সকল জেলাকে রেল যোগাযোগের আওতায় আনা হচ্ছে : রেলমন্ত্রী

রেলপথ মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন এমপি বলেছেন, বাংলাদেশ রেলওয়ে লোকসান জনিত প্রতিষ্ঠান নয়। এটা লাভ জনক প্রতিষ্ঠান। এ জন্য দেশের সকল জেলাকে রেল যোগাযোগের আওতায় আনতে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। দেশের সকল মিটার গেজ রেললাইন থেকে ব্রডগেজে উন্নীত করা হচ্ছে। আর রেল ভ্রমণে ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় রোধে ও সময় বাঁচাতে ডবল লাইন করা হচ্ছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ঈশ্বরদী জংশন স্টেশন প্লাটফর্মের কৃষ্ণচূড়া চত্বরে জংশন স্টেশনে পুননির্মিত ফুটওভার ব্রিজ ও আধুনিক পাবলিক টয়লেটের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।

রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রাপ্ত মহা ব্যবস্থাপক মুহাম্মাদ কুদরত ই খুদার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় মন্ত্রী আরও বলেন, অবিভক্ত ভারত ও পরবর্তী পাকিস্তান আমলে আমাদের দেশ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান আমলে এই অঞ্চলের রেলওয়ে বিহারী দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত হতো। এই কারণে লোকবলের বিশাল সমস্যা ছিল।

তিনি বলেছিলেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রেলওয়েকে দ্রুততার সাথে পূর্ণগঠনের পরিকল্পনা শুরু করেন। কিন্তু উন্নয়নকল্পে যাওয়ার আগেই ৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা করা হয়। এরপর বিএনপি ও জাতীয়পার্টি ক্ষমতায় আসলেও রুগ্ন ও সমস্যা জর্জরিত রেলওয়ের দিকে নজর দেয়নি।

তার মতে, এমনকি স্বাধীনতার সময় পাওয়া তিন হাজার কিলোমিটার রেললাইনকে কমিয়ে আড়াই হাজারে আনা হয়। ৭৮ হাজার শ্রমিক কর্মকর্তা ও কর্মচারী থেকে কমিয়ে ২৫ হাজারে নামিয়ে আনা হয়। তারা রেলওয়ে লোকসানজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বেসরকারি খাতে ছেড়ে দিতে উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলো। এমনকি আইএমএফ ও বিশ্ব ব্যাংকের পরামর্শে ৯১ সালে বিএনপি রেলওয়ে থেকে ১০ হাজার শ্রমিক কর্মকর্তা কর্মচারীকে ছাটাই করে।

রেলপথ মন্ত্রী বলেন, রেলওয়েতে ৪৮ হাজার লোকের অনুমোদন রয়েছে। কিন্তু বর্তমানে ২৫ হাজার জনবল রয়েছে। এইজন্য আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি হস্তক্ষেপে রেলওয়ের নিয়োগ বিধিতে সংশোধন আনা হয়েছে। ইতোমধ্যেই তিন হাজার নতুন জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আরও ২০ হাজার নতুন জনবল নিয়োগ দেওয়ার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।

রেলপথ মন্ত্রী নুরুল ইসলাম আরও বলেন, প্রত্যেকটি জেলার সঙ্গে রেল সম্প্রসারিত করতে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। দেশের সকল মিটার গেজ লাইনকে ব্রডগেজে রূপান্তরিত করা হবে। একই সঙ্গে ডবল লাইনের কাজ শুরু করা হয়েছে। কারণ দেশের জনগণ ট্রেন চাচ্ছে। তাই ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় রোধে ও সময় কমিয়ে উত্তর ঈশ্বরদী-রাজশাহী, খুলনা, রংপুর, দিনাজপুরসহ দেশের পশ্চিমাঞ্চলের রেলের সঙ্গে পূর্বাঞ্চলের রেল যোগাযোগ সহজকরণে প্রতিটি সিঙ্গেল লাইনকে ডবল লাইনে রূপান্তরিত করা হচ্ছে। এ জন্য বঙ্গবন্ধু সেতুর পাশ দিয়ে ডবল লাইনের আলাদা রেল সেতুর নির্মাণ কাজ চলছে।

মন্ত্রী বলেন, আগামী জুন মাসের মধ্যেই ঢাকা-চট্টগ্রাম করিডরের মধ্যে সম্পূর্ণরূপে ডবল লাইন করার কাজ চলছে। কাজ শেষ হলে ঈশ্বরদীসহ উত্তরাঞ্চলের মানুষ রেলযোগে সরাসরি কক্সবাজারে যেতে পারবে। একই সঙ্গে পদ্মা সেতুর উপর বাকি থাকা এক কিলোমিটার রেললাইন স্থাপন কাজ আগামী মাসে শেষ হলেই ঢাকার সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের চলাচল স্বাভাবিক হয়ে যাবে।

রেলপথ মন্ত্রী বলেন, দেশ এখনো স্বাধীনতা বিরোধী চক্রের ষড়যন্ত্র থেকে মুক্ত হতে পারেনি। তারা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে হত্যা করতে বারবার চেষ্টা চালিয়েছে। ধর্মের নামে হত্যা, জ্বালাপোড়াও, ভাঙচুর, লুটপাট করেছে। তারাই এখন শ্লোগান দেয় আমরা হবো তালেবান দেশ হবে আবগান। এদের ঐক্যবদ্ধভাবে রুখতে হবে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বাস্তবায়নে ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে কাজ করতে হবে।

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- ঈশ্বরদী আসনের সংসদ সদস্য নুরুজ্জামান বিশ্বাস, সংরক্ষিত আসনের এমপি নাদিরা ইয়াসমিন জলি, পাবনা জেলা প্রশাসক বিশ্বাস রাসেল হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জিয়াউর রহমান, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আ,স,ম আব্দুর রহিম পাকন, ঈশ্বরদী পৌরসভার মেয়র ইছাহক আলী মালিথা, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আতিয়া ফেরদৌস কাকলী ও রেলমন্ত্রীর স্ত্রী শাম্মী আক্তার সাথীসহ রেলওয়ের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।

এরপর বিকালে মন্ত্রী তার স্ত্রী শাম্মী আক্তার সাথীকে সঙ্গে নিয়ে নানা শ্বশুর আব্দুর রহিমের কবর স্থান ঈশ্বরদী কেন্দ্রীয় গোরস্তানে ফুল দিয়ে কবর জিয়ারত করেন।