জে রাসেল, ফরিদপুর
এই জমিডা যখন ভাইঙ্গ্যা নিয়ে যাবি তখন আমার কি অবি? আমি গরিব মানুষ, নদীতে ভাইঙ্গ্যা ২০ বছর যাবৎ ভাইস্যা আছিলাম। ২০ বছর পর আবার জমিতে আইছি। দুই সাইডেই আমার জমি। দ্যাখেন, কি সুন্দর ফসল অইছে।
এ প্রতিবেদককে দেখে আবেগাপ্লূত হয়ে কথাগুলো বলছিলেন চরাঞ্চলের জাহাঙ্গীর নামে এক কৃষক। তিনি ফরিদপুর জেলা সদরের নর্থচ্যানেল ইউনিয়নের বাসিন্দা। ৬ এপ্রিল বৃহস্পতিবার বিকেলে নর্থচ্যানেল ইউনিয়ন পরিষদ চত্বর থেকে অদূরবর্তী পদ্মা নদীর পাড়ে বিশাল কৃষি জমির মাঝে দেখা মিলে তার।
এ সময় দেখা যায়, ড্রেজার বসিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন চলছে। এ প্রতিবেদককে দেখে এগিয়ে এসে কথাগুলো বলেন তিনি। তার জমির মাঝখানে বাহারুল নামের এক ব্যক্তির জমিতে ড্রেজার বসিয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ বালু উত্তোলন করে বিক্রি করছেন ঐ এলাকার রাজ্জাক সর্দার নামে এক ব্যক্তি।
শুধু জাহাঙ্গীর হোসেন নয়। এভাবে বুক চাপড়িয়ে কেঁদে বেড়ান তার মতো অনেকেই। কিন্তু তাদের এই কান্না শুনার কেউ নেই! উল্টো ভয়ে থাকেন তারা। ঐ এলাকায় দিনের পর দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে মাটিখেকো ও বালুখেকোরা। প্রশাসনের অভিযানের পরেও থেমে নেই তাদের কর্মকাণ্ড। অবাধে ভেকু ও ড্রেজার বসিয়ে নিধন করছে মাটি ও বালু। এই মাটি ড্রাম ট্রাক আর ট্রলিতে করে যাচ্ছে বিভিন্ন ইটভাটায়।
এ দিকে কৃষক জাহাঙ্গীর হোসেনের সাথে কথা বলা শেষে তার অদূরবর্তী দেখা মিলে ভেকু মেশিন দিয়ে মাটি কাটার দৃশ্য। যার চারদিকে বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে রয়েছে ভুট্টা ক্ষেত আর ধান ক্ষেত। এ সময় ভেকু চালকের সাথে কথা হলে তিনি জানায় সুজন নামে এক ব্যক্তি মাটি কেটে ইটভাটায় নিচ্ছে। এই সুজন কাঠের ব্রিজ এলাকার এলএমএম ইটভাটার মালিক।
মুঠোফোনে তিনি জানান, তার নিজস্ব ক্রয়কৃত জমি থেকে মাটি কাটা হচ্ছে। তবে, তিনি দাবি করেন- ‘আপাতত মাটি কাটা বন্ধ রয়েছে। মঙ্গলবার (৪এপ্রিল) এসিল্যান্ড এসে ভেকুর ব্যাটারি নিয়ে গেছে।’ কিন্তু পাশেই অবস্থানরত এক বৃদ্ধ কৃষক জানান, ঐ জমি রহিম ও করিমের। ভাটাওয়ালা মাটি কিনে নিয়েছে।
এমন চিত্র দেখা যায়, নর্থচ্যানেল ইউনিয়ন পরিষদ চত্বর এলাকা, কাঠের ব্রিজ এলাকা সহ পুরো গোলডাঙ্গী এলাকার পদ্মা নদীর পাড়ে। যেন পুরো ইউনিয়ন জুড়ে মাটি কাটা ও বালু উত্তোলনের মহোৎসব চলছে। যার কারণে ঐ এলাকার পিচঢালাই ও ইটের রাস্তাগুলো মাটির নিচে ঢাকা পড়েছে। বৃষ্টি হলেই বিপাকে পড়তে হয় এই চরাঞ্চলবাসীর। শুধু তাই নয়, বর্ষাকালে ফের নদী ভাঙনের আতঙ্কে রয়েছেন তারা।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, ঐ এলাকায় মাটি বিক্রি করছে আমজাদ মোল্লা, নুরু মোল্লা, করিম মোল্লা, রহিম মোল্লা, নজমাল মাদবরের ছেলে বারেক মাদবর, ইউনুস। মাটি বিক্রির কাজে মাধ্যম হয়ে ব্যবসা করছেন নিয়াজউদ্দিনের ছেলে আহমেদ। তিনিই বিভিন্ন ভাটায় মাটি সাপ্লাই দিয়ে থাকেন।
নর্থচ্যানেল ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন বাজারের ব্যবসায়ী মোস্তফা হোসেন বলেন, আমি এখানে ব্যবসা করি, বৃষ্টি হলে বাচ্চা নিয়ে হেটে আসতে পারি না। বৃষ্টি হলে এই রাস্তার যে পরিস্থিতি হবে, আমার বাচ্চা স্কুলে যেতে পারবে না।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, রাসেল চৌধুরী এদেশের সম্রাট হয়ে গেছে নাকি? এখানে সন্ত্রাসের মতো ত্রাসের রাজত্ব করছে রাসেল। যারা মাটি বিক্রি করে তারাও আরেক গডফাদার। রাসেল চৌধুরী কিভাবে ভাটার মালিক হয়েছে? কিভাবে কোটি কোটি টাকার সম্পদ করেছে? তার বাবা ছিলেন ঘাটের কুলি।
রফিক মোল্লা নামে এক বৃদ্ধ বলেন, রাস্তার যে অবস্থা করছে, বৃষ্টি হলে চরে মালামাল নিয়ে আসা গাড়িগুলো আসতে পারবে না। পায়ে হেটেও চলতে পারবো না। আমরা প্রশাসনের কাছে বিচার চাই। দ্রুত এসব বন্ধ করা হোক।
এসব বিষয়ে ফরিদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লিটন ঢালী বলেন, অবৈধভাবে মাটি উত্তোলন ও বালু উত্তোলনকারীদের আইনের আওতায় আনা হবে এবং এসব এলাকায় শীঘ্রই অভিযান পরিচালনা করা হবে।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড