• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩২ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

সমলয় পদ্ধতিতে কৃষক পর্যায়ে চলছে বোরো চাষ

  মাজেদুল ইসলাম হৃদয়, ঠাকুরগাঁও

২০ এপ্রিল ২০২৩, ১৪:১৬
সমলয় পদ্ধতিতে কৃষক পর্যায়ে চলছে বোরো চাষ
বোরো ধান চাষ করা হচ্ছে (ছবি : অধিকার)

দেশের বিভিন্ন জেলায় এ সমলয় পদ্ধতিতে পরীক্ষামূলক চাষাবাদ করা হলেও দেশের সর্ববৃহৎ সমলয় পদ্ধতিতে বোরো চাষ হচ্ছে ঠাকুরগাঁওয়ে। কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় জেলার রাণীশংকৈল উপজেলার নেকমরদ গ্রামের সাতজন কৃষকের ১১০ একর জমিতে সমলয় পদ্ধতিতে চাষ করা হচ্ছে বোর ধান।

কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণ, কম সময়ে, কম খরচে অধিক উৎপাদন ও শ্রমিক সংকট নিরসনের লক্ষ্যে এ পদ্ধতিতে চাষাবাদে সুফল পেতে শুরু করেছেন কৃষকরা।

এছাড়াও ফসল কাটার সময় শ্রমিক সংকট এখন বাংলাদেশে নিত্য বছরের সমস্যা। শিল্পায়নের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাবে কয়েক দশক ধরে মানুষ শহরমুখী। তাই প্রতিনিয়ত কমছে কৃষি শ্রমিক। সামনে এ সংকট আরও বাড়বে। এর একটা সমাধান হতে পারে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ ও সমলয় চায়।

বর্তমান সরকার কৃষিকে আধুনিক ও লাভজনক করতে টেকসই যান্ত্রিকী করণের বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। যার একটি হচ্ছে সমবায়ভিত্তিক সমলয় চাষাবাদ পদ্ধতি। অপর দিকে কৃষকরা অভিযোগ করেন যে ধান চাষ লাভজনক নয়। এটিকে লাভজনক করার অন্যতম উপায় হলো উৎপাদন ব্যয় হ্রাস করা। আর উৎপাদন ব্যয় হ্রাস করতে হলে বিকল্প নেই সমলয় চাষের। চারা উৎপাদন থেকে কর্তন পর্যন্ত ফসল উৎপাদনের প্রতিটি পদক্ষেপেই রয়েছে মেশিনের ব্যবহার। সিড সোইং মেশিনের সাহায্যে ট্রেতে ধানের বীজের মাধ্যমে চারা উৎপাদন করা হয়।

এরপর রাইস ট্রান্স প্লান্টার মেশিনের সাহায্যে সেই চারা জমিতে বপন করা হয়। এতে সনাতন পদ্ধতিতে একর প্রতি খরচ হতো ২০০০ থেকে ২২০০ টাকা। মেশিনের মাধ্যমে চারা রোপণ করায় খরচ হচ্ছে আর ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা। জমিতে সেচের মাত্রা পরিমাপের জন্য লাগানো হয়েছে ইউ ডি পাইপ। এতে পাঁচটি সেচের খরচ কমেছে বলে জানান কৃষক। এই পদ্ধতিতে ধান কাটা হবে কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিনের মাধ্যমে যেখানে কর্তন ও মারাই একই সাথে করা হবে। সমলয় পদ্ধতিতে ধান চাষের পাশাপাশি জমির আইলে লাগানো হয়েছে লাউ, ঝিঙ্গা ও কুমড়ার গাছ। এতে পূরণ হচ্ছে পারিবারিক সবজির পুষ্টি চাহিদাও।

সমলয় পদ্ধতিতে চাষাবাদের ফলে একই জমিতে বোরো আউশ আমন তিনটি ফসল উৎপাদন করা যাচ্ছে ফলে খাদ্যশস্যের উৎপাদন বাড়ার পাশাপাশি বাড়ছে কৃষি জমির নিবিড়তা। ফসলের পোকামাকড়ের উপদ্রব কম হওয়ায় কমছে কীটনাশক খরচ।

সমলয় পদ্ধতিতে চাষ করা কৃষক অখলাক হোসেন, মজিবর রহমান, মাহফুজুর রহমান বলেন, আমরা আগে এ পদ্ধতি সম্পর্কে কিছুই জানতাম না। আমরা যে যার মত আলাদাভাবে চাষাবাদ করতাম। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার মাধ্যমে আমরা এ পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে পেরে আগ্রহ প্রকাশ করি। সমলয় পদ্ধতিতে চাষ করে একদিকে আমাদের যেমন কৃষি শ্রমিকের সংকট নিরসন সহ সেচ খরচ কমেছে, অন্য দিকে আমরা একই সময়ে ফসল ঘরে তুলতে পারবো এবং উৎপাদনও অন্যান্য মৌসুমের তুলনায় বেশি হবে আশা করছি। ফলে দামও পাবো ভালো। এছাড়াও এ পদ্ধতিতে আমরা ফসলের মাঠের আইলে লাউ, ঝিঙা, কুমড়া সহ নানা বাড়তি ফসল ও সবজির চাষ করে একটা বাড়তি আয়েরও ব্যবস্থা হয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিস থেকেও আমরা সার ও বীজে ভালো ধরনের সহযোগিতা পেয়েছি।

রানীসংকৈল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জয় দেবনাথ বলেন, কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণ ও কম সময়ে অল্প খরচে অতিরিক্ত খাদ্য উৎপাদনের লক্ষ্যে সরকার যে প্রোজেক্ট গ্রহণ করেছে তাতে আমাদের এ প্রচেষ্টা একটা বড় ভূমিকা রাখবে বলে আমি মনে করি। কারণ আমাদের এটিই দেশের সর্ববৃহৎ সমলয় পদ্ধতিতে চাষের মাঠ। বর্তমান সরকার কৃষিকাজে যন্ত্রের ব্যবহার বাড়িয়ে কৃষিকে আধুনিক ও লাভজনক করতে নিরলস কাজ করছে।

তিনি আরও বলেন, কৃষি যান্ত্রিকীকরণে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে নেয়া হয়েছে নানা প্রকল্প। পাশাপাশি কৃষি যান্ত্রিকীকরণ ত্বরান্বিত করতে দক্ষ জনবল তৈরিতে এরই মধ্যে মাঠ পর্যায়ে কৃষি প্রকৌশলীর ২৮৪টি পদ সৃজন করা হয়েছে। ফলে আমাদের কৃষি যান্ত্রিকী করণের দিকেই যাচ্ছে। ‘সমলয়’ পদ্ধতিতে চাষ করলে যন্ত্রের ব্যবহার সহজতর হবে। কৃষকের সময়, শ্রম ও খরচ কমবে। কৃষক লাভবান হবেন। এতে বাঁচবে কৃষক, বাঁচবে দেশ।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড