• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

পার্বত্য শান্তিচুক্তি

দুই যুগেও শান্তি আসেনি পাহাড়ে

  এম. কামাল উদ্দিন, রাঙামাটি

০১ ডিসেম্বর ২০২১, ১৬:০৬
পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তির দুই যুগ
পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তির দুই যুগ (ফাইল ফটো)

পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তির দুই যুগ পরেও পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়নি। বন্ধ হয়নি রক্তপাত, হানাহানি। একের পর এক পড়ছে লাশ। আঞ্চলিক দলের একাধিক বৈরি সশস্ত্র গ্রুপের মধ্যে প্রতিনিয়তই ঘটছে সংঘাত। চলছে অস্ত্রের ঝনঝনানি। এতে জিম্মি পাহাড়ের সাধারণ মানুষ।

পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যাকে জাতীয় ও রাজনৈতিক চিহ্নিত করে এর স্থায়ী ও শান্তিপূর্ণ সমাধানের লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর সরকার এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মধ্যে ঐতিহাসিক এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। যেটি ‘পার্বত্য শান্তিচুক্তি’ হিসাবে সার্বজনীন স্বীকৃতি লাভ করে। কিন্তু শান্তিচুক্তির পূর্ণাঙ্গ শর্তাবলি আজও অবাস্তবায়িত। বর্তমানে পার্বত্য শান্তিচুক্তির বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় বিরাজ করছে স্থবিরতা। ফলে পাহাড়ের পরিস্থিতি দিনকে দিন জটিলতার দিকে এগোচ্ছে বলে মন্তব্য সাধারণ থেকে শুরু করে স্থানীয় বিভিন্ন মহলের।

জেলা আ. লীগ সভাপতি ও স্থানীয় সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদার এমপি বলেন, চুক্তি বাস্তবায়ন হচ্ছে যেমন সত্য তেমনি পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি সেটাও সত্য। পাহাড়ের মানুষের মধ্যে চুক্তি নিয়ে যে আস্থা-বিশ্বাস কাজ করছে, তা দূর হতে হবে। চুক্তির ২৪ বছরে পাহাড়ে অবৈধ অস্ত্রধারী ও সন্ত্রাসীদের হাতে সবচেয়ে বেশি লোক মারা গেছে ক্ষমতাসীন দলের।

তিনি বলেন, সরকার ও জেএসএসের মধ্যে সন্দেহ জমেছে সেটা পরিহার করে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায়ের মাধ্যমে চুক্তি বাস্তবায়ন করা সম্ভব। আমরা বারবার দাবি দিয়ে আসছি, পাহাড় থেকে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করতে হবে। জেএসএস এক দিকে চুক্তির কথা বলছে অন্যদিকে দিনরাত মানুষ খুন করছে।

সাধারণ মানুষের মন্তব্য, শান্তিচুক্তি আর বাস্তবায়নের আশা নেই। রাঙামাটি সদরের বন্দুকভাঙা ইউনিয়নের ত্রিপুরাছড়া নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বীর বাহু চাকমা বলেন, শান্তিচুক্তি নামেই। এর সুফল আজও সাধারণ মানুষ পাচ্ছে না। আমরা এখন অনেকটা চিড়িয়াখানার জীব-জানোয়ারের মতো। আমাদের চলাফেরাতেও কোনো স্বাধীনতা নেই।

রাঙামাটি শহরের বনরুপা সমতাঘাটের দোকান ব্যবসায়ী মুক্ত কিশোর চাকমা বলেন, ‘শান্তিচুক্তি আর বাস্তবায়ন হবে বলে মনে হয় না। চুক্তির চব্বিশ বছরেও যেখানে ঝুলন্ত রয়েছে সেখানে পূর্ণ বাস্তবায়নের আশা কীভাবে করি? এ নিয়ে সরকারের আন্তরিকতা তেমন কোনো লক্ষণীয় নয়।’

অপরদিকে পার্বত্য শান্তিচুক্তির বিরোধিতা করে পার্বত্য চট্টগ্রামে পূর্ণ স্বায়ত্বশাসনের মতবাদ নিয়ে প্রসিত বিকাশ খীসার নেতৃত্বে ১৯৯৮ সালে গড়ে ওঠে ইউনাইটেড পিপল ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)। এরপর শুরু হয় জনসংহতি সমিতির সঙ্গে ইউপিডিএফের মধ্যকার সংঘাত আর রক্তপাত। ঘটে বহু মানুষের প্রাণহানি। পরে দেশে জরুরি অবস্থা চলাকালে জনসংহতি সমিতি ভেঙে দুই দলে বিভক্ত হয়। জন্মলাভ করে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (এমএন লারমা) নামে আরেকটি আঞ্চলিক দল।

সর্বশেষ ২০১৭ সালের শেষের দিকে ইউপিডিএফ ভেঙে দুই গ্রুপে বিভক্ত হয়ে গঠিত হয় ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) নামে আরেকটি আঞ্চলিক সংগঠন। এতে পার্বত্য চট্টগ্রামের আঞ্চলিক রাজনীতিতে তৈরি হয় সংকট। ওই চারটি দলের মধ্যে বেড়ে যায় সংঘাত-হানাহানি। এদিকে পার্বত্য শান্তিচুক্তির চুক্তির মৌলিক ধারাগুলো এখনও অবাস্তবায়িত। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, চুক্তির ৭২ ধারার মধ্যে এরই মধ্যে ৪৮টির বাস্তবায়ন হয়েছে। বাকি ধারাগুলো বাস্তবায়নাধীন।

রাঙামাটি জেলা আ. লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মুছা মাতব্বর বলেন, পার্বত্য শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন একটি চলমান প্রক্রিয়া। চুক্তির ৭২ ধারার মধ্যে ৪৮টি বাস্তবায়িত হয়েছে- তার মানে বলা যায়, ইতোমধ্যে শান্তিচুক্তির ৭৫ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়ে গেছে। বাকি ধারাগুলো বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় রয়েছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আ. লীগ সরকার পার্বত্য শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এ সরকারই শান্তিচুক্তির পুরোপুরি বাস্তবায়ন করবে। পার্বত্য শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় বাধাগ্রস্ত করছে পাহাড়ে অবস্থান নেওয়া অবৈধ অস্ত্রধারীরা। পাহাড় থেকে সব অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার হলে অচিরেই পার্বত্য শান্তিচুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন সহজ হবে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম বাঙালি নাগরিক পরিষদের রাঙামাটি জেলা শাখার সভাপতি মুহাম্মদ সাব্বির আহম্মদ বলেন, চুক্তির দুই যুগকে আমরা স্বাগত জানাই। তবে চুক্তির কিছু কিছু ধারা আছে যা পাহাড়ে বসবাসকারী মানুষগুলোর জন্য সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক। তাই এসব ধারা ও উপধারাগুলো সংশোধন করতে সরকারের প্রতি আহবান জানাই।

তিনি আরও বলেন, চুক্তির আগেই বিশাল জনগোষ্ঠী বাঙালিদের সাথে উভয়পক্ষকে বসা প্রয়োজন ছিল বলে আমি মনে করি। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য, চুক্তির ২ যুগ পেরিয়ে গেল অথচ পাহাড়ে এখনো অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানি চলছে।

আরও পড়ুন : বিদ্যুৎস্পৃষ্টে বাঁশখালীতে যুবক নিহত

পার্বত্য শান্তিচুক্তির ২৪তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে সরকার এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতিসহ তিন পার্বত্য জেলায় সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে আলোচনা সভাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এ উপলক্ষ্যে বাণী দিয়েছেন মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী। রাঙামাটিতে জনসংহতি সমিতির উদ্যোগে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সহ-সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য ঊষাতন তালুকদার।

ওডি/এএম

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড