• বৃহস্পতিবার, ৩০ মার্চ ২০২৩, ১৬ চৈত্র ১৪২৯  |   ২৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

ডিম কম পাওয়ার হতাশা কাটতে পারে রেণুর দামে

  আবিদ মাহমুদ , রাউজান (চট্টগ্রাম)

২০ মে ২০২২, ১৪:৪৪
ডিম কম পাওয়ার হতাশা কাটতে পারে রেণুর দামে
হালদা থেকে সংগৃহীত রেণুর কদর রয়েছে সরাদেশে (ছবি: অধিকার)

দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ হালদা নদী। এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকে জুন মাস পর্যন্ত প্রজনন মৌসুমের যে কোনো পূর্ণিমা, অমাবস্যার কয়েক দিন আগে-পরে জোয়ার-ভাটার সময়ে বজ্রপাতসহ বৃষ্টিপাত এবং পাহাড়ি ঢলের স্রোতে ডিম ছাড়ে মা মাছ। এবার বিরূপ প্রকৃতিতে ২৬ এপ্রিল থেকে ৫ মে পর্যন্ত চালাকালীন জো’তে ডিম ছাড়েনি মা মাছ। গত ১৩ মে থেকে ১৮ মে পর্যন্ত পূর্ণিমার জো’তে দুদফায় নমুনা ডিম ছাড়ার পর গত সোমবার (১৬ মে) ভোর থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত জোয়ার-ভাটার সময় পূর্ণাঙ্গ ডিম ছাড়ে কার্প জাতীয় মা মাছ।

তবে বজ্রপাতসহ বৃষ্টিপাত না হওয়া আর ডিম ছাড়ার বিশেষ স্থান কুম (গভীর এলাকা) ভরাটের কারণে অপেক্ষাকৃত কম ডিম ছেড়েছে বলে দাবি ডিম সংগ্রহকারী, মৎস্য অধিদপ্তর কর্মকর্তা ও হালদা গবেষকদের। চলতি প্রজনন মৌসুমে নদীর বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে রাউজান ও হাটহাজারী উপজেলার ডিম সংগ্রহকারীরা প্রায় তিন হাজার কেজি ডিম সংগ্রহ করেন। আগামী ২৫ মে থেকে ৩১ মে পর্যন্ত আরও একটি জো আছে। ওই জো’তে বজ্রপাতসহ বৃষ্টিপাত হলে পুনরায় মা মাছ ডিম ছাড়ার সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

হালদা থেকে সংগৃহীত নিষিক্ত ডিম থেকে ফুটানো রেণুর কদর রয়েছে সরাদেশে। হালদার রেণু দ্রুত বর্ধনশীল হওয়ায় চট্টগ্রামসহ সারাদেশে প্রচুর চাহিদা থাকে। রাউজান ও হাটহাজারী অংশের ৪টি সরকারি হ্যাচারির ১৩০টি ট্যাঙ্কে আর ১৭০টি মাটির কুয়ায় ডিম ফুটানোর কাজ চলছে। এবার তুলনামূলকভাবে ডিম কম পাওয়ায় ডিম থেকে রেণু উৎপাদন কম হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডিম সংগ্রহকারীরা। রেণু অপ্রতুলতায় কম দামে রেণু বিক্রিতে আগ্রহ নেই ডিম আহরণকারীদের। বেশি দামে রেণু বিক্রি করে ডিম কম পাওয়ার হাতাশা দূর করতে চান ডিম আহরণকারীরা।

ইতোমধ্যে রেণু ক্রেতারা ভিড় করছেন হালদা পাড়ের হ্যাচারি ও মাটির কুয়ার পাশে। দর কষাকষি হলেও এখনো বিক্রি শুরু হয়নি। গত বছর প্রতিকেজি রেণু ১ লাখ ৪২ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ দেড় লাখ টাকায় বিক্রি হলেও এবার দাম বাড়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

একাধিক ক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ‘বিক্রেতারা প্রতিকেজি রেণুর দাম চাচ্ছেন ২লাখ টাকা। ক্রেতাদের আগ্রহ দেড় লাখ থেকে ১লাখ ৬০/৭০ হাজার টাকার মধ্যে কেনার। তবে ধারণা করা হচ্ছে ক্রেতাদের আগ্রহ অনুযায়ী বিক্রি হবে হালদার রেণু। শনিবার থেকে রেণু বিক্রি শুরু হবে বলে জানিয়েছেন ডিম সংগ্রহকারীরা। রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত (গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৩টা) রেণুর দাম নির্ধারণ করা হয়নি বলে জানিয়েছেন অভিজ্ঞ ডিম সংগ্রহকারী কামাল সওদাগর।

ডিম আহরণকারীদের মতে, ডিম সংগ্রহের ৪/৫দিনের মাথায় রেণুতে পরিণত হয়, ১৫ দিনের বেশি সময় পর পরিণত হয় পোনায়। তবে হালদা ডিম ছাড়ার ৪/৫দিন পর হ্যাচারী বা মাটির কুয়ায় রেণু ফোটলে এক সপ্তাহের মধ্যে রেণু বিক্রি উৎসব শুরু হয়। ৪০ কেজি ডিম থেকে ১ কেজি রেণু হয়। এক কেজি রেণু থেকে প্রায় আড়াই লাখ পোনা উৎপাদন হয়। হালদা বিশেষজ্ঞদের মতে, ৬০ কেজি ডিমে ১ কেজি রেণু উৎপাদন হয়। পরিবেশ-পরিস্থিতিতে কম-বেশি হতে পারে। তবে বর্তমানে সংগৃহীত ডিম থেকে উৎপাদিত রেণুর পরিমাণের তথ্য সংগ্রহ করা হয়। বর্তমানে তথ্য সংগ্রহ কার্যক্রম চলছে।

বিশেষজ্ঞদের হিসেব অনুযায়ী ৩হাজার ডিম থেকে রেণু উৎপাদন হবে প্রায় ৫০ কেজি। উৎপাদিত রেণু বিক্রি হতে পারে প্রায় ৭০/৮০ লাখ টাকায়।

রাউজান উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা পীযুষ প্রভাকর বলেন, রেণুর দাম আমরা নির্ধারণ করিনা, সংগ্রহকারীরাই নির্ধারণ করেন।

ডিম কম হওয়ায় দাম বাড়তে পারে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘আগামীতে আরও একটি জো আছে, ওই জো’তে মা মাছ ডিম ছাড়ার সম্ভাবনা আছে।’

এই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে হালদা গবেষক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মঞ্জুরুল কিবরিয়া বলেন, ‘বজ্রপাতসহ বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢল না থাকায় মা মাছ বেশি পরিমাণ ডিম ছাড়েনি। সব ঠিক থাকলে আগামী জো’তে ডিম ছাড়ার সম্ভাবনা আছে।

আরও পড়ুন: তরুণীর অনশনে প্রেমের জয়

রেণু বিক্রয় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এখনো রেণু বিক্রি শুরু হয়নি। আশা করছি শনি-রবিবার শুরু হবে।’

দামের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী ডিম সংগ্রহকারীরা সর্বোচ্চ দাম চাইবে, ক্রেতারা কমদামে কিনতে চাইবেন। দর কষাকষিতে ক্রেতা-বিক্রেতারাই সিদ্ধান্ত নিবেন। গত বছরের মতো থাকলে ক্রেতা-বিক্রেতা পুষাতে পারবে।’

ওডি/এমকেএইচ

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড