• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

সিংগাইরে সমবায় সমিতির নামে কোটি টাকার প্রতারণা

  মিলন মাহমুদ, সিংগাইর (মানিকগঞ্জ)

০৪ ডিসেম্বর ২০২১, ১৩:৪২
সিংগাইর
সেভ বাংলাদেশের কার্যালয় (ছবি : অধিকার)

মানিকগঞ্জের সিংগাইরে সেভ বাংলাদেশ সঞ্চয় ও ঋণ দান সমবায় সমিতির নামে একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে গ্রাহকদের কোটি কোটি টাকা আত্মসাত ও প্রতারণার অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে। সমিতির গ্রাহকরা আমানতের টাকা উদ্ধারে উপজেলা সমবায় অফিস, থানা পুলিশ ও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন। তবে মাসের পর মাস চলতে থাকলেও পাওনা টাকা উদ্ধার হচ্ছে না। অনেক গ্রাহক তাদের শেষ সম্বল সমিতিতে রেখে নি:স্ব হয়ে গেছেন।

উপজেলা সমবায় অফিস ও গ্রাহক সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার শায়েস্তা ইউনিয়নের স্কুল প্লাজায় ২০১২ সালে সেবা সঞ্চয় ও ঋণ দান সমবায় সমিতি কার্যক্রম শুরু করে।

সমিতিটির বর্তমান অফিস শাহরাইল বাজারের বিসমিল্লাহ মার্কেটে। তবে অফিস বেশিরভাগ সময় বন্ধ থাকে। সেবা সঞ্চয় ও ঋণ দান সমবায় সমিতিটির সভাপতি জগোবন্ধু সরকার ও সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান আবু সাঈদ। প্রতিষ্ঠানটিতে বর্তমান গ্রাহকের সংখ্যা প্রায় ৩৫০ থেকে ৪০০ জন। শুরু থেকেই সমিতিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক অবৈধভাবে গ্রাহক ও সদস্যদের কাছ থেকে ডিপিএস আমানত, এককালীন আমানত, মাসিক মুনাফা আমানতসহ বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করে।

সরেজমিনে তদন্ত করে দেখা গেছে, শায়েস্তা ইউনিয়নের শাহরাইল বাজারের বিসমিল্লাহ মার্কেটের তৃতীয় তলার সেভ সঞ্চয় ও ঋণ দান সমবায় সমিতির অফিসে ঝুলছে তালা। কাগজ কলমে সেভ সঞ্চয় ও ঋণ দান সমবায় সমিতি নাম হলেও সাইনবোর্ডে লেখা সেভ বাংলাদেশ। এছাড়া সাইনবোর্ডে লেখা রয়েছে এনজিও ব্যুরোর নিবন্ধনের জন্য আবেদিত।

অফিসের প্রতিবেশি ব্যবসায়ীরা বলেন, অফিস কয়েক বছর ধরে বেশিরভাগ সময় বন্ধ থাকে। মাঝে মধ্যে সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান আবু সাঈদ অফিস খোলে কিছুক্ষণ থেকে আবার চলে যান।

গোপাল নগর গ্রামের গ্রাহক কোহিনূর ইসলাম বলেন, সেভ সঞ্চয় ও ঋণ দান সমিতিতে লাভের আশায় এককালীন ৫ লাখ টাকা রাখি। ২ বছর যাবৎ আমাকে কোন টাকা দেয় না। টাকা চাইলে শুধু সময় চায়। আমার স্ত্রী একজন ক্যান্সার রুগী। তার চিকিৎসার জন্য টাকা দরকার। সমিতির টাকা না পেলে স্ত্রীর চিকিৎসা করা সম্ভব নয়। সমিতির অফিসে গেলে অফিস বন্ধ পাই। থানা পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনের কাছে ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্ত হয়ে গেছি।

শাহরাইল বাজারের ব্যবসায়ী মো. মোস্তফা কামাল বলেন, শতকরা ৭ শতাংশ লাভের আশায় প্রতি মাসে দুইশত টাকা সঞ্চয় ও এককালীন ১ লাখ টাকা রাখি। এপর্যন্ত আমার ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা জমেছে। টাকা চাইলে দিচ্ছি বলে মাসের পর মাস ঘুরাচ্ছেন। প্রায় দুই বছর ধরে ঠিক মতো অফিসও খোলা থাকে না। সমিতিতে আমার মতো প্রায় ৩ শতকের বেশি গ্রাহক রয়েছে। গ্রাহকদের প্রায় ৩/৪ কোটি টাকা এখন সমিতির চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদকের পকেটে।

সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান আবু সাঈদ বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে দুই বছর সমিতির গ্রাহকরা ক্ষুদ্র ঋণের টাকা পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয়। একই সময় সব গ্রাহক এক সাথে এককালীন টাকার জন্য চাপ দেয়। এতে লেনদেনে একটু সমস্যা হয়েছে। তবে অল্প সময়ের মধ্যে এ সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।

সিংগাইর উপজেলা সমবায় অফিসার আখিনুর ইয়াসমিন বলেন , ২০১৯ সালের অডিটে সেভ সঞ্চয় ও ঋণ দান সমবায় সমিতির কার্যক্রমে অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া যায়। এরপর থেকে গ্রাহকদের আমানতের টাকা ফেরত না দেওয়ার অভিযোগ আসে। বর্তমানে ১৪ জন গ্রাহক তাদের টাকার দাবিতে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। গ্রাহকদের টাকা ফেরত দিতে সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে চাপ দেওয়া হচ্ছে।

আরও পড়ুন : চট্টগ্রামে ট্রেন-বাস-অটোরিকশার ত্রিমুখী সংঘর্ষ, নিহত ২

উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুনা লায়লা বলেন, সেভ সঞ্চয় ও ঋণ দান সমবায় সমিতির বিরুদ্ধে খুব দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সমবায় সমিতির নামে যারাই সাধারণ মানুষের টাকা আত্মসাৎ করার চেষ্টা করবে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। প্রয়োজনে সমবায় সমিতির রেজিস্ট্রেশন বন্ধ করে দেওয়া হবে।

ওডি/এফই

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড