• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৩ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

স্বর্ণালী অক্ষরে লেখা থাকবে শহীদ সুজীত বর্মণের নাম

  নেহাল আহমেদ প্রান্ত, আদমদীঘি

০৮ ডিসেম্বর ২০২১, ১২:০৮
স্বর্ণালী অক্ষরে লেখা থাকবে শহীদ সুজিত বর্মণের নাম
সুজীত রেলগেট। ছবি : অধিকার

১৯৭১ সালের ১৩ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধ চলাকালিন সময়ে আদমদীঘি উপজেলার সান্তাহার ঢাকা রোডের কাছে এ্যন্টি ট্যাংক মাইন বিস্ফোরণ ঘটাতে গিয়ে নিহত হয় সুজীত বর্মণ। কিন্তু দীর্ঘ ৫০ বছর পেরিয়ে গেলেও শহীদ সুজীত বর্মণ পরিচয় মেলেনি। ১৯৭১ সালে ১২ ডিসেম্বর আদমদীঘি সদর পাক হানাদার মুক্ত হয়।

আদমদীঘি মুক্ত করে ৭ নং সেক্টরের ৬৮ নং দলের কয়েকশত মুক্তিযোদ্ধা সান্তাহার শহর মুক্ত করতে পশ্চিম ঢাকা রোড থেকে যুদ্ধ করতে করতে সামনের দিকে অগ্রসর হতে থাকেন। মুক্তিযুদ্ধ কালিন কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা এল কে আবুল, মেজর (অব.) আব্দুল হাকিম এবং মো. হায়াতের নেতৃত্বে ৬৮ নং দলটি পরিচালিত হচ্ছিল। একটা সময় পাক সেনারা সান্তাহার থেকে মিটার গ্রেজ লাইনে ট্রেন যোগে প্রচণ্ড বেগে গুলি করতে করতে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধে এগিয়ে যায়।

মুক্তিযোদ্ধারাও প্রচণ্ড প্রতিরোধ গড়ে তুললে পাকবাহিনীর বহন করা ট্রেনটি সান্তাহারে ফিরে আসে। পাক বাহিনী সান্তাহার ওয়ার্কশপ থেকে প্রচণ্ড বেগে গোলা ছুড়তে থাকে। এই অবস্থায় মুক্তিযোদ্ধারা সিদ্ধান্ত নেয় সান্তাহার থেকে ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ করতে রেল লাইন বোমা বিস্ফোরণে উড়িয়ে ফেলা হবে। রেল লাইন উপড়ে ফেলার এবং বোমা বিস্ফোরণ ঘটানোর দায়িত্ব পড়ে বোমা বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ মুক্তিযোদ্ধা সুজীত বর্মণ ওপর। ৬৮ নং দলের কমান্ডার এলকে আবুলের পরামর্শে দুটি এ্যন্টি মাইন বোমা রেলের লাইনে লাগানো হয়।

প্রথম গোলাটি বিস্ফোরণ হয় ভালভাবে। উড়ে যায় একটি লাইনের বেশ কিছু অংশ। দ্বিতীয় মাইনটি বিস্ফোরন করতে সুতার মাথা টান দেয় সুজীত বর্মণ। মাইন বিস্ফোরণ না হওয়াতে সেটি পরীক্ষা করতে যায় সুজীত। সে সময় মাইনটি বিস্ফোরণ ঘটলে সুজীতের দেহ ছিন্ন ভিন্ন হয়ে যায়। শহীদ হন সুজীত বর্মণ। তার মরদেহও পাওয়া যায়নি।

বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রশিদ বলেন, সুজীত বর্মণের সরকারি পর্যায়ে ভারতে খোঁজ নিলে তার সঠিক পরিচয় হয়তো পাওয়া যাবে। সুজীতের বয়স যুদ্ধের সময় ২২/২৪ বছর হবে। ফর্শা, লম্বা, ছিপছিপে ধরণের শহীদ সুজীত অত্যন্ত সাহসী একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। বৃহত্তর ময়মনসিংহের এই কৃতি সন্তানের কেউ স্বজন হয়ে থাকলে তাহলে আমাদের নিকট যোগাযোগ করুন।

বীর মুক্তিযোদ্ধা আজমল হোসেন বলেন, সুজীত বর্মণ বাড়ি ময়মনসিংহে। মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে সে ভারতে গিয়ে ট্রেনিং নিয়ে সান্তাহার এলাকায় ৬৮ নং দলের হয়ে যুদ্ধ করেছে। মুক্তিযুদ্ধের পর আমরা কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ সুজীদের খোঁজে ময়মসসিংহ এলাকায় গিয়েও তাঁর কোন ঠিকানা পায়নি। এ বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধকালীন কমান্ডার ও ৬৮ নং দলের কমান্ডার এল কে আবুল বলেন, সুজীত বর্মণে কাঁধে সব সময় একটা ব্যাগ থাকতো।

আরও পড়ুন : মেশিনে ১০ টাকা দিলেই বেরিয়ে আসবে স্যানিটারি প্যাড

সেই ব্যাগে আমাদের দলের সব সদস্যদের নাম, ঠিকানা ছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্য ক্রমে সেই ব্যাগসহ সুজীত মারা যান। ফলে তাঁর বিস্তারিত পরিচয় আর মেলেনি। আর দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সুজীত বর্মণ যেখানে নিহত হয়েছিল। সেই অনুসারে রেলগেটটি নাম রাখা হয়েছে সুজীত রেলগেট। তার এই আত্মত্যাগ স্বর্ণালী অক্ষরে লেখা থাকবে সান্তাহারের ইতিহাসে।

ওডি/এসএ

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড