রিয়াজুল ইসলাম, কুষ্টিয়া
গত ২ বছর আগে কুষ্টিয়া হাউজিং সি ব্লকের তালতলা এলাকায় দীর্ঘ চল্লিশ বছর ধরে বসবাসরত বরাদ্ধকৃত ৬টি বসতবাড়ির ৮টি পরিবারকে কোনো প্রকার পূর্ব নোটিশ ছাড়াই উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেছেন হাউজিং কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন যাপন করছে অসহায় পরিবার গুলো।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কুষ্টিয়া হাউজিং সি ব্লকের টিনসেড করে তালতলায় ৪০ বছর ধরে মা বোন, স্ত্রী ও ৩ সন্তান নিয়ে বসবাস করছিলেন মৃত আব্দুল গণির ছেলে আরমান সওদাগর। তিনি স্থায়ী বরাদ্দের জন্য ২০১৮ সালে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের নিকট আবেদন করেন। সেই আবেদনের প্রেক্ষিতে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ রাজশাহী ডিভিশনের বিভাগীয় প্রকৗশলীর মাধ্যমে তদন্ত প্রতিবেদন, সরেজমিন বাস্তবতা ও বরাদ্দ দেওয়া যেতে পারে মর্মে প্রতিবেদন প্রদান করেন। কিন্তু কোন এক অজ্ঞাত কারনে আজও বরাদ্দ পাননি আরমান সওদাগর। তার অভিযোগ প্রতিবেশী আফজাল মাষ্টার তার এক সচিব আত্মীয়ের মাধ্যমে আরমানের বসবাসকৃত জায়গাটি তার নিজের নামে নেওয়ার জোর প্রচেষ্টা চালায়। এমনকি ৩০ হাজার টাকায় বুলডেজার ভাড়া করে এনে আরমানের বাড়ি ভেঙেছে বলেও অভিযোগ করেন আরমান সওদাগর ও পরিবার।
এ ঘটনার নেপথ্যের নায়ক হাউজিং এষ্টেট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আফজাল হোসেন। এক উদ্ধতন কর্তার সহযোগীতায় ও হাউজিং অফিসে অবৈধ সুবিধা দিয়ে বস্তিবাসীর শেষ ঠিকানা গুঁড়িয়ে দেন বলে এলাকায় জনশ্রুতি রয়েছে।
আরও জানা যায়, হাউজিং এস্টেট এর উপ-সহকারী প্রকৌশলী তরিকুল হাসান ও আফজাল মাষ্টার এর যোগসাজশে এই বসতি ভাঙ্গে। এই তরিকুলের বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ। রয়েছে নামে বেনামে রয়েছে অঢেল সম্পত্তি। তরিকুল বেশ কয়েকবার এলাকাবাসীর হাতে গণপিটুনি খেলেও এখনো থামেনি তার অপকর্ম। জানা যায়, কুষ্টিয়া জেলার ডিসি-র অজান্তে এবং কোনো কাগজ কলমের যথেষ্ট প্রমাণ ছাড়া অবৈধভাবে আফজাল মাষ্টার ও হাউজিং কর্তৃপক্ষের তরিকুল ও কয়েকজন দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার যোগসাজশে ভূমিহীন মানুষ গুলোর উপর এই নির্মম ও হৃদয়হীন কর্মকান্ড ঘটায়।
আফজাল মাস্টার এই অসহায় পরিবারগুলোর বাড়ি ভেঙে দিয়েই ক্ষান্ত হন নাই, বিভিন্ন সময় নানা ধরনের অত্যাচার করে যাচ্ছে পরিবারগুলোর উপর। বিভিন্ন ধরনের হুমকি ধামকিসহ এই পরিবারগুলোর এখান থেকে উচ্ছেদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে। মাঝে মধ্যেই ভাঙ্গা জায়গায় আমার জমি বলে প্রাচীর দিয়ে ঘিরে ফেলতে যায়। কিন্তু এলাকাবাসী বাধা ও আদালতে মামলা থাকার কারণে প্রতিবারই তিনি ব্যর্থ হন। তবে এবার বেশ কিছু জায়গা বর্ধিত করে প্রাচীর দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।
এ বিষয়ে খোলা আকাশের নিচে বসবাসরত ভানু বলেন, দীর্ঘদিন ধরে তার বাসার প্রাচীর ফেটে কাত হয়েছিল। আমরা অনেকবার বলেছি এই প্রাচীর ভেঙে পড়লে একটা দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। কিন্তু আফজাল মাস্টার এ বিষয়ে কোনো কর্ণপাত করেন নাই। অবশেষে গত শনিবার ঝরে প্রাচীর ভেঙে তার গায়ের উপর পড়ে। এর পরে এক হাত জায়গা বর্ধিত করে আদালতকে অবমাননা করে প্রাচীর নির্মাণ করে আফজাল মাস্টার।
এ বিষয়ে কুষ্টিয়া হাউজিং এষ্টেট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আফজাল হোসেন বলেন, মামলার জায়গায় বর্ধিত করে প্রাচীর দেওয়ার কথাটি মিথ্যা। আগে যেখান থেকে প্রাচীল ভেঙ্গেছিল সেখান থেকেই প্রাচীর নির্মাণ করা হচ্ছে। তবে সামনের দিকে একটু বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। হাউসিং এষ্টেট এর থেকে জিজ্ঞাসা করে বর্ধিত করেছেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, না জিজ্ঞাসা করি নাই। সবাই যেভাবে রাস্তার দিকে এগিয়ে এসেছে আমিও সেভাবেই দিয়েছি।
এ বিষয়ে কুষ্টিয়া হাউজিং এস্টেটের উপসহকারী পরিচালক তরিকুল হাসান এর সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে হলে তিনি তার ফোনটি কেটে ফোন অফ করে দেন।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড