মো. শাকিল শেখ, আশুলিয়া (ঢাকা)
ঢাকার আশুলিয়ায় শীতের হালকা কুয়াশায় বাঁশের টুকরি আর কোদাল হাতে মানুষগুলো ভিড় জমাচ্ছেন ‘শ্রম বিক্রির হাটে'। প্রাচীনকালে ও মধ্যযুগে সমাজে মানুষ কেনাবেচার হাট বসত। সেই দাসপ্রথা বিলুপ্ত হয়েছে কবেই।
কিন্তু একবিংশ শতাব্দীর তথ্যপ্রযুক্তির যুগেও ক্ষুধা আর দারিদ্র্যের নির্মম আঘাতে নিম্ন আয়ের মানুষগুলো দুইবেলা রুটিরুজির জন্য আজও নিজেকে বেচে দেন শ্রম বিক্রির হাটে।
বুধবার (১৬ নভেম্বর) সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, আশুলিয়ার নবীনগর জাতীয় স্মৃতিসৌধের সামনে প্রতিদিন সকালে বসে মানুষ ক্রয়-বিক্রয়ের হাট। রাজমিস্ত্রি, কাঠমিস্ত্রি, রঙ মিস্ত্রি, স্যানিটারি মিস্ত্রি, দিনমজুরসহ নানা পেশার শ্রমজীবী মানুষে সরগরম হয়ে ওঠে এই বাজার। শ্রমের এই বাজারে শ্রমিক কিনতে আসেন মালিকরা। অনেক শ্রমজীবী বিক্রি হলেও অনেকে থেকে যান অবিক্রীত। রাজবাড়ীর পদ্মা নদের ভাঙনে ভেঙে যাওয়া ঘর, আশুলিয়ার জামগড়া এলাকায় ভাড়া বাড়িতে এসে আবার গড়েছেন হোসেন। সংসার চালানোর জন্য নিজেকে প্রতিদিন বিক্রি করতে আসেন মানুষের হাটে, কোনো কোনো দিন থেকে যান অবিক্রীত।
দিনমজুর হোসেন এর সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, তিন বছর আগে পদ্মা নদে বাড়ি ভেঙে যাওয়ায় ঢাকায় চলে আসি। যখন যে কাজ পাই সেই কাজ করি। সন্তানরা নিজেরাই চলতে পারে না, আমাদের কী দেখবে? তাই প্রতিদিন কামলা দিতে হয়। কামলার হাটে দাম একটু বেশি পাই। কেউ কিনলে, কোনো দিন ৪০০ আবার কোনো দিন ৫০০ টাকা থাকে। বেচা না হলে সেদিন রিকশা চালাই।
আশুলিয়ার ডেন্ডাবর এলাকার এক বাড়ির মালিক ইমরান হোসেন মানুষের হাটে এসেছেন রঙ মিস্ত্রি কিনতে। তিনি বলেন, বাড়ির সামনের দেয়ালে রঙ করতে হবে, তাই এই বাজারে রঙ মিস্ত্রি কিনতে এসেছি। শ্রমিকের দাম একটু বেশি হলেও এখানে সহজে কাজের লোক পাওয়া যায়। একজন রঙ মিস্ত্রি নিয়েছি ৫০০ টাকায় আর দু’জন সহকারী মিস্ত্রি নিয়েছি ৮০০ টাকায়।
মানুষের এই হাটে বেচাকেনা চলে ভোর থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত। দামদর ঠিক হয়ে গেলে শ্রমজীবী মানুষগুলো রওনা হন মালিকের গন্তব্যে। সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত ঘাম ঝরিয়ে কাজ করেন কঠোর পরিশ্রমী মানুষগুলো।
আশুলিয়ার কাঠমিস্ত্রি শায়িদের জীবনও যেন জড়িয়ে আছে মানুষের হাটের সঙ্গে। চার বছর ধরে এই বাজারে বিক্রি হতে আসেন তিনি। মিস্ত্রির কাজের মজুরি কেমন জানতে চাইলে শাহাদত বলেন, বাজারে মিস্ত্রির দাম ৬০০ টাকা আর শ্রমিক ও জোগালের দাম একটু কম ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা।
বছরের পর বছর ধরে আশুলিয়ার নবীনগর জাতীয় স্মৃতিসৌধের সামনের এই মানুষের হাট বসে। এছাড়াও আশুলিয়ার বিভিন্ন জায়গায় এই মানুষের হাট বসে বলে জানান কুরগাও এলাকার এক স্থানীয় বাসিন্দা সেলিম মিয়া। নিয়মিত হাট বসলেও মানুষের হাটে নেই কোনো খাজনা, সমিতির ঝামেলা, হাট কমিটির চাঁদাবাজি। নিজের আপন গতিতেই চলে এই হাট।
শ্রমজীবী মানুষরা সেদিক দিয়ে শান্তিতে থাকলেও তাদের কাজের নিশ্চয়তা নেই। হাজারো লোকের ভিতর থেকে মাত্র কয়েকজন বিক্রি হওয়ায় বাকিদেরকে মন খারাপ করে বাসায় চলে যেতে হয়।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড