সাইদুর রহমান, রূপগঞ্জ( নারায়ণগঞ্জ)
পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে মসজিদ, মাদ্রাসা, এতিমখানাসহ মানুষের ব্যক্তিগত জমি দখল করে বসবাসকারী সন্ত্রাসী এবং ভূমিদস্যু হিসেবে পরিচিত জহির উদ্দিন ও মো: সালাহ উদ্দিনের বিরুদ্ধে স্থানীয় বাসিন্দাগন মানববন্ধন এবং বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। ৬ জুলাই বুধবার দুপুরে পূর্বাচলের ২০ নং সেক্টর এলাকায় হেলিপ্যাড চত্ত্বরে এ মানববন্ধন ও বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া স্থানীয় হাজারের অধিক প্রতিবাদকারীরা তাদের বক্তব্যে বলেন, পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের আবাসিক একালায় জমির প্লট নিয়ে জালিয়াত চক্রের মূলহোতা গোবিন্দ্রপুরের বাসিন্দা জহির উদ্দিন মুন্সি ও তার ছেলে সালাউদ্দিন দীর্ঘদিন ধরেই সক্রিয়। তারা নানা সময়ে নানা ব্যক্তিকে জমি বিক্রি প্রসঙ্গে ঠকিয়ে আসছে। কখনও জমি দেখিয়ে টাকা আত্মসাৎ আবার কখনও একই জমি একাধিক ব্যক্তির কাছে বায়না করাসহ নানারকমভাবে প্রতারণা করে যাচ্ছে। দুঃসাহসী এই প্রতারকদের বিরুদ্ধে কেউ ভয়ে মুখ খোলার সাহস পাচ্ছে না।
মসজিদ, মাদ্রাসা ও এতিমখানার জায়গা পবিত্র রাখতে বদ্ধপরিকর এলাকাবাসী। ছবি: অধিকার
জানা যায়, সালাহ উদ্দিন পূর্বাচলের সেক্টর-২০, রোড- ৪০১/বি, ০৯, ১১, ১২, ১৪ নং প্লট বিক্রির কথা বলে আলিম ও আজিজ ভাতৃদ্বয়ের সঙ্গে চুক্তিপত্র স্বাক্ষর করে। সেই মোতাবেক বিক্রয় বাবদ টাকা গ্রহণ করে বায়না স্ট্যাম্প দলিল মূলে সালাউদ্দিন রাজউকের নকশা অনুমোদনসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে প্লটের দখল বুঝিয়ে দেয়। জমি রেজিস্ট্রি করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে জমি বাবদ গত ১২/৩/২০২০ ইং থেকে ২৬/০১/২০২১ ইং তারিখে ব্যাংক চেক, ব্যাংক ডিপোজিট, পে অর্ডারের মাধ্যমে এবং নগদ আব্দুল আজিজ ও তার ভাইয়ের নিকট থেকে মোট ৭৭,৫৮৯,৮২০ (সাত কোটি পঁচাত্তর লাখ ঊননব্বই হাজার আটশত কুড়ি টাকা গ্রহণ করেছে এবং রেজিস্ট্রি করার আগেই উক্ত প্লটগুলোর জমির পজিশন/দখল বুঝিয়ে দেয়। এছাড়া উক্ত প্লটগুলোতে আমাদের ভবন নির্মাণ বাবদ বিভিন্ন সময়ে মোট ১৭০০০০০০/ এক কোটি সত্তর লাখ টাকা প্রদান করা হয়েছে। সর্বমোট ৯৪৫৮৯৮২০/= টাকা (ভবন নির্মাণ সহ ) ব্যয় করার পর সালাউদ্দিন জমি রেজিস্ট্রি করে দেওয়ার পরিবর্তে তাদের ওই জমি থেকে উৎখাত করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে।
সালাহউদ্দিন প্রতারণা করার উদ্দেশ্য জমি বিক্রির চুক্তিপত্রে নিজের শ্বাশুরির ভুল এনআইডি কার্ড নম্বর লিখেছে। শুধু তাই নয় এই প্রতারক জমি বিক্রি বাবদ টাকা গ্রহণের পর আত্মসাৎ করার উদ্দেশ্যে এতদিন বিদেশে আত্বগোপনে ছিল। কিন্তু বর্তমানে দেশে এসে আব্দুল আজিজ ও তার ভাই আব্দুল আলিমকে বিভিন্নভাবে হুমকি দিচ্ছে যেন তারা উক্ত জায়গার দখল ছেড়ে দেয়।
এছাড়াও সালাউদ্দিন পূর্বাচল প্রকল্পের তার মালিকানা ১০২ শতাংশ জমি নগদ ৩৭০০০০০০/= তিন কোটি সত্তর লাখ টাকা গ্রহণ করে সাবকাবলা দলিল রেজিস্ট্রেশন করে দিয়েছে। কিন্তু এর আগে উক্ত জমি তরিকুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তির নিকট ১০ কোটি টাকা মূল্যের রেজিস্ট্রি বায়না নিয়েছে। প্রতারণার শিকার তরিকুল সাহেব এই বিষয়ে সালাউদ্দিনের নামে প্রতারণার মামলা করেছে।
এর পূর্বে সালাউদ্দিনের ইন্ধনে কিছু দেশীয় অস্ত্রসহ ওই জমিতে প্রতিষ্ঠিত ন্যাশনাল প্রফেশনাল ইনস্টিটিউট (NPI) এর শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের পরিবহনের কাজে নিয়োজিত বাসগুলোতে ভাংচুর করেছে। নিরাপত্তা কর্মীসহ অফিস স্টাফ নির্যাতন ও প্রাননাশের হুমকি দিচ্ছে সালাহউদ্দিনের নিয়োজিত সন্ত্রাসীরা। এ বিষয়ে নিরাপত্তা চেয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ ও সাধারণ ডায়েরি করেছে ভুক্তভোগীরা।
সালাহ উদ্দিনের মতো ভূমিদস্যুদের সাথে কোনো আপস চান না এই বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। ছবি: অধিকার
সূত্র জানায়, ন্যাশনাল প্রফেশনাল ইনস্টিটিউট (এন পি আই) এর প্রতিষ্ঠাতাদের আর্থিক সহযোগিতায় তৈরি মাদ্রাসা, ইনস্টিটিউট, এতিমখানা এবং মসজিদের জায়গায় জোর করে পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করছে জহির উদ্দিন এবং সালাউদ্দিন গং এর পরিবার এবং আত্বীয় স্বজন। এ বিষয়ে দখলদারদের বিরুদ্ধে রূপগঞ্জ থানা ও নারায়ণগঞ্জ আদালতে একাধিক মামলা রয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা মনিরুল ইসলাম জানান, জহিরুদ্দিনের ছেলে সালাহ উদ্দিন দীর্ঘদিন ধরে এই এলাকায় সন্ত্রাস কায়েম করে রেখেছে। তাদের ভয়ে আমরা মুখ খুলতে পারছি না। তারা দুইজন গরিব মানুষের নামে বরাদ্দকৃত দুইটি প্লট দখল করে বাউন্ডারি দিয়ে রেখেছে। এই এলাকার সাধারণ মানুষ এর সন্ত্রাসীর হাত থেকে মুক্তি চায়।
প্রায় একই সুর শফিক মিয়ার কন্ঠেও। তিনি জানান, মসজিদ মাদরাসা পবিত্র জায়গা। এই মানুষটি আমাদের ধর্মীয় জায়গাকে নোংরা করছে। ছেলে বিয়ে করিয়ে এখানেই নতুন বউ তুলে বাসরও করাচ্ছে। মসজিদের জায়গায় বাসর হতে পারে না। আমরা প্রসাশনের কাছে বিচার চাই।
বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীরা প্রশাসন এবং সরকারের কাছে এই প্রতারক, ভূমিদস্যু মোঃ সালাউদ্দিন এবং সালাউদ্দিনের পিতা জহির উদ্দিনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছে। পিতা-পুত্রের প্রহসন থেকে মুক্তি চায় সকলে।
এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত সালাহ উদ্দিনকে কল করলেও তার নম্বর বন্ধ পাওয়া গেছে। দেখুন ভিডিয়ো:
ধর্মীয় সাইনবোর্ডের আড়ালে কোটি কোটি টাকার প্রতারণা
Posted by odhikar.tv on Wednesday, July 6, 2022
সম্পাদক: মো. তাজবীর হোসাইন
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড