আবিদ মাহমুদ, রাউজান (চট্টগ্রাম)
দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদায় এপ্রিলের শুরু থেকে জুন মাস পর্যন্ত প্রজনন মৌসুম ধরা হয়। এখন প্রজননের ভরা মৌসুম। প্রজননের মৌসুম শুরু হলেও পরিবেশ অনুকূলে না থাকায় চলতি মাসে ডিম ছাড়ার সম্ভাবনা নেই।
যদিও হালদায় বেড়েছে মা-মাছের আনাগোনা। আগামী মাসের শুরুর জো'তে বজ্রপাতসহ বৃষ্টিপাতে পাহাড়ি ঢল সৃষ্টি হলে এবং পানির পরিবেশ অনুকূল থাকলে মা মাছ ডিম ছাড়তে পারে বলে মনে করছেন হালদা গবেষক ও চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজের জীব-বিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রভাষক ড. মো. শফিকুল ইসলাম।
জানা যায়, হালদায় প্রজনন মৌসুমে অমাবস্যা ও পূর্ণিমার জোতে বজ্রপাতসহ প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে কার্প জাতীয় মা-মাছ (রুই, কাতাল, কালিবাউশ, মৃগেল) নিষিক্ত ডিম ছাড়ে। মা-মাছ প্রথমে নমুনা ডিম, পরে পূর্ণাঙ্গ ডিম ছাড়ে। দুপারের মৎস্যজীবীরা ডিম সংগ্রহ করে সরকারি হ্যাচারি বা মাটির কুয়ায় ডিম ফুটিয়ে রেণু উৎপাদন করে তা বিক্রি করেন।
শতশত বছর ধরে দেশের জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে আসছে এ হালদা নদী। একাধিক ডিম সংগ্রহকারী জানিয়েছেন তারা ডিম আহরণের প্রস্তুতি শুরু করেছেন। অনেকে পুরাতন নৌকা মেরামত করছেন। আবার কেউ কেউ নতুন নৌকা বা বাঁশের ভেলা তৈরি করে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কেউ কেউ জাল বুনার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
অন্য দিকে ডিম ফুটানোর জন্য সরকারি হ্যাচারির পাশাপাশি ব্যক্তিগত মাটির কুয়া প্রস্তুত কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন ডিম সংগ্রহকারীরা। মৎস্য অধিদপ্তরের প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র পুনরুদ্ধার প্রকল্পের আওতায় রাউজানের পশ্চিম গহিরা, মোবারকখীল, কাগতিয়া, হটহাজারী উপজেলার মদুনাঘাট, মাছুয়া ঘোনা, শাহ মাদারী এলাকায় হ্যাচারি কমপ্লেক্স স্থাপন করা হয়েছিল।
রাউজানের মোবারকখীল হ্যাচারি কমপ্লেক্সসহ হাটহাজারী উপজেলার তিনটি হ্যাচারি সচল রয়েছে। তবে রাউজানের কাগতিয়া ও পশ্চিম গহিরা এলাকার দুটি হ্যাচারি কমপ্লেক্স পরিত্যক্ত হয়ে পড়েছে।
প্রবীণ ডিম সংগ্রহকারী কামাল সওদাগর বলেন, নদীতে মাছের আনাগোনা বেড়েছে। তবে প্রশাসন ও মৎস্য বিভাগের নজরদারি কম থাকায় দুষ্কৃতকারীরা জাল ও বড়শি দিয়ে হালদায় মা মাছ শিকার করছেন। একটি মা-মাছ থেকে লাখ লাখ মাছ উৎপাদন হয়। প্রজনন মৌসুমে মাছ শিকার রোধে প্রশাসন ও মৎস্য বিভাগের তৎপরতা আরও বাড়ানো জরুরি।
রাউজান উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা পীযূষ প্রভাকর বলেন, হালদায় ডিম সংগ্রহকারীরা প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সচল হ্যাচারি প্রস্তুত রাখা হয়েছে। নদীপাড়ের ডিম সংগ্রহকারীরা বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করছেন। বজ্রপাতসহ মুশলধারে বৃষ্টি হলে, এতে পাহাড়ি ঢল সৃষ্টি হলে ডিম ছাড়বে মা মাছ। তখন ডিম সংগ্রহ উৎসব শুরু হবে।
হালদা গবেষক ও চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজের জীব-বিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রভাষক ড. মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, প্রজননের মৌসুম শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে একটি জো চলে গেছে। আগামী মাসের শুরুর জো'তে বজ্রপাতসহ বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢল সৃষ্টি এবং পানির পরিবেশ অনুকূল থাকলে থাকলে ডিম ছাড়তে পারে মা মাছ।
তিনি আরও বলেন, পানির তাপমাত্রা ২৫-২৯ ডিগ্রী সেলসিয়াস মাছের জন্য উপযুক্ত । বর্তমানে স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি। তাপমাত্রা বাড়লে পানির অক্সিজেন হ্রাস পায়, সে ক্ষেত্রে মাছে প্রভাব পড়ে। ডিম পরিপক্ব হলেও পরিবেশ অনুকূলে না থাকলে ডিম ছাড়ে না মা মাছ।
রাউজান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুস সামাদ শিকদার বলেন, হালদা নদীর মা মাছ তথা জীব-বৈচিত্র্য রক্ষায় আমাদের তৎপরতা অব্যাহত আছে। উপজেলা প্রশাসন, মৎস্য বিভাগ, নৌ-পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তদারকির ঘাটতি নেই।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড