• রোববার, ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

চূড়ান্ত বরখাস্তের পরেও আট বছর ধরে বেতন নিচ্ছেন প্রধান শিক্ষক

  রাকিব হাসনাত, পাবনা

০৬ মে ২০২৩, ১২:৩০
আফসার আলী

আর্থিক দুর্নীতি ও নানা অনিয়মে অভিযুক্ত হওয়ায় পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার দিলপাশার ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আফসার আলী রানা চূড়ান্তভাবে বহিষ্কৃত হওয়ার পরেও নিয়মিত বেতন ভাতা উত্তোলন করছেন।

প্রায় এক যুগ আগে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের আপিল এন্ড আরবিট্রেশন কমিটি এই প্রধান শিক্ষককে বরখাস্ত করেন। তবে তিন বছর পরেই বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি ওই প্রধান শিক্ষককে বেতন ভাতা প্রদান শুরু করেন। ম্যানেজিং কমিটির এমন স্বেচ্ছাচারিতার বিষয়ে দিলপাশের ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মোঃ শাহাদাত হোসেন রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন এবং আদালতে একটি মামলা ও দায়ের করেছেন।

ওই ইউপি সদস্য লিখিত অভিযোগ ও অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রধান শিক্ষক আফসার আলী রানা বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই নানাভাবে অর্থ আত্মসাৎ শুরু করেন। ২০০৪ সালে আয়া পদে শম্পা খাতুন নামে এক নারীকে ভুয়া নিয়োগ পত্র দিয়ে ১০ লাখ টাকা হাতানোর অভিযোগ উঠে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। তিন মাস পরে শম্পা খাতুন চাকরিচুত্য হয়।

একপর্যায়ে তৎকালীন ম্যানেজিং কমিটি প্রধান শিক্ষকের এসব অনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিষয়ে রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডে লিখিত অভিযোগ করেন। শিক্ষা বোর্ড কর্মকর্তাদের তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হয়। এরপেক্ষিতে ২০১১ সালের ১ ডিসেম্বর আপিল অ্যান্ড আরবিট্রেশন কমিটির সভায় ৬ নম্বর আলোচ্য বিষয়ে প্রধান শিক্ষক আফসার আলী রানাকে চূড়ান্তভাবে বরখাস্ত করা হয়। এরপর থেকে ওই প্রধান শিক্ষকের বেতন ভাতা বন্ধ করে দেন ম্যানেজিং কমিটি।

এদিকে বেতন ভাতা বন্ধ হওয়ার পরে আফসার আলী রানা শিক্ষা বোর্ড বরাবর বেতন ভাতা চালু করার জন্য আবেদন করেন। তবে শিক্ষা বোর্ড ২০১৩ সালের ৩০ মে বরখাস্তকৃত প্রধান শিক্ষককে পুনঃ বহালের কোন সুযোগ নেই মর্মে আবারো প্রধান শিক্ষককে নোটিশ করেন।

অবশেষে প্রধান শিক্ষক হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। রিট শুনানিতেও বেতন ভাতা প্রদানের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি হাইকোর্ট। এ অবস্থায় ২০১৪ সালের এপ্রিল মাসে সেসময়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মিজানুর রহমান মন্টু মারা যান। তখন ওই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান অশোক কুমার ঘোষ ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি দায়িত্ব গ্রহণ করেন। অশোক কুমার ঘোষ দায়িত্ব নিয়ে ওই বছরের আগস্ট মাস থেকে প্রধান শিক্ষককে বেতন ভাতা প্রদানের রেজুলেশন করে ব্যাংকে জমা দেন। তবে ব্যাংক কর্মকর্তা শিক্ষা বোর্ডের কোন আদেশ ছাড়া বেতন ভাতা প্রদান করতে রাজি হয়নি। পরে রাজনৈতিক চাপে বেতন সাক্ষর করতে বাধ্য হন ব্যাংকের কর্মকর্তা।

উল্লেখ্য, গত বছর এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ফরম পূরণের টাকার শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক আংশিক ফেরত দেওয়া টাকা আত্মসাতের অভিযোগে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের কাছে ৩৩ জন শিক্ষার্থী লিখিত অভিযোগ করেন। পরে টাকা ফেরত দিতে বাধ্য হন ওই প্রধান শিক্ষক।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক আফসার আলী রানা ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, এসব বিষয়ে আমি সাংবাদিকদের জানাতে বাধ্য নই। এ সময় তিনি অভিযোগকারীদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন।

ম্যানেজিং কমিটির বর্তমান সভাপতি অশোক কুমার ঘোষ বলেন, এডহক কমিটির আবেদনের প্রেক্ষিতে শিক্ষা বোর্ড প্রধান শিক্ষককে বরখাস্ত করেছিল। তাই সেটা বাতিল করে আমরা নিয়মিত ম্যানেজিং কমিটি তাকে বহাল করেছি। তাছাড়া প্রধান শিক্ষকের বেতন ভাতার বিষয়েও শিক্ষা বোর্ডের একটি নথি আছে। তবে সেই নথিতে কি আদেশ আছে তা তিনি বলতে পারেননি।

দিলপাশার ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুল হান্নান বলেন, প্রধান শিক্ষক আফসার আলী রানা দুর্নীতিপরায়ণ ব্যক্তি। তার কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুন্ন হচ্ছে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য ইউনিয়ন পরিষদের একজন সদস্য শিক্ষা বোর্ডে লিখিত অভিযোগ ও আদালতে মামলা দায়ের করেছেন

বেতন ভাতা প্রদানকারী সোনালী ব্যাংকর ভাঙ্গুড়া বাজার শাখার ব্যবস্থাপক জিল্লুর রহমান বলেন, শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক দরখাস্ত হওয়ার পরে পূর্বের ব্যবস্থাপক ওই প্রধান শিক্ষকের বেতন ভাতা চালু করেছে। কোন আদেশের বলে বেতন ভাতা চালু হয়েছে বিষয়টি জানা নাই। এখন প্রধান শিক্ষকের কাছে বিষয়টি জানতে চাওয়া হবে।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, দিলপাশার ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ ও মামলার বিষয়টি আমি শুনেছি। এখন ঊর্ধ্বতন দপ্তরের নির্দেশনা মোতাবেক পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড