এস এম ইউসুফ আলী, ব্যুরো প্রধান (ফেনী)
ফেনীর সোনাগাজীতে স্কুল ছাত্রীকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে হামিদুর রহমান আজাদ (২৬) নামে এক গৃহশিক্ষককে খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে।
এ ঘটনায় দুই পরিবারের পক্ষ থেকে পাল্টা-পাল্টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ গৃহশিক্ষক হামিদুর রহমান আজাদ এবং ওই ছাত্রীর বড় ভাই সৌদি প্রবাসী দীন মোহাম্মদকে গ্রেফতার করেছে।
তাদের দুইজনকে সোমবার (৩০ আগস্ট) দুপুরে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।
গ্রেফতারকৃত শিক্ষক আজাদ বগাদানা ইউনিয়নের চরবদরপুর গ্রামের বেলাল হোসেনের ছেলে। দ্বীন মোহাম্মদ একই ইউনিয়নের পাইকপাড়া গ্রামের আশ্রাফ আলী কবিরাজ বাড়ির আবদুল হাইয়ের ছেলে।
এর আগে রোববার রাতে উপজেলার বগাদানা ইউনিয়নের তাকিয়া বাজার সংলগ্ন পাইকপাড়া গ্রামের তাকিয়া বাজার সংলগ্ন আশ্রাফ আলী কবিরাজ বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।
এনিয়ে দুই পরিবারের পক্ষ থেকে পরস্পর বিরোধী বক্তব্য পাওয়া গেছে।
এলাকাবাসী, পুলিশ ও ভুক্তভোগীদের পরিবারের সদস্যরা জানায়, উপজেলার একটি দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক আবদুল হাইয়ের এক কন্যা ও এক পুত্রকে প্রায় পাঁচ বছর ধরে প্রাইভেট পড়াতেন একই উপজেলা হামিদুর রহমান আজাদ।
সে সূত্রে গত দুই বছর ধরে ৯ম শ্রেণি পড়ুয়া ওই ছাত্রীর সাথে আজাদের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে।
রোববার রাত ৮টার দিকে ওই ছাত্রীর জন্মদিনের উপহার দিতে গিয়ে রাতে তাদের ঘরের একটি কক্ষে লুকিয়ে থাকেন।
রাত একটার দিকে আবদুল হাই ও তার পুত্র দীন মোহাম্মদ বিষয়টি টের পেয়ে আজাদকে আটক করে বেধড়ক পিটিয়ে ঘরের সামনে বৈদ্যুতিক খুঁটির সাথে বেঁধে শারীরিক নির্যাতন চালায়। সেই সাথে ছবি তুলে দীন মোহাম্মদের ফেইসবুক আইডিতে খুঁটিতে বাধা আজাদের ছবি পোস্ট করেন।
ফেইসবুকে দেয়া পোস্টে সে উল্লেখ করেন তাকিয়া বাজারে আশ্রাফ আলী কবিরাজ বাড়িতে ধরা খেয়েছে স্বর্ণ চোর, রাত তিনটায় দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকেছে, পুলিশ প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ।
মুহূর্তের মধ্যে ফেসইবুকের পোস্টটি ভাইরাল হয়ে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ আজাদকে উদ্ধার করে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাকে নিজেদের হেফাজতে নেয়।
ওই ছাত্রীর পিতা আবদুল হাই অভিযোগ করেন, দীর্ঘ দুই বছর যাবত আজাদ তার স্কুল পড়ুয়া কন্যাকে প্রেম ও বিয়ের প্রস্তাবে উত্ত্যক্ত করে আসছে।
বয়স কম হওয়ায় তিনি ও তার মেয়েকে বিয়ে ও প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় আজাদ রোববার রাতে সুকৌশলে ঘরে ঢুকে তার কন্যাকে জোর পূর্বক ধর্ষণের চেষ্টা চালায়।
তিনি ও তার ছেলে মিলে আজাদকে আটক করে রশি দিয়ে বৈদ্যুতিক খুঁটির সাথে বেঁধে রাখেন। তার ছেলের সাথে ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে তার ছেলের লাঠির আঘাতে আজাদের মাথা ফেটে যায়।
তিনি আজাদকে এক মাত্র আসামি করে তার স্কুল পড়ুয়া কন্যাকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে মামলা দায়ের করেন।
অপর দিকে আজাদের পিতা বেলাল হোসেন অভিযোগ করেন, আবদুল হাইয়ের কন্যাকে প্রাইভেট পড়ানোর সূত্র ধরে তার ছেলের সাথে ওই স্কুল ছাত্রীর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। ২৯ আগস্ট রোববার মেয়েটির জন্মদিন ছিল। মেয়েটি বিষয়টি তার ছেলেকে জানালে সে দুই প্যাকেট লজেন্স ও একটি কলম উপহার নিয়ে তাঁর বাড়িতে যায়।
রাতে সেখানে খাওয়া দাওয়া করে। কিন্তু গভীর রাতে তাঁর ছেলেকে নির্মম ভাবে বৈদ্যুতিক খুঁটির সাথে বেঁধে শারীরিক নির্যাতন চালিয়ে আহত করে।
তাতে তারা ক্ষান্ত হয়নি। দরজা ভেঙে ঘরে প্রবেশ করে কথিত স্বর্ণ চুরির অভিযোগ এনে খুঁটির সাথে বাঁধা ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেন দীন মোহাম্মদ। অথচ তাদের ঘরের দরজা ভাঙা বা স্বর্ণ চুরির কোন ঘটনাই ঘটেনি।
তাই তিনি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দীন মোহাম্মদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন।
আরও পড়ুন : নবাবগঞ্জের মুর্মূরা ঘর পেয়ে সামাজিকভাবে সম্মানিত
সোনাগাজী মডেল থানার ওসি সাজেদুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, স্কুল ছাত্রী ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে হামিদুর রহমান আজাদ ও খুঁটির সাথে বেঁধে ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেয়ার অভিযোগে দীন মোহাম্মদকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।
ওডি/এএইচ
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড