• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

ঐতিহ্যবাহী মেলার অপেক্ষায় দিন গুনছে রূপগঞ্জবাসী

  সাইদুর রহমান, রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ)

৩০ ডিসেম্বর ২০২১, ১৬:০৮
ঐতিহ্যবাহী মেলার অপেক্ষায় দিন গুনছে রূপগঞ্জবাসী
মেলার অপেক্ষায় রূপগঞ্জবাসী । ছবি : অধিকার

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার শতবর্ষের ঐতিহ্যবাহী গোলাকান্দাইল মেলা শুরু হওয়ার অপেক্ষায় দিন গুনছেন রূপগঞ্জ বাসী। গোলাকান্দাইল হাটের মাঠে এ মেলা বসলেও এর বিস্তৃতি ছড়িয়ে পড়তো গ্রামের ভেতরের সড়কেও। পহেলা মাঘ হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের শিবপূজাকে কেন্দ্র করে বসতো এই মেলা।

১৫ দিনের এ মেলা চলতো মাসব্যাপী। এই মেলা হয়ে উঠতো সাধারণ মানুষের এক মিলন মেলা। ধনী-গরিব-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব শ্রেণী পেশার মানুষ এ মেলায় অংশ নিতো। সব বয়সের মানুষের আগমনে এ মেলা স্থানীয়দের মিলন মেলায় পরিণত হয়ে উঠত।

মেলায় বাহারি জিনিস পত্র। ছবি : অধিকার

আবহমান বাংলার সব গ্রাম্য মেলার মতোই এই মেলায়ও থাকতো নানা খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন। নানা জিনিসের পসরা সাজিয়ে বসতো বিক্রেতারা। ক্রেতারা হুমরি খেয়ে পড়তো মেলায়। তারা তাদের প্রয়োজনীয় জিনিস কিনে নিতো এখান থেকে। গ্রামের সাধারণ মানুষের বিনোদনের এক সুবর্ণ সুযোগ করে দিতো এই মেলা।

সার্কাস, যাত্রাপালা, পুতুলনাচ, যাদুসহ নানা আনন্দদায়ক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা থাকতো এই মেলায়। মেলাতে আরও থাকতো কাঠ, বাঁশ,বেত আর লোহার সামগ্রীতে ঠাসা গোলাকান্দাইল মেলার প্রধান আকর্ষণ বালিশ মিষ্টি। বড় বড় কড়াইতে চিনির সিরায় ভেসে থাকা রসগোল্লা দেখতে বালিশের মতো পাডা ও পুতা মিষ্টি। তৃপ্তি সহকারে খাওয়ার জন্য এ মিষ্টির বিকল্প নেই। মহিষের দুধের ছানা থেকে এ মিষ্টি তৈরি হওয়ায় খাওয়ার সময় একটু মহিষালি গন্ধ পাওয়া যায়।

এ ছাড়া মরণকুপ নামের মোটরসাইকেল কসরতও প্রতি বছর থাকতো এই মেলায়। আর মাটির তৈরি নানা সরঞ্জামাদি পাওয়া যেতো এ মেলায়। এছাড়াও শিশুদের জন্য থাকতো নাগরদোলা। পহেলা মাঘ আয়োজিত শতবর্ষী এ মেলাকে কেন্দ্র করে গোলাকান্দাইল এলাকায় চলতো আনন্দ যজ্ঞ।

কিন্তু কয়েক বছর ধরে এই মেলা বসছেনা নানা কারণে। তবে এ বছরের ১৪ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়ার অপেক্ষায় দিন গুনছে পুরো রূপগঞ্জসহ আশপাশের উপজেলার ক্রেতা-বিক্রেতা ও বিনোদন প্রেমীরা। কয়েক বছর ধরে মেলা না হলেও মেলার প্রতি মানুষের আগ্রহ কমেনি বিন্দু পরিমাণও। মেলা নিয়ে দর্শকদের খানিক মন খারাপ। কারণ মেলা হবে কি হবে না তা নিয়ে মানুষের মনে নানান প্রশ্ন।

সার্কাস। ছবি : অধিকার

মর্তুজাবাদ এলাকার গৃহবধূ স্বর্ণা বলেন, আমি ছোট বেলা আমার বাবার সাথে গোলাকান্দাইল মেলায় গিয়েছিলাম তখন বাবা আমার জন্য মাটির খেলনা কিনে দিয়েছিলো। আর কিনাকাটা শেষে মেলায় সার্কাস দেখিয়ে ছিলেন। তখন সার্কাস অনেক ভালো লেগেছিলো। কিন্তু শুনছি কয়েক বছর ধরে মেলা হচ্ছে না। তবে এবার চিন্তা করেছি যদি মেলায় সার্কাস আসে তাহলে বাড়ির সবাই যাব।

গোলাকান্দাইলের এই মেলার বিষয়ে বাঁশি বিক্রেতা আলী হোসেন বলেন, আমি মেলায় মেলায় বাঁশি বিক্রি করে সংসার চালাইতাম। গোলাকান্দাইল মেলায় ৪০ বছর যাবত বাঁশি বিক্রি করেছি। তবে কয়েক বছর ধরে মেলা হয় না বলে ঠিক মতো বাঁশিও বানাই না। দেখি যদি মেলা হয় তাহলে বাঁশি বানাইয়া রাখবো যাতে বিক্রি করতে পারি।

কাঞ্চন পৌরসভার আমীর হোসেন নামের এক বাসিন্দা বলেন, গোলাকান্দাইল ছাড়াও দেশের ৬৪ জেলায় বিভিন্ন মেলায় আমি অংশগ্রহণ করি। আর মেলায় মেলায় বাচ্চাদের জন্য টমটম গাড়ি তৈরি করে বিক্রি করেই সংসারের খরচ নির্বাহ করি।

তিনি আরও বলেন, মেলায় মেলায় ঘুরেই তার জীবনের আনন্দ খুঁজেন। তবে গোলাকান্দাইল মেলাটা একটু ব্যতিক্রম কারণ এই মেলা এক মাস হয়। এখানে বেচাকেনা করতে পারলে অনেক টাকা ইনকাম করতে পারি। তাই এবছর এই মেলার আশায় রয়েছি এবং গাড়ি তৈরি করার জন্য সারঞ্জম কিনে রেখেছি।

কল্যান্দী গ্রামের বেলুন বিক্রেতা শামীম বলেন, ৭ বছর বয়স থেকেই আমি বেলুন বিক্রির সাথে জড়িত। বেলুন বিক্রি করে জীবনের ৫-যুগ পার করেছি। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে মেলায় ঘুরে ঘুরে বেলুন বিক্রি করে সংসার চালাতাম। শিশুদের কাছে বেলুন বিক্রির পর তাদের হাসি মুখটা তার খুব ভালো লাগতো। সেই আনন্দে নিজের জীবনের সার্থকতা খুঁজেন এ বেলুন বিক্রেতা।

তিনি অনেক সময় বিনা পয়সায় ছোট্ট শিশুদের বেলুন উপহার দিতেন। দুই ছেলে এক মেয়ের এ জনক নিজের সামান্য আয় দিয়ে সন্তানদের লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষ করার চেষ্টা করছেন। তবে করোনা ভাইরাসের কারণে অনেক দিন কোনো যায়গায় মেলা না হওয়ায় অনেক কষ্ট করেছি। হাট-বাজারেও ঠিকমতো বেলুন বিক্রি করতে পারি নাই। এখন একটাই আশা গোলাকান্দাইল মেলা নিয়ে। এই মেলাটা হলে ঠিকমতো ব্যবসা করতে পারবো। আর ঠিকমতো ডাল-ভাত খেয়ে বাঁচতে পারবো।

বালিশ মিষ্টি বিক্রেতা শিবু বলেন, গোলাকান্দাইল মেলার প্রধান আকর্ষণ ছিলো আমাদের বালিশ মিষ্টি। আমি ছোট থেকে এই মেলায় বাবার সাথে মিষ্টি বিক্রি করতাম। আমি নিজেও মিষ্টি বিক্রি করেছি। কিন্তু আজ কয়েক বছর ধরে দেশের নানা পরিস্থিতির কারণে মেলা হয় না। তাই মিষ্টিও বিক্রি করতে পারি না। রওশন সার্কাসের ম্যানেজার কিবরিয়া বলেন, দীর্ঘদিন যাবত করোনা পরিস্থিতির কারণে দেশের বিভিন্ন জায়গায় মেলা বন্ধ থাকায় আমাদের সার্কাস পার্টিরাও খেয়ে না খেয়ে কোনো মতো বেঁচে আছে। তবে এবার যদি রূপগঞ্জের গোলাকান্দাইলে এ মেলাটি হয় তাহলে আমাদের সার্কাস পার্টির জন্য অনেক উপকার হবে।

এ বিষয়ে রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহ্ নুসরাত জাহান বলেন, জেলা প্রশাসকের অনুমতি বাদে কোনো মেলা হবে না। তবে কেউ যদি জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিয়ে আসে তাহলে মেলা হবে। এছাড়া এখন করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় বেশি জনসমাগম ঝুঁকিপূর্ণ।

ওডি/এসএ

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড