• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

বাংলাবান্ধায় ভোগান্তিতে কয়েকশো ট্রাকচালক

  এম মোবারক হোসাইন,পঞ্চগড়

১১ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৬:০০
রংপুর
আটকে থাকা পণ্যবাহী ট্রাক (ছবি : দৈনিক অধিকার)

দেশের একমাত্র চারদেশীয় স্থলবন্দর হিসেবে পরিচিত বাংলাবান্ধা। এ বন্দর দিয়ে ভারত, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য হয়। বিগত করোনাকালীন সময়ে ২০২০-২১ অর্থবৎসরেও এ বন্দরে রাজস্ব দ্বিগুণ হয়েছে। তবে গত দুসপ্তাহ ধরে বন্দরের ট্রাফিক ব্যবস্থা মুখ থুবড়ে পড়েছে। প্রায় ৪-৫ কিলোমিটার রাস্তায় কয়েকশো পণ্যবাহী ট্রাক দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর এলাকাসহ তেঁতুলিয়া-বাংলাবান্ধা মহাসড়কে এ যানজট লেগে রয়েছে। এদের মধ্যে নেপালে রফতানিযোগ্য পণ্যবাহী ট্রাকও আটকে রয়েছে।

জানা গেছে, বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর দিয়ে ভারত, নেপাল ও ভুটানে পাথরসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানি-রফতানি করে বাংলাদেশ। প্রতিদিন বন্দর দিয়ে সর্বোচ্চ দুই থেকে তিন শতাধিক ট্রাক দিয়ে বিভিন্ন পণ্য আমদানি-রফতানি করা হয়। কয়েক মাস ধরে আমদানির পাশাপাশি বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন পণ্য ভারত, নেপাল ও ভুটানে রফতানি করা হচ্ছে। বাংলাদেশ থেকে বেশি পণ্য রফতানি হয় নেপালে। তবে হঠাৎ করে ভারত, নেপাল ও ভুটানে পণ্য আমদানি-রফতানি কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। এলসি চালান জটিলতা ও বন্দর ইয়ার্ডে জায়গার অভাবে মহাসড়কে আটকে আছে পাঁচশরও বেশি পণ্যবাহী ট্রাক। এসব ট্রাকে কৃষি, খাদ্য ও পোল্ট্রি ফিডসহ বিভিন্ন পণ্য ভারতের ফুলবাড়ী হয়ে নেপাল রফতানির কথা।

এদিকে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে পণ্য নিয়ে আসা চালকদের অভিযোগ, বন্দর কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনা এবং সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট চাহিদার তুলনায় বেশি পরিমাণে ট্রাক নিয়ে আসলেও পণ্য সময় মতো খালাস না হওয়ায় বন্দরে দীর্ঘ দিন ধরে আটকে থাকতে হচ্ছে। বন্দরে গাড়ি পার্কিং করার মতো জায়গা নেই। ফলে তারা তাদের পণ্যবোঝাই ট্রাক রাখার জায়গা না পেয়ে মহাসড়কে পার্কিং করে রেখেছেন। ট্রাক মহাসড়কে রাখলেও বন্দর পোর্ট চার্জ ১৮০ টাকা প্রতিদিনই দেওয়া হচ্ছে। তারা পণ্য খালাসের বিষয়ে জানতে গেলে চালকদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের লোকজন।

ঢাকা থেকে পণ্য নিয়ে আসা ট্রাকচালক রবিউল ইসলাম বলেন, গত ১০ দিন ধরে বাংলাবান্ধায় ট্রাক নিয়ে এসে আটকা পড়েছি। এখানে নেই খাওয়ার তেমন কোনো ব্যবস্থা, নেই মোবাইল নেটওয়ার্ক। আমরা শত শত ট্রাকচালক আজ মানবেতর জীবনযাপন করছি। আমাদের খবর কেউ নেয় না। পণ্য খালাস কবে হবে জানতে গেলেই সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টরা আমাদের ওপর রাগ করেন। বিভিন্ন সময় দেন, কিন্তু আমাদের পণ্য খালাস হয় না।

একই কথা জানান হামিদ নামে আরেক ট্রাকচালক। তিনি বলেন, আমি সরিষার দানা নিয়ে নারায়ণগঞ্জ থেকে ১২ দিন আগে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে এসেছি। কিন্তু আমার ট্রাকের পণ্য ট্রাকেই পড়ে আছে। বন্দরের ভেতরে ট্রাক রাখার জায়গা নেই, তাই আমরা খোলা আকাশের নিচে ট্রাক পার্কিং করে রেখেছি। পণ্য নিয়ে খুব আতঙ্কে আছি। এভাবে আর খেয়ে না খেয়ে কতদিন পড়ে থাকব। আমরা কি মানুষ না? কবে আমরা ট্রাক খালাস করে ফিরব?

বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট মো. নাহিরুল ইসলাম বলেন, বিগত দিনের তুলনায় বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে পণ্য আমাদানির চেয়ে রফতানি বেড়ে গেছে। বাংলাদেশের পণ্য বেশির ভাগ রফতানি হয় নেপালে। কিন্তু ভারতের ফুলবাড়ী স্থলবন্দরে গাড়ি রাখার জন্য জায়গা না থাকায় এবং নেপাল সময় মতো পণ্য নিতে না পারায় বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে রফতানিযোগ্য পণ্যের ট্রাক আটকে থাকে। তবে আমরা আশা করছি এ সমস্যার দ্রুত সমাধান হবে।

বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল্লাহ আল মামুন মুসা বলেন, ভারতের ফুলবাড়ী স্থলবন্দরে গাড়ি রাখার মতো জায়গা না থাকার কারণে তারা ট্রাক নিতে পারছে না। আমি মনে করি চলমান সমস্যার জন্য দায়ী বন্দর কর্তৃপক্ষ। বন্দরের জায়গা সংকটের কারণে এই যানজট সৃষ্টি হয়েছে। ফুলবাড়ী স্থলবন্দরে নেপালের জায়গা বরাদ্দ কম থাকায় নেপালগামী পণ্যবাহী ট্রাকগুলো সময়মতো সীমান্ত পার হতে পারছে না। এছাড়া স্থলবন্দরের ইজারাদারের সক্ষমতার অভাবে বন্দরের ইয়ার্ডে পণ্য খালাসে পর্যাপ্ত জায়গা এবং পার্কিং সুবিধার অভাবে সড়কে এই যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। বন্দর চার্জ ঠিকই নিচ্ছে কিন্তু তারা তেমন সার্ভিস দিচ্ছে না।

বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর লিমিটেডের ইনর্চাজ আবুল কালাম আজাদ বলেন, আগের চেয়ে এখন পণ্য রফতানি বেড়েছে। বাংলাদেশ থেকে যে পরিমাণ ট্রাক রফতানি পণ্য নিয়ে যায় সে পরিমাণ ট্রাক নেওয়ার সক্ষমতা না থাকার কারণে স্থলবন্দর এলাকায় ট্রাক আটকে থাকছে। এছাড়া যানজটের জন্য সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ও কাস্টমস দায়ী।

বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর শুল্ক স্টেশনের সহকারী কমিশনার মবিন-উল-ইসলাম বলেন, আমদানি-রফতানি বৃদ্ধি পাওয়ার কারণেই যানজট সৃষ্টি হয়েছে। এ বন্দর দিয়ে ভারত থেকে পাথর ও চালসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানি হয় এবং বাংলাদেশ থেকে কৃষি ও খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্য রফতানি হয়। বন্দরের ভেতরে অনেক জায়গা খালি পড়ে আছে। বন্দরটি যদি সংস্কার করা হয় এবং একটি সিঙ্গেল রোড করা হয় তাহলে এ যানজট আর থাকবে না।

আরও পড়ুন : চুয়াডাঙ্গায় বিজিবির অভিযানে রুপার গহনা উদ্ধার

তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোহাগ চন্দ্র সাহা বলেন, সর্বশেষ সভায় যানজট নিরসন ও মহাসড়কের শৃঙ্খলা ফিরে আনতে স্থলবন্দর সংলগ্ন এলাকায় ট্রাকস্ট্যান্ড করে দেওয়া ও বন্দরটি সম্প্রসারণের জন্য আরও ৩০ একর জমি অধিগ্রহণের পরিকল্পনা করা হয়েছে।

ওডি/এফই

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড