কাজী শাহরিয়ার রুবেল, আমতলী (বরগুনা)
বরগুনার আমতলী উপজেলার আশ্রয়ণের ৫৫টি ব্যারাকের ৫৫০টি ঘর বসবাসের উপযোগী নয়। দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে লতাপাতা আর আগাছায় ভরে গেছে। মরিচা ধরে খসে পড়েছে দরজা-জানালা এবং টিনের চালা। নেই সংস্কারের কোনো উদ্যোগ, রাতের আঁধারে দুর্বৃত্তরা চুরি করে নিয়ে গেছে লক্ষাধিক টাকার টিন ও লোহার এঙ্গেল।
জানা গেছে, ১৯৯১ সালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অর্থায়নে গৃহহীন ও হতদরিদ্র পরিবারগুলোর আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়। এই আবাসনের তত্ত্বাবধানে ছিল বাংলাদেশ নৌ-বাহিনী। পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালে প্রকল্পের নামকরণ করা হয় আশ্রয়ণ প্রকল্প। ২০০৭ সালের ঘূর্ণিঝড় সিডরের পর জাপান সরকারের সহায়তায় নির্মিত হয় ব্যারাক হাউস নামক অন্য একটি প্রকল্প।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, আমতলীতে ৮টি আশ্রয়ণ প্রকল্প আছে। এ প্রকল্পে ৫৫টি ব্যারাকে ৫৫০টি ঘর রয়েছে। যেগুলো সংস্কারের অভাবে মানুষের বসবাসের অনুপযোগী। অধিকাংশ ঘরে এখন কোনো পরিবারই বসবাস করে না। গুলিশাখালী কালিবাড়িতে ১০টি ও হলদিয়া ইউনিয়নের সেনের হাটের পূর্বপাশে নির্মিত ঘরে ২০টি পরিবার থাকার কথা থাকলেও নেই কোনো পরিবার। তাছাড়া ব্যারাক দুটি পড়ে রয়েছে নিকটস্থ খালে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কালিবাড়ি আশ্রয়ণের কোনো ঘরের বেড়ার টিন নেই। আঠারগাছিয়া ইউনিয়নের গোলবুনিয়া গ্রামের সুইজ গেট সংলগ্ন আশ্রয়ণে ১০টি পরিবার থাকার কথা থাকলেও আছে মাত্র ১টি পরিবার। তাছাড়া নেই দরজা-জানালা এবং টিনের চালা। ফাঁকা পড়ে আছে স্ট্রাকচার।
একই অবস্থা আরপাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের মধ্যযুগিয়া ৪টি ব্যারাক হাউজের ৪০ ঘরে এখন আর কেউ বসবাস করে না। সেখানের দরজা-জানালা-টিন সব চুরি হয়ে গেছে। একই অবস্থা আমতলী সদর ইউনিয়নের চারঘাট, গুলিশাখালী ইউনিয়নের কলাগাছিয়া এবং হলদিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ তক্তাবুনিয়া আশ্রয়ণের ঘরের। কালিবাড়ি এবং দক্ষিণ পশ্চিম আমতলীর গোলবুনিয়া আশ্রয়ণে ঘুরে দেখা গেছে, ঘরের কিছুই নেই। ফাঁকা পড়ে আছে বেড়াবিহীন ঘরগুলো।
দক্ষিণ তক্তাবুনিয়া আশ্রয়ণের ঘর সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, এখানের অবস্থাও ভয়াবহ। ১৫টি ব্যারাকে ১৫০টি পরিবারের বসবাসের কথা। আছে মাত্র হাতেগোনা ১০-১১টি পরিবার। ভয়াবহ কষ্টের কারণে তারাও চলে যেতে পারে যেকোনো সময়। এখানের ১০টি ব্যারাকের কোনো ঘরের চালার টিন নেই। যা আছে তাও ফুটো হয়ে বর্ষা মৌসুমে পানি ঝরে। রোদের সময় আবার টিনের ছিদ্র দিয়ে সূর্যের আলো ঘরে ঢুকে। নির্মাণের পর সংস্কার না করায় দরজা-জানালা খুলে পড়ে গেছে। অধিকাংশ ঘরের টিন মরিচা ধরে পড়ে যাওয়ায় লোহার স্ট্রাকচারগুলো কঙ্কালের মতো দাঁড়িয়ে আছে। তার উপর গুল্মলতা আর বুনো ঝোঁপঝাড়ে ভরে গেছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এসব ঘর নির্মাণে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে। এসব ঘর মেরামত বা রক্ষণাবেক্ষণের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ফলে কয়েক বছর যেতে না যেতেই ঘরের চাল ফুটো হয়ে বৃষ্টির পানি পড়তে শুরু করে। ঘরের মেঝেতে ফাটল ধরে। ফলে বেশিরভাগ ঘর বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।
দক্ষিণ তক্তাবুনিয়া আশ্রয়ণে বসবাসরত মুনছুরা বেগম বলেন, ‘ঘরের টিনের চাল সব ফটুা। বৃষ্টি হলে পানি পড়ে, রোদ উঠলে আলো আসে নিমিষেই। তাই ঠিকমতো থাকতে পারছি না।’
তক্তাবুনিয়া আশ্রয়ণে বসবাসরত সুলতানা বেগম বলেন, ‘ঘরের অবস্থা এতোই খারাপ থাকা সম্ভব না। লতা-পাতা আর পলিথিন দিয়ে মেরামত করে থাকতে হয়।’
দক্ষিণ তক্তাবুনিয়া আশ্রয়ণের সভাপতি সুলতান মৃধা বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলো এখন পরিত্যক্ত মনে হয়। এখানে মানুষ বসবাসের আর কোনো উপায় নেই। বসবাস করতে না পেরে অনেকেই চলে গেছেন। সবকিছু নষ্ট হয়ে গেছে। যে কেউ দেখলে মনে করবে ঝোঁপ-জঙ্গল।
আমতলী সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আ. লীগের সহ-সভাপতি মো. মোতাহার উদ্দিন মৃধা বলেন, নির্মাণের পর আশ্রয়ণের ঘরগুলোতে কোনো সংস্কার হয়নি। মূলত সংস্কারের অভাবেই বসবাস অযোগ্য। অসহায় পরিবারের থাকার মতো জায়গাটুকু জরুরি মেরামত করা প্রয়োজন।
আমতলী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মো. মফিজুর রহমান বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর সংস্কারের কোনো বরাদ্দ না থাকায় সংষ্কার করা হয়নি। বরাদ্দ ও সরকারের পক্ষ থেকে নির্দেশ আসলেই সংস্কার করা হবে।
আরও পড়ুন : কর্মবিরতি পালন করছে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের নারী ইন্টার্নরা
আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার একেএম আব্দুল্লাহ বিন রশিদ মুঠোফোনে বলেন, ঘরগুলো সংস্কারের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগকে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
ওডি/এএম
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড