রাকিব হাসনাত, পাবনা
বর্তমান দ্রব্যমূল্যের বাজারে ইদে মার্কেটে গিয়ে পরিবারের জন্য নতুন জামা কাপড় কেনার স্বপ্ন অনেক গরীব-দুস্থ মানুষদের। কিন্তু সাধ থাকলেও, সাধ্য নেই তাদের। বেশি দামের বাহারি পোশাক কেনা তাদের কাছে স্বপ্নই থেকে যায়।
যদিও তাদের সেই স্বপ্ন কিছুটা পূরণে ভূমিকা রেখেছে আবুল কাশেম ফাউন্ডেশন। মাত্র দশ টাকায় দরিদ্র অসহায় মানুষদের নতুন জামা কাপড় কেনার ব্যবস্থা করেছে ফাউন্ডেশনটি। বড়দের পোশাক থেকে শুরু করে ছোটদের শার্ট, প্যান্ট, পাঞ্জাবী, মেয়েদের বিভিন্ন রকমের পোশাক কিনছেন স্বল্প আয়ের মানুষেরা।
বছর ঘুরে আসা ইদের আনন্দ ভাগ করে নিতে এমন ইদ বাজারের উদ্যোগ নেয় পাবনার সুজানগর উপজেলার আবুল কাশেম ফাউন্ডেশন। তাদের এমন উদ্যোগে হাসি ফুটেছে অনেক দরিদ্র পরিবারের মুখে।
গতকাল মঙ্গলবার (১৮ এপ্রিল) বিকেলে সুজানগর পৌর সদরের কাশেম প্লাজায় ‘১০ টাকার ইদ আনন্দ’ শ্লোগানে এই ইদ বাজারের উদ্বোধন করেন ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা ও সুজানগন উপজেলার চেয়ারম্যান শাহীনুজ্জামান শাহীন।
এ সময় পৌর মেয়র রেজাউল করিম রেজা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ফেরদৌস আলম ফিরোজসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ ও গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
আয়োজকরা জানান- মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়া এ উদ্যোগ ইদের আগের দিন পর্যন্ত চলমান থাকবে। প্রতিদিন বেলা ১১টা থেকে পোশাক শেষ হওয়া পর্যন্ত চলবে।
স্বল্প আয়ের মানুষ ১০ টাকা দিয়ে তাদের পছন্দমত ইদের জামা কাপড় কিনতে পেরে বেশ উচ্ছ্বসিত। গৃহবধূ ছালমা খাতুন বলেন, আমাগারে তো মার্কেটে যায়া নতুন কাপুড় কিনা সম্ভব লায়। এহেনে ১০ টেকা দিয়ে নতুন কাপুর পায়া খুব ভাল লাইগলো।
আরেক গৃহবধূ আলেয়া খাতুন বলেন, ১০ টেকা দিয়ে মিয়ের জন্যই একখান জামা আর ১০ টেকা দিয়ে আমার শুয়ামীর জন্যই একখান লুঙ্গি কিনলেম।’ দশ বছরের শিশু মীম জানায়, শুনলেম এখানে ১০ টেকা দিয়ে নতুন জামা দিবি, তাই আইছি। দশ টেকা দিয়ে একখান নতুন জামা কিনে খুব খুশি।
অনির্বাণ হোসেন বলেন, ইদ আলি শহরের বিভিন্ন দোকানে শ্রম দিয়ে কিছু টেহা গোছাই। সেই টেহা দিয়ে ইদের কেনাকাটা করে থাকি। কিন্তু এই ইদে কোনো কাজ না থাহায় ইদের পোষাক কেনার স্বপ্ন স্বপ্নই থাকি যাচ্ছে। বাবা দিনমজুর হওয়ায় ঠিক মতো বাসা ভাড়াই দিতে পারে না। তাই ঈদের পোশাক পাবো, সেটা আশাই হরিনি। কিন্তু এহন এই নতুন পাজামা-পাঞ্জাবী পায়ায় বিশ্বাস করতি পারতিছিনি। মনে হচ্ছে এটা স্বপ্ন।
ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক সানজিদা ইয়াসমিন টুম্পা বলেন, ইদ আনন্দ সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে এবং স্বল্প আয়ের মানুষের ১০ টাকার মাধ্যমে নতুন পোশাক দিতে এমন আয়োজন করা হয়।
তিনি আরও জানান, ইদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে সমাজের অসহায় গবির ও দুস্থ মানুষকে বিভিন্নভাবে সাহায্য সহযোগিতা করে আসছে সংগঠনটি।
সুজানগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর একটি অংশ যারা ইদ, পূজা পার্বণে নতুন পোশাক কিনতে পারেন না। তাদের কথা চিন্তা করে আবুল কাশেম ফাউন্ডেশন যে উদ্যোগ নিয়েছে সেটি নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয় কাজ। এর মাধ্যমে দশ টাকা দিয়ে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ সহজেই তাদের ইদের পোশাক কিনতে পারছেন। সমাজের বিত্তবানদের এমন উদ্যোগে এগিয়ে আসা উচিত।
ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা ও উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীনুজ্জামান শাহীন বলেন, ইদ আসলে অবস্থা সম্পন্ন মানুষ তারা মার্কেটে গিয়ে পছন্দমতো ইদের নতুন পোশাক কিনতে পারেন। কিন্তু দরিদ্র মানুষগুলো তা পারে না। তাদের পক্ষে সম্ভব হয় না মার্কেটে গিয়ে ৮শ’ বা এক হাজার দিয়ে নতুন পোশাক কেনা।
তিনি আরও বলেন, তাদের কথা চিন্তা করে বিগত তিন বছরে ধরে এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। আরেকটি কথা হলো, দশ টাকা দিয়ে নতুন পোশাক দেয়ার উদ্দেশ্যে, যিনি নিচ্ছেন তিনি যেন মনে না করেন ফ্রি নিচ্ছেন। তিনি যেন মনে করেন তিনি টাকা দিয়েই নিচ্ছেন।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড