• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩২ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

উচ্চমূল্য দিয়েও মিলছে না জ্বালানি, ভাটা পড়েছে ইট উৎপাদনে

  মো. রেজোয়ান ইসলাম, নীলফামারী

১৫ ডিসেম্বর ২০২২, ১৫:৫০
উচ্চমূল্য দিয়েও মিলছে না জ্বালানি, ভাটা পড়েছে ইট উৎপাদনে
ইট ভাটা (ছবি : অধিকার)

কয়লার সংকট ও দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় চলতি মৌসুমে ইট উৎপাদন ব্যাহতের শঙ্কা দেখা দিয়েছে নীলফামারীতে। এখনো পুরো দমে উৎপাদন শুরু করতে না পারায় বিপাকে ইট ভাটা মালিকরা। এলসি (ঋণপত্র) জটিলতায় আমদানি না হওয়ায় বেড়েছে কয়লার দাম।প্রকারভেদে দাম বেড়েছে প্রতি হাজার ইটে ১৫০০ থেকে ৪০০০ টাকা পর্যন্ত। যার খেসারত দিচ্ছেন ক্রেতা সাধারণ।

ভাটা মালিকরা জানান, জ্বালানি সংকট কয়লার অভাব ও আড়াইগুণ উচ্চমূল্য দিয়ে কয়লা মিলছে না। প্রতিবছর ভারত থেকে কম দরে কয়লা এনে ইট পোড়ানো হতো। চলতি মৌসুমে সবকিছু উলোট-পালোট হয়ে গেছে। ভারত পর্যাপ্ত কয়লা সরবরাহ করছে না এবার। এতে দক্ষিণ আফ্রিকা, ইন্দোনেশিয়া থেকে কয়লা আমদানি করতে হচ্ছে। যা গতবারের তুলনায় আড়াইগুণ বেশি।

গতবছর ১ টন কয়লা কেনা পড়তো নয় হাজার টাকা। কিন্তু চলতি মৌসুমে ইট পুড়ানোর কাজে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত কয়লা আমদানিতে সংকটের সৃষ্টি হওয়ায় স্থানীয় বাজারে প্রতি টন কয়লার দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০ হাজার থেকে ২১ হাজার টাকায়। এর কারণ ভারত থেকে কয়লা আমদানি প্রক্রিয়া ও কয়লা সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। পার্বতীপুর কয়লাখনি থেকে ইটভাটা প্রতি ১০০ টন করে কয়লা দেওয়া হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় কিছুই না। প্রতিটি ভাটায় ৫০০ থেকে ৭০০ টন কয়লা দরকার প্রতি মৌসুমে।

গত মৌসুমে উন্নতমানের ইট প্রতি হাজার বিক্রি হয়েছে ৮৫০০-৯০০০ টাকায়। বর্তমান মৌসুমে একই পরিমাণ ইট বিক্রি হচ্ছে ১২ হাজার টাকায়। একই পরিমাণ দ্বিতীয় সারির ইটের দাম ৭ হাজার ৫০০ টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৫০০ টাকায়। নিম্নমানের ইটের (তিন নম্বর) দামও বেড়ে গেছে। এই ইট গতবার ৬ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হলেও এবার দাম বেড়ে একই পরিমাণ ইটের দাম হয়েছে ৮ হাজার ৫০০ টাকা।

সূত্র মতে, নীলফামারীতে ছোট বড় মিলে ভাটা আছে প্রায় ৬৪টি। যার সবকটির ইট উৎপাদন নির্ভর করে কয়লার ওপর। ইট পোড়ানোর মৌসুম অনেক আগেই শুরু হলেও কয়লা সংকটে এখনো বেশির ভাগ ভাটায় জ্বলেনি আগুন। একদিকে কয়লার দাম বেড়েছে, অন্যদিকে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় পরিবহন খরচ বেড়েছে দ্বিগুণ। বিভিন্ন বিধিনিষেধ চড়াই উৎরাই, ঝুট-ঝামেলা মোকাবিলা করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে আসলেও এবার তারা ধরাশায়ী বলে জানিয়েছেন অনেক ভাটা মালিক।

এছাড়াও প্রতিটি ভাটায় কাজ করে পরিবার পরিজনকে নিয়ে জীবন-যাপন করে প্রায় ২ শতাধিক শ্রমিক। ৬৪ ভাটায় এবার কাজ করার কথা ১২ হাজারেরও বেশি শ্রমিক। তবে কয়লা সংকট ও উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির কারণে প্রতিটি ভাটায় কাজ করছে ১০০ থেকে ১২০ জন শ্রমিক যা অন্যান্য বছরের তুলনায় অর্ধেক।

জলঢাকা খুটামারা এম এইচ ব্রিকসের স্বত্বাধিকারী মাহমুদার হোসেন দৈনিক অধিকারকে বলেন, নানা বিধিনিষেধ চড়াই উৎরাই, ঝুট-ঝামেলা মোকাবেলা করে ভাটা চালাচ্ছি আমরা। এদিকে টাকার দেওয়ার অনেকদিন পর এবছর কয়লা পেয়েছি। আগে একটন কয়লা কিনতাম নয় হাজার টাকায় তা এখন ২০ হাজার টাকার ওপরে। এছাড়াও বাজারের সব কিছুর দাম বাড়ায় মজুরি না বাড়ালে শ্রমিক পাওয়া যায় না। সব মিলে উৎপাদন খরচ বাড়ায় বেড়েছে ইটের দাম। আর চাহিদার তুলনায় কয়লা পাচ্ছি না আমরা। জানি না ভবিষ্যৎ কী হবে।

দুহুলী এন বি এল ভাটার স্বত্বাধিকারী আব্দুল হাই দৈনিক অধিকারকে বলেন, কয়লা আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান বলছে ডলার সংকটের কারণে তারা কয়লা আমদানি করতে পারছে না। এছাড়া এদিকে পরিবহন খরচও বেড়েছে। গত মৌসুম থেকে এবার কয়লার দাম বেড়েছে দ্বিগুণ। এমন অবস্থায় নতুন ইটের দাম বাড়ানো ছাড়া উপায়ও দেখছি না আমরা, আমাদেরও তো চলতে হবে। দামের প্রভাব ক্রেতাদের ওপর একটু তো পড়বেই। একই সঙ্গে উন্নয়ন অবকাঠামো নির্মাণে ব্যাঘাত ঘটবে। সরকারের কাছে অনুরোধ দ্রুত যেন এ কয়লা সংকট দূর করেন।

কয়লা ব্যবসায়ী মেসার্স নুর ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী আবুল কাশেম দৈনিক অধিকারকে বলেন, আসলে আমদানিকারকরা বলছে যে এলসি না হওয়ায় কয়লা আনা সম্ভব না। দাম বাড়ার মূল কারণ আসলে ওটাই। এখন এখানে আমাদের কিছু করার নাই। আমরা শুধু সাপ্লায়ার।আমদানিকারকদের থেকে এনে শুধু বিক্রি করি আমরা। এটার ভুক্তভোগী আমরাও।

এ দিকে বাড়ির অর্ধেক কাজ শেষ করেছেন নীলফামারী শহরের নীল প্রতিভা পাড়ার বাসিন্দা বুলবুল আহম্মেদ। বাকি কাজের জন্য ভাটায় গিয়েছিলেন ইট কিনতে। কিন্তু দাম শুনে হতাশ হয়ে বাড়ি ফেরেন বুলবুল। তিনি বলেন, কয়েকমাস আগে বাড়ির কাজের জন্য ইট কিনেছিলাম তখন দাম অনেক কম ছিল। এখন ইট কিনতে গিয়ে শুনি দাম বেশি। আট হাজারের ইট এখন ১২ হাজার টাকা। বাড়ির কাজ যখন শুরু করি তখন ভেবেছিলাম যে আস্তে আস্তে কাজ শেষ করবো। কে জানে ইটের দাম বাড়বে। এদিকে সিমেন্টের দাম বেশি। সব কিছুর দাম বাড়লে আমরা সাধারণ মানুষ যাব কোথায়? এখন বাকি কাজ কবে শেষ করতে পারবো জানি না।

স্থানীয় বাসিন্দা হাবিবা খাতুন দৈনিক অধিকারকে জানান, সবার মতো আমারও স্বপ্ন পাকা বাড়িতে থাকার। বাড়ির কাজে হাত দিতে চাচ্ছি কিন্তু দিনদিন সব কিছুর যে দাম বাড়ছে কিভাবে কি করবো। একটা কোনো কিছুর দাম বাড়লে সব কিছুর দাম বেড়ে যায়।

নীলফামারী ইট ভাটা মালিক সমিতির সভাপতি দেওয়ান সেলিম দৈনিক অধিকারকে বলেন, অচিরেই সরকার যদি কয়লার উচ্চমূল্য ও সংকটের বিষয়ে জরুরি ব্যবস্থা না নেয় তাহলে এ বছর ইট উৎপাদন ব্যাহত হবে। এমন চলতে থাকলে সিংহভাগ ভাটা বন্ধ হয়েও যেতে পারে। আসলে এ অবস্থায় আমরা সম্পূর্ণ বিপাকে পড়েছি। মাটিকাটা শ্রমিকসহ সব ধরনের খরচ বাড়ছে। কয়লা আগে নয় হাজার থেকে ২২ হাজার পর্যন্ত কিনেছি এখন ৩১ হাজার টাকা। এখন এলসি না সিন্ডিকেট এটা আমরা বলতে পারছি না।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড