আলমগীর হোসেন, লক্ষ্মীপুর
ঘনবসতির মধ্যে ফসলি জমি নষ্ট করে প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই গড়ে উঠছে একের পর এক ইটভাটা। এসব ইটভাটার কালো ধোঁয়ায় একদিকে স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে ভাটার পাশের বাসিন্দারা। অন্য দিকে ফসলি জমি হারিয়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন অনেক কৃষক।
আঁধার মানিক নতুন তেওয়ারীগঞ্জ ইটভাটার বিষাক্ত কালো ধোঁয়া ও বর্জ্যে বিপন্ন হচ্ছে লক্ষ্মীপুরের পরিবেশ। এতে ভাটার আশপাশের গ্রামীণ জনপদের জনস্বাস্থ্য মারাত্মক হুমকির মুখে। পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের মতে, ইটভাটা সৃষ্ট দূষণে বয়স্ক ও শিশুরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ইটভাটার কালো ধোঁয়ার কারণে মানুষের ফুসফুসের সমস্যা, শ্বাসকষ্ট ও ঠাণ্ডাজনিত নানা রোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
শিশুর স্বপ্ন পুড়ছে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার আধার মানিক নতুন তেওয়ারিগঞ্জ ইউনিয়নের চরমনসা গ্রামের জাহাঙ্গীর এবং মাকছুদুর রহমান মালিকানাধীন মেসার্স হাজী ব্রিকস এইচবিএম ইটভাটায়।
হাজী ব্রিকস ইটভাটায় গিয়ে দেখা যায়, ভাটা শ্রমিকের সঙ্গে শিশুরাও কাজ করছে। ওদের বয়স ৯ থেকে ১১ বছরের মধ্যে। ফসলি জমি গভীরভাবে খনন করে সেই মাটি দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে ইট। মাটি ব্যবহার করা হলেও সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগকারী সংস্থা নীরব বলে জানায় স্থানীয়রা। নির্বিচারে ফসলি জমি কাটার ফলে পরিবেশ ভারসাম্যও হারাচ্ছে।
নিহাদ ১১ বছর বয়সী শৈশবের ছয় মাস কাটবে ইটের ভাটায়। প্রতিদিন সকালে ইটের সারি ঢেকে রাখার পলিথিন সরাতে হয় তাকে। দুপুরে ওই কাঁচা ইট সে উল্টে দেয়। বিকালে আবারও সেই ইটের সারিতে পলিথিনের চাদরে ঢেকে দেয় সে। তার দৈনিক আয় ৮৩ টাকা।
নিহাদ বলেন, বছরের ৬ মাস আমার ছোট ভাই জিহাদ (১০) আমার সাথে এখানে কাজ করেন। তার সাথে আমিও কাজ করি। কাজে তেমন কষ্ট হয় না। তবে বকা শুনতে হয় অনেক। দ্রুত কাজ করতে বলে। ঠিকমতো না করলে মারধর করার হুমকি দেয়।
তিনি বলেছেন, ভাটায় আমাদের দুই ভাইকে ৬ মাসের জন্য অগ্রিম ত্রিশ হাজার টাকা দিয়েছে ভাটার মাঝি। টাকা দিয়ে বালু ক্রয় করেন বাড়ির নির্মাণের জন্য। আবুর দরজা তাদের বাড়ি। চুক্তিতে টাকা নেয়ার আমার স্কুলে যাওয়া হয় না, তাই বাধ্য হয়ে ইট শুকানোর কাজ করি।
নিহাদের মতো আরেক শিশু জিহাদ (৯) তারই ছোট ভাই ইট পরিবহনের কাজ করে। ভ্যানে ইট তোলা, ভ্যান ঠেলা ও ইট নামানোর কাজ তার। প্রতিদিন বিকালে শুকানো ইট ভ্যানে তুলে দেয় সে। পরে প্রাপ্তবয়স্কদের সঙ্গে ইটের ভ্যান পরিবহনে সহায়তা করে। গন্তব্যে পৌঁছালে ভ্যান থেকে ইট নামিয়ে দেয়। এতে তার দৈনিক আয় হয় ৮৩ টাকা।
শুধু শিশু নিহাদ বা জিহাদ নয়। লক্ষ্মীপুরে প্রায় প্রতিটি ইটের ভাটায় এমন শিশু শ্রমিকের সংখ্যা অগণিত। তাদের অভিভাবকরাও ওই ভাটায় কাজ করেন।
যেসব ভাটার শ্রমিকদের পরিবারে ছোট সন্তান থাকে, দালালরা তাদের ভাটায় কাজ করাতে উৎসাহিত করেন। শিশুদের দিয়ে কম টাকায় বেশি কাজ করানো যায়।
বাংলাদেশ শ্রম আইনে ১৪ বছরের কম বয়সী শিশুদের কোনো রকম কাজে নিয়োগের ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তবে ২০১১ সালে ইউনিসেফ কর্তৃক প্রকাশিত ‘চাইল্ড লেবার ফর বাংলাদেশে’ রিপোর্টে বলা হয়েছে, ১৪ বছরের নিছে বাংলাদেশের প্রায় ৪ দশমিক ৭ মিলিয়ন শিশু শ্রমিক রয়েছে। এর মধ্যে ১ দশমিক ৩ মিলিয়ন শিশুকে জোরপূর্বক কাজে নিযুক্ত করা হয়েছে।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড