শফিয়েল আলম সুমন, ময়মনসিংহে
ময়মনসিংহে তেল নিয়ে ব্যবসায়ীদের মাঝে চলছে অসততা। অধিক মুনাফার আশায় ব্যবসায়ীরা তেল মজুদ করে বিক্রি করার চেষ্টা চালাচ্ছে। অনেকে তেল মূল্য পরিবর্তন করে বিক্রি করছে। আবার অনেকে মিল থেকে তেলের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। গত সাতদিনে ময়মনসিংহ ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর সয়াবিন তেল নিয়ে অভিযানে এ চিত্র ফুটে উঠেছে। ১২ টি প্রতিষ্ঠানকে প্রায় দুই লক্ষ টাকা জরিমানা ও ৯ হাজার ২০১ লিটার মজুদ করা তেল উদ্ধার করে পূর্বের দামে বিক্রির ব্যবস্থা করে দিয়েছে।
ময়মনসিংহ ব্যবসায়ীদের এ অসততায় তেল নিয়ে গত ৭ দিনে ৫টি অভিযানে ১২ টি প্রতিষ্ঠান কে ১ লাখ ৯৯ হাজার টাকা জরিমানা এবং ৯ হাজার ২০ এক লিটার তেল মজুদ করা তেল জব্দ করা হয়।
১১ মে ত্রিশাল উপজেলায় তেলের মূল্য বেশি রাখার অপরাধে আজিজুল স্টোরকে ১৫ হাজার জরিমানা আরোপ করা হয়। বোতলের গায়ে ১৬০ লেখা থাকা সত্ত্বেও ২০০ করে তেল বিক্রয়ের বিষয়ে লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করে মেসার্স তামিম এন্টারপ্রাইজকে ২০ হাজার জরিমানা আরোপ করা হয়েছে। পরে তাতক্ষণিকভাবে ২৫% হিসেবে ৫ হাজার ভোক্তাকে প্রণোদনা হিসেবে প্রদান করা হয়। এছাড়া অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাদ্য উৎপাদনের অপরাধে রূপকথা রেস্টুরেন্টকে ৩০ হাজার এবং মূল্যতালিকা প্রদর্শন না করায় ফিরোজ স্টোরকে ৫ হাজার জরিমানা আরোপ করা হয়।
১২ মে ময়মনসিংহ ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর কর্তৃক ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার আঠারোবাড়িতে অধিক মূল্যে সয়াবিন তেল বিক্রয়ের অপরাধে মেসার্স সেলিম ওয়েল মিলকে ১০ হাজার এবং আঠারোবাড়ি ওয়েল মিলকে ২০ হাজার জরিমানা করা হয়। ২ হাজার লিটার মজুদকৃত তেল পূর্বের মূল্যে বিক্রয়ের ব্যবস্থা করা হয়।
১৩ মে সদর উপজেলার মেছুয়া বাজার ও বড় বাজারের বিভিন্ন ব্র্যান্ডের তেলের ডিলারদের গোডাউনে অভিযান পরিচালনা করা হয়। পুরনো মূল্যের তেল দোকানে লুকিয়ে রেখে অধিক মূল্যে বিক্রয় এবং মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য বিক্রয়ের অপরাধে মেসার্স নগেন্দ্র পালের দোকানকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয় এবং জব্দকৃত তেল আগ্রহী ক্রেতাদের মধ্যে পূর্বের মূল্যে বিক্রয় করা হয়।
১৪ মে ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলায় অভিযান পরিচালনা করে পুরনো মূল্যের তেল মজুদ করে নতুন মূল্যে বিক্রয় এবং মূল্যতালিকা প্রদর্শন না করার অপরাধে মামুন স্টোরকে ২০ হাজার ফরহাদ স্টোরকে ২০ হাজার এবং জহিরুল স্টোরকে ৫ হাজার জরিমানা আরোপ করা হয়েছে। ১৯৭ লিটার তেল এম আর পি রেটে আগ্রহী ক্রেতাদের মধ্যে বিক্রয় করা হয়েছে।
১৭ মে ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলায় মেসার্স খান ওয়েল মিলস এ অভিযান পরিচালনা করে ৫,৮০৪ লিটার সয়াবিন তেল মজুদ অবস্থায় পাওয়া গেছে।
তারা গত ৮ এপ্রিল প্রায় ১২০০০ লিটার তেল পূর্বের মূল্যে ক্রয় করে। ইদের সময় বাজারে বিদ্যমান সংকটকালীন সময়েও তারা অতিরিক্ত মূল্যে তেল বিক্রয় করেছে বলে স্বীকার করেছে। তাদের মূল্যতালিকাতেও বর্তমান বর্ধিত মূল্য প্রদর্শন করা হয়েছে।
উক্ত প্রতিষ্ঠানটিকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা আরোপ করা হয়েছে এবং মজুদকৃত তেল বিক্রয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া কালিবাড়ি বাজারে ৪টি প্রতিষ্ঠানকে ১৯ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
এসময় ময়মনসিংহ ভোক্তা অধিকার অধিদফতরের সহকারী পরিচালক নিশাত মেহের জেলা ক্যাব এর সাধারণ সম্পাদক জিএম রহমান ফিলিপ, উপজেলা স্যানিটারি ইন্সপেক্টর বেদেনা আক্তার অভিযানে সার্বিক সহযোগিতায় ছিলেন র্যাব ১৪ এর কোম্পানি কমান্ডার জনাব আখের মুহম্মদ জয় এবং সহকারী পরিচালক মো.আনোয়ার হোসেন এবং উপজেলা পুলিশের ১টি টিম উপস্থিত থেকে অভিযানে সার্বিক সহযোগিতা করেন।
ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক জি এম রহমান ফিলিপ এতদিন আমরা দেখেছি কোনো জিনিসের মূল্য বৃদ্ধি পেলে সংগে সংগে তা বাজারে কার্যকর হয়ে যেত, কম মূল্যে কেনা জিনিস বেড়ে যাওয়া মূল্যে বিক্রি হতো নির্বিঘ্নে। মূল্য কমলে সেটি বাজারে পাওয়া যেতো অনেক অনেক দেরিতে।
এবার ভোক্তা অধিকার সংরক্ষন অধিদফতরের অভিযানে দেখা গেল ভিন্ন চিত্র, কম দামে কিনে গোদাম জাত করে বাজারে সংকট তৈরি করে বেশি লাভে ওই পণ্য বিক্রি করা যাবে না। এটি বেআইনি, শাস্তি যোগ্য অপরাধ। এমনি অভিযানে ভোক্তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে, ন্যায্য বাজার তৈরি হবে, ক্ষতিকর সিন্ডিকেশন নিস্তেজ হবে, ভালো ব্যবসায়ীরা উৎসাহিত হবেন।
ময়মনসিংহ ভোক্তা অধিকার অধিদফতরের সহকারী পরিচালক নিশিত মেহের জানান, এ অভিযান আমরা অব্যাহত রেখেছি।
ওডি/ ওএইচ
সম্পাদক: মো: তাজবীর হোসাইন
সহযোগী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118241, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড