মাহবুবুর রহমান রানা, সাটুরিয়া (মানিকগঞ্জ)
মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ায় চুরি, ছিনতাই, হত্যা, হত্যার প্ররোচনা ও অপহরণের ঘটনা দিনকে-দিন বেড়েই চলেছে। গত ৫ মাসে প্রায় অর্ধশতাধিক কৃষকের গোয়ালের গরু চুরি হয়েছে। চুরি যাওয়া গরুগুলোর আনুমানিক মূল্য প্রায় কোটি টাকা।
গত শুক্রবার রাতে হরগজ গ্রামের আলামিনের বাড়িতে একদল চোর ঘরে ঢুকে গলায় ছুড়ি ধরে জিম্মি করে সাড়ে তিন ভরি স্বর্ণ, পাঁচ ভরি রুপা ও নগদ এক লাখ সাত হাজার টাকা খুয়া গেছে।
একই রাতে সাটুরিয়ার পাড়াগ্রামের ভূষণের বাড়িতে কীটনাশক স্প্রে করে ঘরের ভেতর ঘুমিয়ে থাকা সবাইকে অচেতন করে দুই ভরি স্বর্ণ ও নগদ দুই লাখ টাকা লুট করে নেয়।
গত এক সপ্তাহ আগে বালিয়াটি বাজারের ব্যবসায়ী অনিল চন্দ্র সাহা রাত ৮টার সময় দোকান বন্ধ করে বাড়ি যাওয়ার পথে বাজারের একটি টিউবওয়েলে হাত মুখ ধূতে যান। ছিনতাইকারীরা তাকে পেছন থেকে ধাক্কা দিয়ে দুটি নগদ ও বিকাশের মোবাইলে টাকাসহ প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক টাকার মালপত্র নিয়ে যায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাটুরিয়া উপজেলার গরুর খামারি ও কৃষক ভূষণ আলী জানান, রাতের বেলায় তারা ঘরের ভেতর না ঘুমিয়ে গরুর গোয়াল ঘরে ঘুমিয়ে থাকেন এবং রাত জেগে গরু পাহাড়া দেয় চুরি যাওয়ার ভয়ে।
সাটুরিয়া থানা সূত্রে জানা গেছে, গত আগস্ট থেকে নভেম্বর ৭ তারিখ পর্যন্ত মাদক মামলা হয়েছে ১৫টি, চুরি মামলা হয়েছে ছয়টি,হত্যা মামলা দুটি ও প্ররোচনা মামলা দুটি এবং অপহরণ মামলা পাঁচটি। কিন্তু উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অবাধে বিক্রি হচ্ছে মাদক মাদকসেবীদের শনাক্ত করতে না পারায় পথে ঘাটে ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়ে গেছে।
এ দিকে হত্যা মামলার কোনো কোনো কিনারা করতে না পারায় পুলিশের প্রতি ক্ষোভ জানিয়েছে ভুক্তভোগীরা। গত ৫ মাসে অর্ধশতাধিক কৃষকের গরু চরি হয়েছে। যার আনুমানিক মূল্য প্রায় কোটি টাকা।
অপর দিকে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে অভিনব কায়দায় টিউবওয়েলের পানির সাথে নেশাদ্রব্য মিশিয়ে মানুষকে অচেতন করে সর্বস্ব লুটে নিচ্ছে চোরেরা। অন্য দিকে ব্যাটারি চালিত অটোবাইক, হ্যালোবাইক ও রিক্সা ভ্যান ছিনতাই হচ্ছে। উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজারে দিনদুপুরে চুরি হচ্ছে দোকানের মালপত্র ও ক্যাশ ভেঙ্গে নিয়ে যাচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা।
এসব ঘটনা উপজেলা মাসিক আইন শৃঙ্খলা সভায় ইউপি চেয়ারম্যানরা বিষয়টি উপস্থাপন করলেও আইন শৃঙ্খলার অবনতি নিয়ে পুলিশের কোনো মাথা ব্যথা নেই।
দিঘলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান শফিউল আলম জুয়েল বলেন, তার ইউনিয়ন থেকে ২০ থেকে ২৫ টি গরু চুরি হয়েছে। যাদের গরু চুরি হয়েছে তারা নিতান্তই হতদরিদ্র ও কৃষক। খোয়া যাওয়া একটি গরুও উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ।
বালিয়াটি ইউপি চেয়ারম্যান মো. মীর সোহেল আহম্মেদ চৌধুরী বলেন, তার ইউনিয়ন থেকে আটটি গরু চুরি হয়েছে। এক রাতে চার বাড়িতে চেতনা-নাশক স্প্রে করে কয়েক লক্ষাধিক টাকার মালপত্র চুরি হয়। বিষয়টি আইন শৃঙ্খলা সভায় তুললেও কোনো লাভ হয়নি।
বরাইদ ইউপি চেয়ারম্যান গাজী আব্দুল হাই বলেন, তার ইউনিয়নের ধলেশ্বরী নদী দুভাগে বিভক্ত হওয়ায় রাতের বেলায় ট্রলার নিয়ে পাঁচটি গরু চুরি ও মানুষের বাড়িতে চুরি করে সর্বস্ব লুট করে নেয় চোরেরা। কৃষকরা এখন ঘরে না শুয়ে গরুর গোয়াল ঘরে রাত জেগে পাহাড়া দেয়।
সাটুরিয়া সদর ইউপি চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেন পিন্টু বলেন, কৃষকের গরু দিন দুপুরে চুরি ছিনতাই তা ভাবিয়ে তুলেছে। মাদক নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে সামনের পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে।
সাটুরিয়া থানার ওসি সুকুমার বিশ্বাস বলেন, টিন কেটে ঘরে চুরি ও চেতনা-নাশক স্প্রে করে মানুষকে অচেতন করে মালপত্র লুট করে নেওয়া বিষয়টি ভাবিয়ে তুলেছে। শীত পড়ায় চোরের উপদ্রব একটু বেড়ে গেছে। অচিরেই এ টিমকে আমরা ধরতে সক্ষম হবে বলে তিনি জানান।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড