• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৭ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

চরাঞ্চলে বাঙ্গির বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাসি

  মনিরুজ্জামান, নরসিংদী

০৯ এপ্রিল ২০২৩, ১৩:২১
চরাঞ্চলে বাঙ্গির বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাসি
বাঙ্গির বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাসি (ছবি : অধিকার)

গ্রীষ্মকাল দুয়ারে কড়া নাড়ছে। গ্রীষ্মকাল আসার আগেই নরসিংদীর রায়পুরার প্রত্যন্ত চরাঞ্চলে দিগন্ত বিস্তৃত ফসলের মাঠে শোভা পাচ্ছে সারি সারি বাঙ্গি। এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় নরসিংদীর রায়পুরায় বাঙ্গির বাম্পার ফলন হয়েছে।বাঙ্গির বাম্পার ফলনে কৃষাণ-কৃষাণির মুখে ফুটে উঠেছে আনন্দের হাসি।

কম খরচে অধিক লাভজনক হওয়ায় ইতোমধ্যেই বাঙ্গি চাষে প্রসিদ্ধ হয়ে উঠছে নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার চরাঞ্চল। এ বছর উপজেলায় ৩৫ হেক্টর জমিতে বাঙ্গি চাষ হয়েছে।

চৈত্রের খরতাপে জনজীবন যখন অতিষ্ঠ, তৃষ্ণায় প্রাণ ওষ্ঠাগত ঠিক সেই সময় এক টুকরো বাঙ্গি প্রাণে এনে দেয় প্রশান্তি। মুহূর্তে শারীরিক ক্লান্তি দূর করে ফিরিয়ে আনে সতেজতা। রমজান মাসে সারাদিন রোজা থাকার পর শরীরের ক্লান্তির ছাপ মুছতে বেশিরভাগ সময় ইফতারে বাঙ্গির চাহিদা থাকে। গ্রীষ্মের ফলগুলোর মধ্যে বাঙ্গি অন্যতম।

নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার চরাঞ্চলের মাটি বেলে-দোয়াশ। এ মাটি বাঙ্গি চাষে বেশ উপযোগী হওয়ায় এখানের বাঙ্গি আকারে বড়, দেখতে সুন্দর ও সুস্বাদু হয়। সাইজ এবং স্বাদে অনন্য হওয়ার কারণে নরসিংদীর বাঙ্গি রাজধানীসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলায় ব্যাপক সুনাম কুড়িয়েছে। অল্প শ্রম ও অল্প খরচে অধিক লাভবান হওয়ায় প্রতি বছরই চরাঞ্চলে বাড়ছে বাঙ্গির চাষ। ফলে বাঙ্গি চাষে প্রসিদ্ধ হয়ে উঠছে রায়পুরার চরাঞ্চল। পাশাপাশি এ অঞ্চলে সৃষ্টি হচ্ছে মৌসুমি কর্মসংস্থানের।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার চারটি চর ইউনিয়নে বাঙ্গি চাষাবাদ হয়। ইউনিয়নগুলো হল- বাঁশগাড়ি, শ্রীনগর, চরমধূয়া ও মির্জাচর। তবে বাঁশগাড়ি ইউনিয়নেই সবচেয়ে বেশি বাঙ্গির আবাদ হয়। চলতি বাঙ্গি মৌসুমে রায়পুরার চরাঞ্চলে মোট ৩৫ হেক্টর জমিতে বাঙ্গির চাষ করা হয়েছে।

বাঁশগাড়ি ইউনিয়নের মধ্যনগর ও চান্দেরকান্দি গ্রামের কৃষকরা তাদের জমিতে বাণিজ্যিকভাবে বাঙ্গি চাষ করছে। শুধু মধ্যনগর বা চান্দেরকান্দি নয় বর্তমানে আশপাশের বেশ কয়েকটি চরে বাঙ্গির আবাদ হচ্ছে। এই সকল চরের উৎপাদিত বাঙ্গির আকার বড় ও রং উজ্জ্বল হয়।

রায়পুরা চরের দোআঁশ মাটিতে দুই জাতের বাঙ্গির চাষ হয়। বেলে ও এঁদেল। চলতি বাঙ্গি মৌসুমে রায়পুরার চরাঞ্চলে অপেক্ষাকৃত বেশি আবাদ হয়েছে বেলে বাঙ্গি। এ জাতের বাঙ্গির খোসা পাতলা, শাঁস নরম ও মিষ্টি কিছুটা কম। এঁদেল বাঙ্গি শাঁস শক্ত তবে বেশ মিষ্টি। এ ছাড়াও বিস্তীর্ণ এ চরে বাঙ্গির পাশাপাশি মরিচ ও মিষ্টি কুমড়াও প্রচুর চাষ হয়।

জমি থেকে কৃষাণীরা কাঁচা ও পাকা বাঙ্গি তোলে জমিতে সারিবদ্ধ করে রাখেন। সেখান থেকে নরসিংদী, কিশোরগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পাইকাররা বাঙ্গি কিনে রাজধানীসহ জেলা ও উপজেলা সদরের বাজারে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে বাঙ্গি বিক্রি করেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মেঘনা নদীর তীর ঘেঁষে বাঁশগাড়ি ও শ্রীনগর ইউনিয়নের মধ্যবর্তী স্থানে বিশাল চর। বিস্তীর্ণ চর জুড়ে যেদিকেই চোখ যায় সেদিকেই কেবল দিগন্ত জোড়া সবুজ-হলুদের মিশ্রণে ফসলের মাঠ। বিস্তীর্ণ চরের ধান ও মসলা জাতীয় ফসলের পাশাপাশি বাঙ্গি চাষ করা হয়েছে। মাটির উপর ছড়িয়ে রয়েছে বাঙ্গিগাছের সবুজ লতা। লতার ফাঁকে ফাঁকে কাঁচা-পাকা বাঙ্গি শোভা পাচ্ছে। জমি থেকেই বাঙ্গি কিনতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পাইকারি ক্রেতারা কৃষকদের সঙ্গে দরদাম করছেন। দুই পক্ষের দর কষাকষিতে চলছে বেচাকেনা।

বাঙ্গি চাষি মামুন মিয়া বলেন, বাঙ্গি চাষ করতে তেমন খরচ লাগে না। রসুন ও বাঙ্গি দুই ফসল একবারে করি। রসুনের জন্য সার দেওয়ায় বাঙ্গির জন্য আলাদা করে সার লাগেনা। বীজ ও ঔষধেই যা খরচ। এ বছর দুই কানি জমিতে ৯৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আশা করছি সব মিলে আড়াই লাখ টাকা বেচতে পারমু।

কৃষক ইসমাইল হোসেন বলেন, আমি এ বছর আড়াই বিঘা জমিতে বাঙ্গির চাষ করছি। সব মিলিয়ে খরচ হয়েছে প্রায় এক লাখ ২০ হাজার টাকা। এ বছর মোটামুটি বাঙ্গির ফলন ভালো। আমি এ পর্যন্ত লাখ দেড়েক টাকার বাঙ্গি বিক্রি করেছি আশা করছি আরও দেড় লাখ টাকা উপরে বিক্রি করতে পারবো।

চরে পাইকারি বাঙ্গি বিক্রি হয় শতক হিসেবে। আকার ভেদে প্রতি একশ বাঙ্গি ৬ হাজার থেকে ৮ হাজার টাকায় পাইকারি বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ প্রতিটি বাঙ্গি ৬০ থেকে ৮০ টাকা দরে বিক্রি করছেন কৃষকরা।

এ অঞ্চলে বাঙ্গি চাষ শুধু কৃষকদেরই সমৃদ্ধি আনেনি, সৃষ্টি করেছে মৌসুমি কর্মসংস্থানেরও। বিশাল চরের বাঙ্গির জমি থেকে নৌকা ঘাটের দূরত্ব প্রায় দেড় কিলোমিটার। অপর দিকে টানের দূরত্বও এক থেকে দেড় কিলোমিটার। মৌসুমি শ্রমিকরা জমি থেকে বাঙ্গি ঝুড়িতে তুলে দীর্ঘ পথ পায়ে হেটে নৌকা কিংবা ভ্যানে ভর্তি করে। এতে পুরো চরে চোখে পড়ে কৃষক ও শ্রমিকের ব্যাপক কর্মচঞ্চলতা। জমি থেকে প্রতিটি বাঙ্গি পাইকারের গাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দিয়ে একজন শ্রমিক পান সাত টাকা।

শ্রমিকদের সরদার আক্কাস জানান, এই কাজে তিনিসহ ২২ জন শ্রমিক কাজ করেন। দিনে একজন শ্রমিক আয় করেন ৭০০ টাকা। বছরের দেড় মাস বাঙ্গি বহনের কাজ করে থাকেন তারা।

এ সময় জমি থেকে বাঙ্গি কিনতে দেখা গেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর থেকে আসা হোসেন আলী, নরসিংদীর মাধবদী থেকে আসা পাইকারি ফল ব্যবসায়ী আব্দুল ছাত্তার, জয়নাল আবেদীন ও রায়পুরা থেকে রফিকুল ইসলাম। তারা জানায়, মধ্যনগর ও চান্দেরকান্দি এলাকার বাঙ্গি আকারে বড়, দেখতে সুন্দর ও খেতে সুস্বাদু।

রায়পুরা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, রায়পুরার চরাঞ্চলে বাঙ্গি চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। বাঙ্গি চাষ সম্প্রসারণে আমরা সার্বক্ষণিক মাঠ পরিদর্শনসহ কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। বর্তমানে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত বীজ কৃষকরা ব্যবহার করে। কৃষি বিভাগ থেকে বাঙ্গি চাষে কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও ভাল বীজ সরবরাহের পরিকল্পনা রয়েছে।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড