হুমায়ুন কবির সূর্য, কুড়িগ্রাম
‘গতবার নদী বাড়ি-ভিটা সউগ খায়া গেলো। হালের গরু, ছাগল, ভেড়া, একমাত্র সম্বল ১২ শতক জমির মধ্যে ৫ শতক বিক্রি করি খালের মধ্যে মাটি কাটি বাকি জমিত বাড়ি করনু। এবারো ভাঙবের নাগছে। কামলা দিয়া খাং। এই বাড়ি গেইলে করিম কি। মোর পকেটোত বিষ খাওয়ার মত টেকা নাই।’ এমন হতাশার কথা ব্যক্ত করলেন কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার ঘরিয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের গতিয়াসাম মন্ডলপাড়া গ্রামের মৃত শরাফত মাস্টারের ছেলে মোস্তাক আহমেদ (৫৬)। গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে তিস্তা নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় শুরু হয়েছে তীব্র নদী ভাঙন। এই তিনদিনে ভেঙেছে ৬টি বাড়ি। হুমকিতে রয়েছে আরও ৭০-৮০টি বাড়ি।
চর নাখেন্দা গ্রামের মৃত মনাই সরকারের ছেলে আপতার (৫৫) জানান, ‘চারটা জমির পর হামার বাড়ি। গত তিনদিনে ৪টা জমিই গিলি খাইল তিস্তা নদী। লিচু আর আমের বাগান দিয়া সংসার ভালই চলছিল। কিন্তু শনিবার (৯ এপ্রিল) নদী ভাঙনে ৩০টা লিচু গাছের মধ্যে ২২টা আর হাড়িভাঙ্গা ১৬টা গাছ বিলীন হয়া গেইছে। এ্যালা বাড়িটা যায় যায় করছে। হামরা এ্যালা কোটে যাই!’
ঘরিয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের গতিয়াসাম এলাকার সাবেক মেম্বার শহিদুল ইসলাম জানান, বর্ষা আসার আগেই হঠাৎ করে ভাঙন বৃদ্ধি পাওয়ায় নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে বসতবাড়ি, গাছপালাসহ আধাপাকা বোরো ধান খেত। ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে দুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি কমিউনিটি ক্লিনিক, ৮টি মসজিদ ও একটি মাদরাসাসহ শত শত বিধা আবাদি জমিন। বর্তমানে এই ইউনিয়নে গতিয়াসাম, রামহরি, কালিরহাট ও মেদনীপুর গ্রামে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে সহায়তা চেয়েও পাওয়া যায়নি। তারা বলছে, এই মুহুর্তে তাদের কাছে কোনো বাজেট নাই।
কুড়িগ্রামের ৩টি উপজেলার উপর দিয়ে বয়ে গেছে আগ্রাসী তিস্তা নদী। প্রায় ৪০ কিলোমিটারব্যাপী নদীটির ভাঙন কবলিত বাম তীরে মাত্র ৫ কিলোমিটার জায়গা পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। বাকি ৩৫ কিলোমিটার উন্মুক্ত নদীর অনেক জায়গায় চলছে এখন ভাঙন। গত তিনদিনে বৃষ্টির ফলে তিস্তা নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বিঘার পর বিঘা বোরো ধান, ফলদ ও কাঠের গাছসহ ভেঙে যাচ্ছে বিল্ডিং বাড়ি। এখন হুমকিতে রয়েছে প্রায় ৭০ থেকে ৮০টি পরিবার।
গত কয়েক বছর ধরে তিস্তার ভয়াবহ আগ্রাসনে রাজারহাটের ঘড়িয়ালডাঙ্গা ও বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের চতুরা, মন্দির, ডাংরারহাট, রামহরি, পাড়ামৌলা ও গাবুর হালান গ্রামের একাংশ নিশ্চিহ্ন করে ফেলেছে। মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাচ্ছে আরও গ্রামের পর গ্রাম। বসতভিটা ও জমি হারিয়ে মাথা গোঁজার ঠাঁই না পেয়ে বুকফাটা কান্নায় ভারী হয়ে আসছে এখানকার আকাশ-বাতাস। মেগা প্রকল্পের নানান আশ্বাসের পর নদী ভাঙনের হুমকিতে থাকা মানুষ এখন জরুরি ভিত্তিতে ভাঙন প্রতিরোধে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।
রাজারহাট উপজেলার ঘরিয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল কুদ্দুছ প্রামাণিক জানান, আমার ৭ ও ৮ নম্বর ওয়ার্ড চরম হুমকিতে রয়েছে। আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে গিয়েছি। তাদের কোনো বাজেট নেই বলে তারা জানিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ, আমাদের ভাঙন কবলিত পরিবারগুলোকে বাঁচান। নাহলে আমরা বিশাল ক্ষতিগ্রস্ত হব।
আরও পড়ুন : সীমান্তে ৭ হাজার পিস ইয়াবাসহ যুবক আটক
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, হঠাৎ বৃষ্টির ফলে তিস্তায় অরক্ষিত এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে। সমীক্ষা প্রকল্প অনুমোদন করা হলেও এখনো প্রকল্প চুড়ান্ত করা হয়নি বলে জানান এই কর্মকর্তা। জরুরি ভিত্তিতে কাজ করার সুযোগ আছে জানালেও পাউবো থেকে ভাঙন প্রতিরোধে নতুন ভাঙন কবলিত এলাকায় এখনও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ শুরু হয়নি।
ওডি/এএম
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড