নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার সাবেক অফিসার ইনচার্জ কামরুলকে ৪৯ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধারের ঘটনায় কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত। মাদক মামলার চার্জশীটে তার নাম আসার পর তিনি আদালতে হাজিরা দিয়ে জামিন আবেদন করলে আদালত তাকে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ প্রদান করেন।
গত ২২ অক্টোবর সকালে আদালত তাকে মাদক মামলায় কারাগারে প্রেরণ করেছেন বলে নিশ্চিত করেছেন নারায়ণগঞ্জ জেল সুপার মাহবুবুল আলম। কারাগারে সাবেক ওসি কামরুল ইসলামকে পাঠানোর বিষয়টি সংবাদ মাধ্যমে বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে ভাইরাল হয়। ২০১৮ সালের ৭ মার্চ নারায়ণগঞ্জ বন্দর থানার রুপালি আবাসিক এলাকা থেকে সদর মডেল থানার এএসআই সরোয়ার্দি ও মাদকবহনকারী সাবিনা আক্তার রুনুকে ৪৯ হাজার পিস ইয়াবাসহ আটক করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। এসময় আটককৃতদের কাছ থেকে মাদক বিক্রির নগদ ৫ লাখ টাকাও উদ্ধার করা হয়। গোয়েন্দা পুলিশ বাদী হয়ে পুলিশের এএসআই আলম সারোর্দি ও সাবিনা আক্তারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে।
আদালতে এএসআই আলম সারোওয়ার্দি আদালতে দেয়া জবানবন্দীতে জানান, সাবিনাকে ৪৯ হাজার ইয়াবাসহ আটকের পর তিনি ওসি কামরুল ইসলামকে ফোন করেছিলেন। ওসি তাকে নিরাপদ স্থানে সরে যেতে বলেন। এরপর বন্দর ঘাটের কাছেই বাসা হওয়ায় তিনি আসামিসহ তার বাসায় চলে আসেন। পরে ওসি ৪৯ হাজার পিস ইয়াবা ও নগদ উদ্ধারকৃত ৫ লাখ টাকা রেখে আসামিসহ এসআই মোর্শেদের কাছে দিতে বলে। এরপরই এসআই মোর্শেদ আসামি রুনুকে নিয়ে বাসার নিচে যাওয়ার পর ওসি আমাকে ফোন করে আসামি ছেড়ে দিতে বলেন। আসামি ছেড়ে দেওয়ার আগে আমি আলামত ও টাকা রেখে দেই।
উদ্ধারকৃত ৪৯ হাজার ইয়াবা থেকে ৫ হাজার পিস ইয়াবা দিয়ে ওসির নির্দেশমতো জনি নামে একজনকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে আসি। রাতে জেলা ডিবি পুলিশ অভিযান চালিয়ে আলামত ও টাকা জব্দ করে। এ মামলায় ওসি কামরুলের নাম আসায় আদালতের নির্দেশে গত বছরের বছরের ৪ মার্চ সদর থানা থেকে প্রত্যাহার করে নেয়া হয় তাকে। পরে তাকে মামলার চার্জশিট থেকে অব্যাহতি দেয়া হলে ২ এপ্রিল পুনরায় তাকে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় পুনর্বহাল করা হয়। তিনি পরে ডিবি ও অন্যত্র বদলী হন।
জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার কর্মকর্তা (ডিআইও-১) ইকবাল হোসেন জানান, প্রথমে মামলার অভিযোগপত্রে (চার্জশিটে) ওসি কামরুল ইসলামকে অব্যাহতি দেয় সিআইডি। ফলে প্রত্যাহারের এক মাসের মাথায় ২ এপ্রিল আবারও একই পদে বহাল করা হয় তাকে। এরপর তিন মাস ওসির দায়িত্ব পালন করেন তিনি। পরে তাকে বদলি করে জেলা গোয়েন্দা শাখায় (ডিবি) আনা হয়। তবে বর্তমানে তিনি নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশে নেই। অন্য কোথাও পোস্টিং পেয়েছিলেন কিনা সে ব্যাপারে তিনি অবগত নন বলে জানান।
মামলায় সদর থানা পুলিশের কনস্টেবল আসাদুজ্জামান আদালতে জবানবন্দিতে বলেছিলেন,সরোয়ার্দির বাসায় রুনু ও রহমানকে দেখতে পাই। তিনি এ দুজনকে ইয়াবাসহ আটক করেছে। মাদকগুলো থানায় না এনে বাসায় আনার কারণ তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন। তিনি (এএসআই সারোওয়ার্দী) তাকে জানিয়েছিলেন, ওসি কামরুল তাকে আসামিসহ মাদকগুলো বাসায় রাখতে বলেছে।
গত ১২ আগস্ট সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাজিম উদ্দিন আল আজাদ মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করেন। তিনি তার তদন্তে ওসি কামরুল ইসলামের নাম বাদ দিয়ে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।
অপরদিকে মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি কনস্টেবল আসাদুজ্জামানের জামিন আবেদন পর্যালোচনাকালে বিষয়টি হাইকোর্টের দৃষ্টিতে আসে। এরপরই তদন্ত কর্মকর্তাকে তলব এবং এ বিষয়ে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়।
হাইকোর্টে দেওয়া ব্যাখ্যায় তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, দুজনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি ছাড়া পর্যাপ্ত তথ্য-প্রমাণ না পাওয়ায় ওসিকে আসামি করা হয়নি। তদন্ত কর্মকর্তার ব্যাখ্যার বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী ও এস এম শাহজাহানের মতামত গ্রহণ করে হাইকোর্ট।
তাঁরা আদালতকে বলেন, তদন্ত কর্মকর্তার প্রধান কাজ মামলার তথ্য ও সাক্ষ্য-প্রমাণ সংগ্রহ এবং সংরক্ষণ করা। তার কোনো ক্ষমতাই নেই মামলার তথ্য ও সাক্ষ্য-প্রমাণের বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নে সিদ্ধান্ত দেওয়ার। ফলে তদন্ত কর্মকর্তা ওসিকে আসামি না করার ব্যাপারে যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন সেটা আইনগতভাবে সঠিক নয়। পরে সিআইডি ওসি কামরুলকে সম্পৃক্ত করে চার্জশীট প্রদান করেন।
গত ২২ অক্টোবর তিনি নারায়ণগঞ্জের একটি আদালতে হাজির হলে আদালত তার জামিন না মঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন। আগামী ১ নভেম্বর ওসি কামরুল ইসলামের জামিন শুনানি হবে বলে জানিয়েছে আদালত সূত্র।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড