• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৭ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

বাজারে হাওরের ধানে সয়লাবের পরও কৃষকদের মুখ মলিন 

  নাজির আহমেদ আল-আমিন, ভৈরব (কিশোরগঞ্জ)

২৮ এপ্রিল ২০২৩, ১৩:২২
বাজারে হাওরের ধানে সয়লাবের পরও কৃষকদের মুখ মলিন 

কিশোরগঞ্জের ভৈরব মোকামে হাওরাঞ্চল থেকে ধান আসা শুরু হয়েছে। মৌসুমের শুরুতে নতুন ধান নিয়ে কৃষকের আগ্রহ ও ব্যবসায়ীদের উদ্দীপনা বন্দরনগরী ভৈরব এলাকার মোকামে পাইকারদের মধ্যে এক উৎসব বিরাজ করছে।

প্রতিদিন ভৈরব মোকামে হাওরের বিভিন্ন এলাকা থেকে নিয়ে আসা প্রায় ২ হাজার মণ ধান নৌকা থেকে লোড-আনলোড হচ্ছে। দেশের উত্তর পূর্ব হাওরাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ ধান চালের মোকাম জেলার অন্যতম ভৈরব বন্দর হওয়ায় সপ্তাহ জুড়ে হাজার হাজার মণ নতুন ধান কেনাবেচা শুরু হয়েছে। নদীর পাড় এলাকায় কৃষকরা দেশের বিভিন্ন প্রান্তরের হাওর থেকে ধান এনে নদীর ঘাটে জমা করছে। এখানে রেখেই চলছে বেচাকেনা।

ক্রেতা বিক্রেতার সরব উপস্থিতিতে প্রাণ ফিরে পেয়েছে মোকাম। অন্যান্য বছরের তুলনায় ধানের দাম এবার একটু বেশী হলেও উৎপাদন খরচ অনেক বেশী হওয়ায় কৃষকরা খুশি নন। বৈশাখের শুরুতে ধানের দাম বেশি ছিল। কিন্তু সপ্তাহখানেক যেতে না যেতেই ধানের দাম প্রতিমণে ৫০ থেকে ৭০ টাকায় নেমে এসেছে। এতে কৃষকরা হতাশায় রয়েছে। চালের দাম বেশী থাকলেও সেই তুলনায় ধানের দাম বেশী নয়।

ফলে আতঙ্ক বিরাজ করছে কৃষক ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে। এখনো সরকার কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি ধান-চাল ক্রয় শুরু করেনি। ফলে ধানের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে কৃষকরা। হাওরে ধান কাটা এখনো চলছে। এখন মূলত মোটা জাতের হিরা ধান আমদানি বেশি হচ্ছে।

নদীর পাড়ে আসা ধানের বাজারে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পাইকারি আড়তগুলোতে প্রতিমণ ধান ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। যা মৌসুমের শুরুতে ছিল ৮০০ থেকে ৮২০ টাকা। গত বছরে এই সময়ে প্রতি মণ ধান ছিল ৬শ টাকার মতো। হাওরের কিশোরগঞ্জ, সিলেট, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনা জেলার প্রায় ২০টি উপজেলা এলাকা থেকে বোরো ধান আমদানি হচ্ছে ভৈরবে। এসব ধান ট্রলারযোগে আসছে ভৈরব বাজারে।

ব্যবসায়ীরা বলছে- প্রতিবছরই বৈশাখ মাসের শুরুতে ধানের দাম কমে আসে। কারণ কৃষকরা ক্ষেতে ধান কাটার পর আধা শুকনা ধান বিক্রির জন্য ভৈরবে পাঠিয়ে দেয়।

এ দিকে বৈশাখের শুরুতেই স্থানীয় রাইস মিলগুলো চালু হয়েছে। এর আগে ফাল্গুন-চৈত্র মাসে ধানের অভাবে অধিকাংশ রাইস মিল বন্ধও হয়ে যায়। মুন্সিগঞ্জের মিরকাদিম, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, আশুগঞ্জসহ আশেপাশের এলাকার রাইস মিল মালিকরা ভৈরব বাজারে নতুন ধান কিনতে আসে। তারা ধান কিনে যার যার এলাকায় নিয়ে যায়। যোগাযোগ ব্যবস্থা নদীপথে ভাল থাকায় হাওরের উৎপাদিত অধিকাংশ ধান ভৈরবে আসে।

আশুগঞ্জের খান রাইস মিল মালিক আইয়ুব খান ও রিয়া এন্টারপ্রাইজ মালিক কবির মিয়া বলেন, ধানের অভাবে বছরে এক দুইমাস রাইস মিল বন্ধ থাকে। এ বছর প্রতিদিন এক টন থেকে দেড় টন ধান আমরা কিনতে পারছি। যদিও ভিজা ধান কিনতে হচ্ছে। এবার ধানের ফলনও ভালো হয়েছে। শুকনা ধান আমদানি হলেই দাম বাড়বে। এবার আশাবাদী ধান-চাল বিক্রি করে লাভবান হওয়া যাবে।

কিশোরগঞ্জের হাওর উপজেলার অষ্টগ্রামের আব্দুল্লাহপুরের কৃষক আক্কেল আলী বলেন, আমি ১০০ মণ ধান নিয়ে ভৈরব মোকামে এসেছি। এই ধান ৭২০ থেকে ৭৫০ টাকা মণ দামে বিক্রি করেছি। এতে আমার উৎপাদন ব্যয় আসলেও তেমন লাভবান হতে পারিনি। ধান উৎপাদন করতে সার, বীজ, জ্বালানি, কীটনাশক ব্যবহার ও শ্রমিক খরচ হিসাব করে প্রতিমণ ধান উৎপাদনে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৭শ টাকা।

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর থেকে আসা কৃষক রহমত আলী জানান, আমি দেড়শ মণ মোটা ধান ভৈরবে এনে ৭১০ টাকা দরে বিক্রি করেছি। নতুন ধান বাজারে আসার সাথে সাথে ধানের দাম বেড়ে গিয়ে আবার হঠাৎ করে কমে যাওয়ায় আমরা হতাশ।

ভৈরব বাজারের মহসিন মিয়া এন্ড সন্স আড়ত মালিক খুশনু মিয়া জানান, বৈশাখ মাসের শুরুতেই কৃষকরা ঝড় বৃষ্টির ভয়ে কাঁচা ধান কাটতে শুরু করে। তা নিয়েই ভৈরব বাজার আসে। ধান ভিজা হওয়ায় দাম কম। একমাস পর শুকনা ধান আমদানি হলে দাম বেড়ে যেতে পারে বলে তিনি জানান। তবে গত বছরের তুলনায় এবার ধানের দাম ১শ টকার মতো বেশী রয়েছে।

ভৈরব চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি সভাপতি আলহাজ্ব মো. হুমায়ূন কবির বলেন, সরকার খাদ্য গুদামে ধান চাল কেনা এখনও শুরু করেনি। এবার সরকারিভাবে প্রতি কেজি চালের দাম নির্ধারণ করেছে ৪৪ টাকা এবং ধানের দাম ৩০ টাকা। সরকার ধান চাল ক্রয় শুরু করলে দাম বৃদ্ধি পাবে। এতে কৃষকরা হতাশ হওয়ার কিছু নেই।

ভৈরব খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. সালাউদ্দিন ভূঁইয়া জানান, এখন ধান কেনার সরকারিভাবে কোনো নির্দেশনা নেই। নির্দেশনা আসলে গুদামে সরকারিভাবে ধান চাল ক্রয় শুরু করব।

কিশোরগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবদুস সাত্তার জানান, এবার কিশোরগঞ্জ জেলার হাওরে ধান উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ১ লাখ ৬৬ হাজার ৪২০ হেক্টর জমিতে এবং হাওরের ৬ উপজেলাতে নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৩ হাজার ৭১৫ হেক্টর জমিতে। সরকারিভাবে ধান চাল ক্রয় শুরু হলেই দাম বেড়ে যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড