• রোববার, ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

শুকিয়ে গেছে পাহাড়ের ঝিরি-ঝর্ণা

বান্দরবানের দুর্গম পাহাড়ী পল্লীগুলোতে তীব্র পানি সংকট

  মোহাম্মদ আব্দুর রহিম, স্টাফ রি‌পোর্টার, বান্দরবান

০৬ মে ২০২৩, ১৩:০৩
বিশুদ্ধ পানি

বান্দরবানের দুর্গম পাহাড়ি পল্লীগুলোতে দেখা দিয়েছে পানীয় জলের তীব্র সংকট। বিশুদ্ধ পানির অভাবে নদী ও ঝিরির দূষিত পানি পান করে জীবন ধারণ করছে দূর্গম এলাকার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষেরা। এর ফলে ডায়েরিয়া, আমাশয়সহ বিভিন্ন পানি বাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে স্থানীয় পাড়াবাসীরা। শুধু তাই নয় শুষ্ক মৌসুমে ঝিরি-ঝর্ণার পানি শুকিয়ে যাওয়ায় দৈনন্দিন ব্যবহার্য্য পানিরও তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে বিভিন্ন পাড়ায়।

সরেজমিনে দেখা গেছে, পার্বত্য জেলা বান্দরবানের দূর্গম পাহাড়ে বসবাসকারী নৃ-গোষ্ঠীদের পানির প্রধান উৎস নদী ও ঝিরি-ঝর্ণা। দীর্ঘদিন ধরে দৈনন্দিন নানা কাজে ব্যবহার্য্য পানীয় জলের চাহিদা মিটাতে এসব ঝিরি-ঝর্না ও নদীর পানি ব্যবহার করে জীবন ধারণ আসছে দূর্গম এলাকার বাসিন্দারা। কিন্তু শুষ্ক মৌসুমে ঝিরি-ঝর্ণার পানি শুকিয়ে যাওয়ায় দূর্গম এলাকায় দেখা দিয়েছে পানীয় জলের তীব্র সংকট। দূষিত পানি পান করে ইতোমধ্যে বিভিন্ন পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে এই সমস্ত এলাকার জনসাধারণ।

স্থানীয় বা‌সিন্ধারা জানায়, বান্দরবানের বেশির ভাগ এলাকায় পানির স্তর শুকিয়ে যাওয়ায় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ও পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের শত কোটি টাকা ব্যয়ে স্থাপনকৃত রিংওয়েল-টিউবওয়েল ও জিএফএস লাইনগুলো পড়ে রয়েছে অকেজো অবস্থায়। এর ফলে নদী ও পাহাড়ি ঝিড়ি থেকে দৈনন্দিন ব্যবহার্য্য পানি সংগ্রহের জন্য পাড়ার জনসাধারণকে পাড়ি দিতে হয় কয়েক কিলোমিটার পাহাড়ী পথ। তবে তীব্র তাপদাহের কারণে নদীর পানি শুকিয়ে গেলে দিনদিন এই পানির সঙ্কট আরো প্রকট আকার ধারণ করবে বলে মনে করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

‌খোঁজ নি‌য়ে জানা যায়, বান্দরবান সদর উপজেলার পার্শ্ববর্তী ইউনিয়ন সুয়ালক, টংকাবতী ও বাংলার দার্জিলিং খ্যাত চিম্বুক পাহাড়ে বসবাসরত পাহাড়ি জনগোষ্ঠীসহ জেলার লামা, আলীকদম, রুমা, থানচি উপজেলার দূর্গম এলাকার গ্রামগুলোতে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর পাশাপাশি বাঙালিসহ বসবাসরত ২০ হাজারেরও বেশি মানুষ রোগমুক্ত নিরাপদ পানির সঙ্কটে রয়েছে বলে জানিয়েছেন এলাকার সচেতন মহল ও জনপ্রতিনিধিরা।

বান্দরবান মৃত্তিকা ও পানি সংরক্ষণ কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. মাহবুবুল ইসলাম জানিয়েছেন, পার্বত্যঅঞ্চলে অবাধে বৃক্ষ নিধন, পাহাড় কর্তন ও ঝিরি থেকে পাথর উত্তোলনের ফলে পানির উৎস গুলো ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। আমাদের পরিকল্পিতভাবে বনায়ন করতে হবে। কোনভাবেই পাহাড় কাটা যাবে না। ঝিরি ঝর্ণাসহ পাহাড়ের সাথে লেগে থাকা পাথর উত্তোলন বন্ধ করতে হবে। পাশাপাশি আমাদেরকে চাষাবাদের ক্ষেত্রেও আধুনিক পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে। গতানুগতিকভাবে পাহাড়কে ন্যাড়া করে গাছপালা কে‌টে শূন্য করে চাষাবাদ করা যাবে না। তাহলে পাহাড়ের মাটি দ্রুত ধুয়ে গিয়ে ঝিরি ঝর্ণাতে পড়বে। ঝিরির গভীরতাটা কমে গিয়ে পানি শূন্য হয়ে পড়বে বলে মনে করেন এই পরিবেশ বিশেষজ্ঞ।

এ বিষয়ে বান্দরবান জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী শর্মীষ্ঠা আচার্য্য বলেন, শুষ্ক মৌসুমে বান্দরবানের মানুষ খুবই পানি সংকটে ভুগে। এটা নিরসনের জন্য কিছু প্রকল্প চলমান রয়েছে। প্রত্যেকটি ইউনিয়নের ২৬টি করে ওয়াটার মেশিন দেওয়ার বিধান রয়েছে। এ প্রকল্পটি তিন বছর ধরে বাস্তবায়িত হচ্ছে। বেশ কিছু জায়গা আছে যেখানে আমরা টিউবল করতে পারি না। সেসব জায়গায় আমরা জিএফএসটা দেই। সেটাও শুষ্ক মৌসুমে ঠিকভাবে পা‌নি পাওয়া যায় না। তাই আমাদের পরিকল্পনা আছে ভবিষ্যতে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করে কিছুটা পিউরিফাই করে মানুষের কাছে পৌঁছে দি‌তে পার‌লে মানুষের পা‌নির চাহিদাটা কিছুটা মিটবে। সেভাবে একটা প্রকল্প আমাদের পার্বত্য মন্ত্রণালয়ে প্রক্রিয়াধীন আছে। আশা করছি সেটা আগামী জুনের মধ্যেই অনুমোদন পেয়ে যাবো বলে জানান তিনি।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড