• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

যাতায়াত ব্যবস্থা না থাকায় ছেলে-মেয়ের বিয়ে হচ্ছে না

  কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

০৯ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৬:১৭
রাস্তা
২ কিলোমিটার রাস্তা এলাকাবাসীর জন্য যেন অভিশাপ (ছবি : দৈনিক অধিকার)

কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী উপজেলার বাগুলাট ইউনিয়নের ভড়ুয়াপাড়া গ্রামের জালাল মোল্লার বাড়ি থেকে কালুপাড়া পর্যন্ত ২ কিলোমিটার রাস্তা এলাকাবাসীর জন্য যেন অভিশাপ হয়ে উঠেছে। মাটির রাস্তার সংস্কার না হওয়ায় এলাকাবাসীর ভোগান্তির শেষ নেই। যাতায়াত ব্যবস্থা একেবারে নাজুক হওয়ায় এই গ্রামের অনেক ছেলে-মেয়ের বিয়ে হচ্ছে না।

স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, হাজার হাজার বিঘা জমির, ফসল শহরে নেয়া ও স্বল্পসময়ে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় পৌঁছানো কঠিন হয়ে যায়। বর্ষা মৌসুমে বসবাসরত পরিবারগুলো প্রয়োজনে বাজারে যাওয়া, বিপদকালীন সাহায্য পাওয়া, স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীর সঠিক সময়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে না যেতে পাড়ায় ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বাগুলাট ইউনিয়নের বিভিন্ন রাস্তাঘাট ও অবকাঠামোর উন্নয়ন হলেও এখন পর্যন্ত এই রাস্তাটি কাঁচা রয়ে গেছে যুগের পর যুগ। আর তাই এমন কাঁচা রাস্তা এখন এই এলাকার গ্রামবাসীর জন্য গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাইকবাস, বাস, সিএনজি, মোটর সাইকেল তো দূরের কথা একটু বৃষ্টি হলে বাই সাইকেল বা পায়ে হেঁটে পার হওয়াও অসম্ভব হয়ে যায়।

জনগুরুত্বপূর্ণ রাস্তাটি মেরামত করতে দীর্ঘদিনের দাবি জানিয়ে আসছে ভুক্তভূগী ভড়ুয়াপাড়া গ্রামের সাধারণ মানুষেরা। তাদের দাবি সব কিছু উন্নয়ন হলেও ২০ বছরেও কোনও উন্নয়ন হয়নি রাস্তাটির।

এ ছাড়া গ্রামের উৎপাদিত কৃষি পণ্যগুলো রাস্তা খারাপের জন্য সঠিক সময়ে বাজারজাত করা সম্ভব হয় না। এতে করে গ্রামীণ অর্থনীতিতে মারাত্মক ধস নামছে। কৃষক ও ক্ষুদ্র খামারিরা মূলধন হারিয়ে চাষাবাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। বর্ষা মৌসুমে রাস্তাগুলো পানি-কাঁদায় একাকার হয়ে যায়।

বিকল্প কোনও ব্যবস্থা না থাকায় কাঁদা মাড়িয়ে চলাচল করতে হয় গ্রামের হাজার মানুষদের। রাস্তার অবস্থা খারাপ হওয়ায় প্রতিবছর বর্ষার সময় কুষ্টিয়া শহরসহ ৫/৬টি গ্রামের সাথে ভড়ুয়াপাড়ার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। চরম ভোগান্তি পোহাতে হয় স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী ও চাকুরিজীবীদের। গত ২০ বছর ধরে গ্রামবাসীকে চলাচলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বলে জানা গেছে।

এলাকাবাসী জানায়, শুধুমাত্র যাতায়াতের কারণে এই গ্রামের অনেক ছেলে-মেয়ের বিয়ে হচ্ছে না। ভালো বিয়ের প্রস্তাব আসলেও যাতায়াতের এমন বেহাল দশার কারণে সবাই মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে সম্পর্ক করা থেকে।

বৃষ্টির সময় অনেকের ভোগান্তি পোহাতে হয়। আবার শুকনো মৌসুমেও রাস্তায় ধুলার কারণে অনেক সমস্যায় পড়তে হয়।

এই রাস্তা দিয়ে গ্রামের হাজার হাজার মানুষের যাতায়াত অথচ রাস্তাটি অভিভাবকহীন। গ্রামে কোনও লোক অসুস্থ হলে তাকে দুজন লোকে ভারে বহন করে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়। কারণ অ্যাম্বুলেন্স যাওয়ার ব্যবস্থা নেই। এমনকি গ্রামে কেউ যদি মারা যায় তার দাফনের কাজ সম্পূর্ণ করতে বেশ কষ্ট ভোগ করতে হয়।

ভড়ুয়াপাড়া গ্রামের শহিদুল ইসলাম বলেন, “মেয়ে বড় হয়েছে। বিয়ে দেওয়ার সময় চলে যাচ্ছে, বিয়ে হচ্ছে না। গত এক বছরে মেয়ের জন্য ৪টা বিয়ের প্রস্তাব এসেছে, কিন্তু যাতায়াতের এ দুরবস্থা দেখে কেউ সম্পর্ক করতে রাজি হয় না।

স্থানীয় আব্দুল মালেক জানান, রাস্তার বেহালদশার কারণে মুমূর্ষু রোগীকে সঠিক সময়ে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। প্রায় সময়ই লক্ষ্য করা যায় হাসপাতালে নেওয়ার আগেই রোগী পথেই মারা যাচ্ছে।

তাছাড়া গ্রামের বহু শিক্ষার্থী পরীক্ষা কিংবা ক্লাসে যোগদানে রাস্তার বেহাল দশার কারণে তারাও প্রতিনিয়ত ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।

স্থানীয় বাগুলাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জামাল সরকার বলেন, “এই রাস্তাটির বিষয়ে আমার জানা নেই, এখন আমার দায়িত্বও শেষের দিকে এই বিষয়ে কিছু বলতে পারছিনা।

আরও পড়ুন : চন্দনাইশে বনবিভাগের উদ্যোগে ৫ হাজার চারা বিতরণ

এ ব্যাপারে কুমারখালি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিতান কুমার মণ্ডল বলেন, আমি খুব দ্রুতই সরেজমিনে গিয়ে বিষয়টি খতিয়ে দেখব। কেন এই সড়কটির কাজ হচ্ছে না, কি কি সমস্যা আছে এই সড়কে। সে সময় তিনি খুব দ্রুতই রাস্তাটি সংস্কারের আশ্বাসও দেন।

ওডি/এসএ

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড