• রোববার, ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩০ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা ছাড়াই চলছে পদ্মায় বালু উত্তোলনের মহোৎসব

  রাকিব হাসনাত, পাবনা

০৩ এপ্রিল ২০২৩, ১৫:০৫
নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা ছাড়াই চলছে পদ্মায় বালু উত্তোলনের মহোৎসব
বালু উত্তোলন করা হচ্ছে (ছবি : অধিকার)

পাবনার সুজানগর উপজেলার হাসামপুরে পদ্মা নদী থেকে বালু উত্তোলনের মহোৎসব চলছে। এতে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) অনুমতির কথা বলা হলেও মানা হচ্ছে না কোনো নিয়ম-নীতি। এছাড়াও বালু উত্তোলনকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনাও ঘটেছে। ফলে আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন নদীপাড়ের বাসিন্দা ও কৃষকরা।

কৃষকদের দাবি- গত বর্ষা মৌসুমে ড্রেজিং দিয়ে তাদের জমির ওপর রাখা হয় বালু। সম্প্রতি এই বালু মেসার্স সামি এন্টার প্রাইজের নামে বিআইডব্লিউটিএ’র অনুমতি নিয়ে বিক্রি করছেন এস এম শফিকুল ইসলাম। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের টাকা দেয়ার কথা বলা হলেও পরে কৃষকদের কোনো টাকা দেয়া হয়নি। উল্টো হুমকি দেয়ার অভিযোগ উঠেছে।

জানা গেছে, মোংলা হতে চাঁদপুর-মাওয়া-গোয়ালন্দ হয়ে পাবনার পাকশি পর্যন্ত নৌ-রুটের নাব্যতা উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় সুজানগর উপজেলার খলিলপুরের হাসামপুর ৫নং সেগমেন্টের ড্রেজিংকৃত বালু উত্তোলনের অনুমোদন দেয়া হয়। এতে শর্তজুড়ে দেয়া হয় ১২টি। গত ১ মার্চ থেকে শুরু হয়েছে বালু উত্তোলন। কিন্তু শর্তের কোনটিই মানা হচ্ছে না।

শর্তানুযায়ী- বিআইডব্লিউটিএ’র একজন উপ-সহকারী প্রকৌশলী অথবা কারিগরি সহকারী সেখানে উপস্থিত থেকে বালু উত্তোলনের বিষয়টি তদারকি করবেন এবং বালুর পরিমাণ ও গাড়ির হিসাব-নিকাশ রেজিস্টার বইতে সংরক্ষণ করবেন।

কিন্তু সেখানে উপ-সহকারী প্রকৌশলী অথবা কারিগরি সহকারী কেউ দায়িত্ব পালন করেন না। কয়েকদিন পরপর এসে রেজিস্টার বইতে বালু উত্তোলনকারীদের ইচ্ছামতো দেয়া হিসেব লিপিবদ্ধ করেন। এভাবে পরস্পর যোগসাজশে প্রতিদিন শতশত গাড়ি হিসেব-নিকাশের বাহিরেই থাকে।

বালুর গাড়িগুলো ঢাকনা দিয়ে ঢেকে নেয়ার শর্ত উল্লেখ্য থাকলেও বেশিরভাগ গাড়িই খোলা অবস্থায় যাতায়াত করছে ফলে পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। বিশাল বিশাল ড্রাম ট্রাক চলাচলের ফলে এলাকার রাস্তাগুলোর বেহাল অবস্থা। ভারি এসব গাড়ির চলাচলে হুমকি মুখে পড়েছে হাসামপুর ব্রিজও।

বালুর গাড়ির চলাচল অব্যাহত থাকলে যে কোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে পুরনো এই ব্রিজটি বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এছাড়াও সম্প্রতি সেখানে বালু উত্তোলন নিয়ে প্রভাবশালী দুই গ্রুপের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এতে কয়েকদিন বন্ধ ছিল বালু উত্তোলন। ফের শুরু হওয়ায় আবারও সংঘাতের আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। ফলে নদীপারের বাসিন্দা ও কৃষকরা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।

এ ব্যাপারে নগরবাড়ি নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ শরিফুল ইসলাম বলেন, কোনো গোলাগুলির ঘটনা ঘটেনি। হয়তো ফটকা-টোটকা ফোটানো হয়েছিল। খবর পেয়ে আমরা সেখানে গিয়েছিলাম এবং এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে এজাহার করতে বলেছিলাম। পরে তারা এজাহার করেনি। আর বালু তোলা নিয়ম-শর্ত এগুলো বিআইডব্লিউটিএ দেখার কথা।

যদিও গোলাগুলির কথা স্বীকার করেন ঠিকার মেসার্স সামি এন্টার প্রাইজের কর্ণধার এস এম শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, একটি পক্ষ টাকা চেয়েছিল কিন্তু না দেওয়ায় ভেকুর কাছে গিয়ে গুলি করেছিল। কৃষকদের সুবিধার্থেই বালু অপসারণ করা হচ্ছে। তারপরও কৃষকদের বলেছি তাদের বিষয়টি আমরা দেখবো।

তিনি আরও বলেন, এখন দেখা যাচ্ছে যে সব জমির বালু হয়তো কাটাই হবে না তাহলে তো ওই জমির টাকা আমরা দেব না। এখন সেটা আমরা মেজারমেন্ট (পরিমাপ) করতেছি, সেটা করেই আমরা কৃষকদের সঙ্গে বসবো। আর শর্ত না মানার অভিযোগ সঠিক নয়, আমরা বিআইডব্লিউটিএ’র সকল শর্ত মেনেই বালু কাটতেছি।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) ড্রেজিং বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী হাছান আহমেদ বলেন, গোলাগুলির ঘটনা আমরা জানা নেই। আর ওই জায়গায় কি পরিমাণ বালু আছে তা আমাদের সার্ভে করা আছে, বালু কাটার পরও লেভেলিং সার্ভে করলে বোঝা যাবে কি পরিমাণ বালু নিয়েছে। আর শর্তগুলো মানা হচ্ছে কি-না সে ব্যাপারে লোক পাঠানো হবে এবং তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড