে ১৫০০-৫০০০ টাকা পর্যন্ত গুনতে হয় গ্রাহকদের। ইন্টারনেট গতি ও খুবই স্লো।

ময়না নবারুণ সংঘের সভাপতি ইসরাফিল হোসেন বলেন, গ্রামে ইন্টারনেটের যে বাজে অবস্থা তাতে মোবাইল ইন্টারনেটে দুর্ভোগ আর অযাচিত অর্থ ব্যয় ছাড়া ভোক্তার কিছু পাওয়ার নেই। বাজে নেটওয়ার্ক, দুর্বল গতি, চড়া মূল্যের এবং ঝামেলাপূর্ণ সব প্যাকেজ- এ রকম হরেক সমস্যা তো লেগেই আছে। কোনোটাই সমাধান হয় না।

কয়রার ইন্টারনেট ব্যবসায়ী দাউদ আলী বলেন, আমরা ইন্টারনেট কোম্পানির সাথে যোগাযোগ করে এলাকায় ইন্টারনেট সংযোগ দিচ্ছি সরকারি নির্ধারিত মূল্যে। তুলনামূলকভাবে ইন্টারনেট সেবা পাচ্ছে গ্রাহকরা।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড