• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৪০ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

নবাবগঞ্জে ত্বীন ফল, ড্রাগন ও থাই পেয়ারা চাষে স্বাবলম্বী

  পারভেজ রানা, নবাবগঞ্জ (দিনাজপুর)

১৪ অক্টোবর ২০২১, ১৩:২৯
দিনাজপুর
ত্বীন ফল, ড্রাগন ও থাই পেয়ারা (ছবি : অধিকার)

কোভিড-১৯ আক্রান্তে যখন গোটা পৃথিবী স্তব্ধ, ঠিক সেসময় বসে ছিলেন না ত্বীন ফল, ড্রাগন ও থাই পেয়ারা চাষীরা। এ দূর্যোগে ফল উৎপাদন করে বাড়তি আয়ের স্বপ্ন বাস্তবে পরিণত করেছেন দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলার বাগান মালিকেরা। উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে এখন শোভা পাচ্ছে বিদেশের মরু প্রান্ত দেশের ফল ত্বীন।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, নবাবগঞ্জ উপজেলার ৭ নম্বর দাউদপুর ইউনিয়নের মালারপাড়া গ্রামের মোজাম্মেল হকের ছেলে মতিউল ইসলাম বাড়ি সংলগ্ন ৫ বিঘা জমি ক্রয় করে ঢাকা গাজীপুর থেকে ত্বীন ফলের চারা নিয়ে এসে গড়ে তুলেছেন ত্বীন ফলের বাগানটি।

বাগান মালিক জানান রোপনের ৩ মাসের মধ্যেই গাছে ফল দেখা দিয়েছে। পরিপক্ব হলেই ঢাকার বাজারে ১ হাজার টাকা কেজি দরে ত্বীন ফল বিক্রি করে বাড়তি আয়ের স্বপ্ন দেখছেন তিনি। মতিউল জানান- এ পর্যন্ত তার বাগানে ৩০ লাখ টাকা বিনিয়োগ হয়েছে। আবহাওয়া আর প্রাকৃতিক দূর্যোগ থেকে রক্ষা পেলেই রফতানিযোগ্য ফলটি বাজারজাত করতে পারবেন বলে তিনি এমন ধারণা করেছেন সংবাদকর্মীদের নিকট। হা

সারপাড়া গ্রামের শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলজার হোসেন সাবুর ছেলে কায়সার পারভেজ মিলন জানান- মতিউল ত্বীন ফলের বাগান করে এলাকায় যুবকদের এখন প্রেরণার উৎস। প্রতিনিয়তই অনেকেই আসছে এ বাগান দেখতে। এদিকে উপজেলার ১ নম্বর জয়পুর ইউনিয়নে স্ব-উদ্যেগে কোটি টাকার অর্থায়নে ড্রাগন চাষের উদ্যেগ আর থাই পেয়ারার বাগান করে অবসর জীবনের ভাগ্যের চাকা ফিরিয়েছেন জহিরুল ইসলাম।

বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম, কৃষি খবর ও বিদেশ থেকে সরেজমিনে দেখে এসে এই অবসরপ্রাপ্ত সৈনিক উত্তর জণপদের ড্রাগন ফলের বাগানের কর্মসূচী হাতে নিয়েছেন। জয়পুর ইউনিয়নের বিশাল এলাকা জুড়ে ড্রাগন ফলের বাগানের কার্যক্রম শুরু করেছেন তিনি।

এ বিষয়ে নবাবগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান জানান- জহিরুল ইসলাম থাই পেয়ারা চাষ করে ইতিমধ্যেই আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছে। এরপরেও ড্রাগন ফল চাষের যে উদ্যেগ তিনি নিয়েছে তা বড় প্রায়াস। তাকে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদফতরের পক্ষ থেকে পরামর্শ দেয়া হবে।

জহিরুল ইসলাম জানায়- উত্তরজনপদে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ড্রাগন চাষ খুবই সীমিত। এ বাগান সফল করতে কৃষি বিভাগের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সার্বিক সহায়তা চেয়েছেন তিনি। ২০০৯ সালে নিজের ১১ বিঘা ও অন্যের ১৭ বিঘাসহ মোট ২৮ বিঘা জমিতে গড়ে তুলেছেন থাই পেয়ারার বাগান। চারা লাগানোর ৬ মাস পর থেকেই বাগানে পেয়ারা ধরতে শুরু করে। সাড়ে চার হাজার পেয়ারা গাছের সবগুলোতেই ব্যাপকহারে পেয়ারা ধরেছে। ইতিমধ্যেই বাগান থেকে ৬৩ লাখ টাকার বিভিন্ন প্রকার ফল বিক্রি করে এলাকায় সফল বাগান মালিক হিসেবে সুনাম অর্জন করেছেন জহিরুল ইসলাম।

পেয়ারা বাগানের নাম দিয়েছেন “ওয়াসী গ্রীন এগ্রিকালচারাল জোন”। পেয়ারা গাছের ফাঁকে ফাঁকে পরীক্ষামূলকভাবে কয়েকটি সফেদা ও মাল্টা গাছের চারা রোপণ করেছেন। বর্তমান সেগুলোতেও ফল এসেছে। এদিকে জহিরুল ইসলামের সাফল্য দেখে এলাকার অনেকেই পেয়ারা বাগানের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন বলে জানা গেছে।

জহিরুল ইসলাম আরও বলেন- তার বাগানের পেয়ারার ওজন ৮০০ গ্রাম থেকে এক কেজি পর্যন্ত। ফুল থেকে গুটি হলেই প্রতিটি পেয়ারা স্বচ্ছ পলিথিন দিয়ে মুড়িয়ে দেওয়া হয়। এই ব্যাগিং পদ্ধতির কারণে গাছে কীটনাশক প্রয়োগ করলেও পেয়ারা থাকে বিষমুক্ত। দেখতে যেমন সুন্দর পেয়ারার স্বাদও তেমন মিষ্ট। বাগান থেকেই ৫০ টাকা কেজি দরে পেয়ারা কিনে নেন রাজধানী ঢাকার কাওরান বাজার, খিলগাঁও, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের পাইকারি ব্যবসায়ীরা। এ বছর বাগানের পেয়ারা অন্তত কোটি টাকায় বিক্রি হবে বলে আশা করেছন এই বাগান মালিক।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জানান- জহিরুল ইসলামের পেয়ারা বাগানের সাফল্য দেখে এলাকার অন্যান্য এলাকাতেও গড়ে উঠতে শুরু করেছে পেয়ারা বাগান। দিনাজপুরের এই এলাকার মাটি ফল বাগানের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। এখানকার উৎপাদিত ফল সুস্বাদু এবং দেশের সব স্থানেই চাহিদা থাকায় লোকসানের ঝুঁকি কম। ফল চাষের বিষয়ে কৃষি বিভাগ থেকে সার্বিক সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে।

অন্যদিকে উপজেলার ৩ নম্বর গোলাপগঞ্জ ইউনিয়নের রঘুনাথপুর বামনগড় এলাকায় বারি-৪ জাতের আম, আপেল-১০ ও বলসুন্দরী কুল চাষ করে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন মো. রফিকুল ইসলাম।

ওডি/এফই

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড