মোহাম্মাদ শাহআলম মিয়া, ঝিনাইদহ
উচ্চ বেতনের চাকুরি ছেড়ে মুক্তা চাষ করে সফলতা অর্জন করেছেন ঝিনাইদহের কৃষি উদ্যোক্তা ড. নজরুল ইসলাম। ঝিনুকের বুকে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি, নানা আকৃতির গহনা, কানের দুল, লকেট, আংটি, ব্যাচ, বাটনসহ নানা অলংকারের তৈরি করছেন তিনি। একই সঙ্গে ওই পুকুরে মাছ চাষ করেও লাভবান হচ্ছেন এই ব্যক্তি।
ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার শিবনগর গ্রামের মৃত লুৎফর রহমানের ছেলে নজরুল ইসলামের সম্পর্কে জানা যায়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে ফিশারিজ বিষয়ে মাত্র তিন বছরের মধ্যেই পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। তারপর উচ্চশিক্ষার জন্য জাপানে পাড়ি জমান। এ সময়ে গবেষণা করেন সামুদ্রিক প্রবালের উপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে। পরবর্তীকালে তিনি জাপানের সিজুওকা ইউনিভার্সিটি থেকে ডক্টর অব সায়েন্স ডিগ্রি অর্জন করেন।
লেখাপড়া শেষে দেশে ফিরে চাকুরিতে যোগ দেন জাপানের আন্তর্জাতিক সংস্থা জাইকাতে। মহামারি করোনা ভাইরাসের ভয়াল সংক্রমণের কারণে চাকুরি ছেড়ে গ্রামে ফিরে ৩ দশমিক ৩ একর জমিতে গড়ে তোলেন ‘রাইয়ান জৈব-কৃষি’ প্রকল্প। বর্তমানে তিনি ১০ বিঘা জমিতে চাষাবাদ করে যাচ্ছেন। মাত্র ২টি পুকুরের একটিতে মাছ ও অন্যটিতে মুক্তা চাষ করে এলাকায় ব্যাপক সাড়া ফেলে দিয়েছেন।
ড. নজরুল ইসলাম জানান, নদী-নালা থেকে দেশীয় প্রজাতির ঝিনুক সংগ্রহের পর বৈজ্ঞানিক পন্থায় অপারেশন করে পুকুরে চাষের জন্য ছেড়ে দেওয়া হয়। ৭ থেকে ৮ মাস পর ওই ঝিনুক থেকে মুক্তা আহরণ করেন তিনি। এ সময় সাধারণ মুক্তার পাশাপাশি তিনি মুক্তা গর্ভে বিভিন্ন ডিজাইনের কাঠামো তৈরি করেছেন। এরই মধ্যে যা বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন।
আরও পড়ুন : মহাসড়কে চাঁদাবাজি বন্ধে হাইওয়ে পুলিশের শক্ত অবস্থান
তিনি বলেছেন, বর্তমানে আমি ৩ বিঘা জমির পুকুরে মুক্তা চাষ করছি। তিন হাজার ঝিনুক থেকে আমি পাব ছয় হাজার মুক্তা। তিন হাজার ঝিনুক চাষ করতে তার খরচ হয়েছে দেড় লাখ টাকা। এখন ঝিনুক থেকে মুক্তা আহরণ শুরু করেছি। এ থেকে আমি আট থেকে ১০ লাখ টাকা লাভের আশা করছি।
ড. নজরুল ইসলাম আরও বলেন, ঝিনুক চাষ করতে প্রথমে ইমেজ ব্যবহার করতে হয়। তারপর ভাসমান প্লটের উপর নেট ও রশিসহ বিভিন্ন জিনিস প্রয়োজন হয়ে থাকে। ঝিনুক চাষ বাড়তি কোনো খাবার প্রয়োজন হয় না। বর্তমানে আমি ১ বিঘা জমির পুকুরে মুক্তা চাষ করছি। ৩ হাজার ঝিনুক থেকে আমি পাব ৬ হাজার মুক্তা। ৩ হাজার ঝিনুক চাষ করতে তার খরচ হয়েছে দেড় লাখ টাকা। এখন ঝিনুক থেকে মুক্তা আহরণ শুরু করেছি। এ থেকে আমি সাত থেকে আট লাখ টাকা লাভের আশা করছি।
‘রাইয়ান জৈব-কৃষি’ প্রকল্পে কর্মরত শ্রমিক তসলিম আলী বলেন, ড. নজরুল ইসলামের মুক্তা চাষের খামারে শুরু থেকে আমি কাজ করে আসছি। এখন থেকে যে বেতন পাই তা দিয়ে পরিবার নিয়ে ডাল-ভাত খেয়ে খুব ভালো আছি।
আরও পড়ুন : রিকশা হারিয়ে চালকের আত্মহত্যা, দায় পুলিশের কাঁধে!
কোটচাদপুর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা সঞ্জয় কুমার বলেন, শিবনগর গ্রামের ড. নজরুল ইসলাম ঝিনুকে মুক্তা তৈরি করছেন। এমন খবর পেয়ে সেখানে একাধিকবার গিয়েছি। তাকে আরও বৃহৎ আঁকারে মুক্তা চাষে পরামর্শ দিয়েছি।
ওডি/কেএইচআর
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড