• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

প্রধান শিক্ষকের স্বেচ্ছাচারিতা ও দুর্নীতিতে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে স্কুল

  রাকিব হাসনাত, পাবনা

২২ মে ২০২৩, ১৬:১৬
প্রধান শিক্ষকের স্বেচ্ছাচারিতা ও দুর্নীতিতে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে স্কুল

পাবনা সদর উপজেলার মালিগাছা ইউনিয়নের ভজেন্দ্রপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুর ই শারমিনের বিরুদ্ধে জাতীয় দিবস পালনে অনীহা, শিক্ষকদের সঙ্গে অসম্মানজনক আচরণ, স্বেচ্ছাচারিতা-দুর্নীতিসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।

বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা পাবনা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রাথমিক শিক্ষা অফিস রাজশাহী বিভাগীয় উপ পরিচালক বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। পাবনা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাহমিনা আক্তার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, সদরের মালিগাছা ইউনিয়নের ভজেন্দ্রপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চারটি গ্রামের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা পড়াশুনা করে আসছে। বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ সবার পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মাঝে স্বতঃস্ফূর্তভাবে পাঠদানের মাধ্যমে এলাকায় শিক্ষা প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। কিন্তু গত ২০১৯ সালে ভাঙ্গুড়া উপজেলা থেকে বদলী হয়ে আসা বর্তমান প্রধান শিক্ষক নুর ই শারমিন অত্র বিদ্যালয়ে যোগদান করার পর থেকেই তার অসংলগ্ন আচরণ ও স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে পড়াশোনা, চাকুরীর পরিবেশ, শিক্ষার্থী-শিক্ষক এবং অভিভাবকদের সঙ্গে অসহযোগিতামূলক ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করায় শিক্ষার মান নিম্নগতিতে ধাবিত হয়েছে।

বিদ্যালয়ের শিক্ষার মান উন্নয়নকল্পে বিভিন্ন ধরনের কার্যকলাপ বিগত প্রধান শিক্ষকদের মত পরিলক্ষিত হয় না। প্রায়ই তিনি সহকর্মীদের সাথে অসম্মানজনক আচরণ ও হুমকি দিয়ে থাকেন। এ অবস্থায় কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মধ্যে পড়াশুনার বিঘ্নিত ঘটছে।

এছাড়াও তিনি আসার পর থেকে বিদ্যালয়ের ভৌত অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও অন্যান্য উন্নয়ন কার্যক্রমের পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। তার দাম্ভিকতার কারণে তিনি এ ধরনের কার্যকর পদক্ষেপ নেন না। এছাড়া জাতীয় দিবস সমূহ পালনে রয়েছে তার বিশেষ অনীহা। যে কোনো জাতীয় দিবস নীতিমালা অনুযায়ী এলাকাবাসী ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ নিয়ে আড়ম্বরপূর্ণ ও যথাযথভাবে পালন করেন না।

গত ৭ মার্চ বিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ প্রচার করার কথা থাকলেও তিনি তা করেননি। প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহে প্রোজেক্টরের মাধ্যমে পদক অনুষ্ঠান দেখানোর কথা থাকলেও তিনি দেখাননি। শিক্ষার্থীদের ক্লাস না নিয়ে অফিসে খোশগল্পে মেতে ছিলেন। এ সকল আচরণ স্পষ্টত: জাতীয় দিবস তথা স্বাধীনতা, বঙ্গবন্ধু এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার বিরোধী মনোভাবের বহি:প্রকাশ ঘটেছে তার মধ্যে।

অভিযোগ সূত্রে আরও জানা গেছে, এর আগে তিনি ভাঙ্গুড়ার চর লক্ষীকোল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকরিরত অবস্থায় নিয়মিত স্কুলে আসতেন না। বাবা কলেজের শিক্ষক ও স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় নিজের ইচ্ছামত স্কুল পরিচালনা করতেন। সেখানে তার বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ আসতে থাকায় সেখান থেকে তাকে সদরের ভজেন্দ্রপুরে বদলী করা হয়। এখানে এসেও তিনি সুষ্ঠু শিক্ষার পরিবেশে বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা করছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয়দের কয়েকজন জানান, আমাদের এই স্কুলে কোন জাতীয় দিবসই পালন করা হয় না। স্কুলের প্রধান শিক্ষক কোন শিক্ষার্থীর অভিভাবকদেরও কোনদিন ডাকেন না। নিজের ইচ্ছামত স্কুল পরিচালনা করে আসছেন। যেহেতু তিনি কোনো জাতীয় দিবস পালন করেন না তাহলে তিনি সরকার ও স্বাধীনতা বিরোধী। এ জন্য প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি করেন তারা।

ভজেন্দ্রপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জেসমিন আরা শিল্পী বলেন, আমাদের প্রধান শিক্ষক সব সময় আমাদের সঙ্গে উগ্র আচরণ করেন। ভাষা খারাপ করে কথা বলেন। জাতীয় দিবসগুলো উনি পালন করেন না। পালন করলেও দায়সারাভাবে করে। তিনি আসার পর থেকে স্কুলের লেখাপড়ার পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে। তার মতো শিক্ষক ও শিক্ষাবিরোধী, স্বাধীনতার চেতনার ঘোরবিরোধী প্রধান শিক্ষককে অপসারণ করে আমাদের এলাকার প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে সকল প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের প্রতি আহবান জানান তিনি।

আরেক শিক্ষক আফরোজা আক্তার বলেন, আমাদের সঙ্গে উগ্র আচরণ করেন। সব সময় মানসিক টর্চারে রাখেন। আর আমরা এর প্রতিবাদ করলে বলে যে বেশি কথা বললে এর প্রতিফলন ভোগ করতে হবে কিন্তু। কথায় কথায় আমাদের বিরুদ্ধে নোটিশ জারি করেন। আমাদের বেশ কয়েকবার হুমকিও দিয়েছেন। আমরা তার বিরুদ্ধে থানায়ও জিডি করেছি। এই স্কুল থেকে তাকে দ্রুত অপসারণ করতে আহবান জানান তিনি।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত ভজেন্দ্রপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নূর ই শারমিন বলেন, হঠাৎ আমার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এমন ঘটনা মিথ্যা ও বানোয়াট।

পাবনা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাহমিনা আক্তার বলেন, এ বিষয়ে আমরা লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পাবনা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নিখিল চন্দ্র হালদার বলেন, এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। স্কুলে গিয়ে শিক্ষকদের জবানবন্দি নিয়ে পুরো ঘটনা তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড