• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৭ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

বন্ধুকে পুড়িয়ে হত্যা: ঠাকুরগাঁওয়ে ৩ জনের মৃত্যুদণ্ড

  ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি

২৯ অক্টোবর ২০২০, ১৮:৫৩
আদালত
ছবি : সংগৃহীত

মোটরসাইকেল হাতিয়ে নেওয়ার পর দিনাজপুর জেলার চিরিরবন্দর উপজেলার রেজাউল ইসলাম নামে এক সহকর্মীকে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ভানোর ইউনিয়নে ডেকে এনে গলায় রশি পেঁচিয়ে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যার পর মরদেহ আগুনে পুড়িয়ে ওই মরদেহ গোপন করার চেষ্টার দায়ে তিনজনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত।

বৃহস্পতিবার দুপুর ৩টার দিকে এ মামলার রায় ঘোষণা করেন ঠাকুরগাঁও জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক তারিকুল কবির ।

মৃত্যুদণ্ডাদেশ প্রাপ্ত আসামিরা হলেন- নওগাঁ জেলার মান্দা থানার বারিল্যা উত্তরপাড়া গ্রামের মৃত আকবর আলীর ছেলে সুইট আলম, দিনাজপুর জেলার চিবিরবন্দর থানার দক্ষিণ পলাশবাড়ী গ্রামের মাহাতাব উদ্দীনের ছেলে মেকদাদ বিন মাহাতাব ওরফে পলাশ এবং ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গী থানার ভানোর সরকারপাড়া গ্রামের বজির উদ্দীনের ছেলে হাসান জামিল ।

মামলার বিবরণে জানা গেছে, এর আগে ২০১৫ সালে ৪ মার্চ অপহরণের পর মুক্তিপণের টাকা না পেয়ে দিনাজপুরের রেজাউল ইসলাম নামে এক যুবককে হত্যা করে লাশ পুড়িয়ে দেয় তার তিন বন্ধু। দীর্ঘ অনুসন্ধানের পর ওই হত্যা রহস্য উদঘাটনের পাশাপাশি তিনজনকে গ্রেফতার করে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব-১৩)।

২০১৫ সালের ওই চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডে তাদের নামে মামলা হয়। চলতি বছরের করোনাকালীন সময়ে ৭ জুলাই জালিয়াতির মাধ্যমে ভুয়া কাগজপত্র হাজির করে ভার্চুয়াল উচ্চ আদালত থেকে ৬ মাসের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন নিয়ে লাপাত্তা হয় মামলার আসামিদের একজন মো. হাসান জামিল।

বিষয়টি বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশের পর আদালতের নির্দেশে জড়িতদের বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় ফৌজদারি মামলা করেন সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের সহকারী রেজিস্টার (ফৌজদারি-২) মো. জাকির হোসেন পাটোয়ারী।

এরপর ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) জালিয়াত চক্রের সদস্য মুহুরি (আইনজীবীর সহকারী) মো. খলিল উদ্দিন (২২) ও বেলাল হোসেনকে (২৮) গ্রেফতার করে।

তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে বেলালকে গ্রেফতার করা হয়। তারা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছে। শাহবাগ থানার মামলায় হাসান জামিলকেও আসামি করা হয়েছে।

ডিবি জানায়, এ চক্রটি বড় অপরাধীদের টার্গেট করে। তাদের টাকার বিনিময়ে জামিন পাইয়ে দেয়ার টোপ দেয়। কয়েকটি ভাগে বিভক্ত হয়ে চক্রটি এ কাজ করে। এদের একটি গ্রুপ আসামি জোগাড় করে এবং চুক্তি করে। অন্যরা আদালতের আদেশের ন্যায় একই ধরনের কাগজপত্র তৈরি করে। সবশেষে ভুয়া তথ্য দিয়ে আইনজীবীদের মাধ্যমে আবেদন করায়।

এক্ষেত্রে আদালতের আদেশ, মামলার এজাহারসহ সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র এমনভাবে তৈরি করা হয়, যা প্রাথমিকভাবে দেখে বোঝার উপায় থাকে না যে এগুলো ভুয়া। তারা এমন আরও কয়েকটি অপরাধ সংঘটিত করেছে বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে ডিবির সিরিয়াস ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগের অর্গানাইজড ক্রাইম প্রিভেনশন টিমের সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. নাজমুল হক বলেন, চক্রটি ঠাকুরগাঁও জেলার দায়রা জজ আদালতের আদেশ জাল করে একজন আসামিকে জামিনে মুক্ত করায়। কাগজপত্রগুলো তৈরি হয় ঠাকুরগাঁওয়েই।

জামিন করিয়ে দেয়ার জন্য ৮৫ হাজার টাকায় চুক্তি হয়। সংশ্লিষ্ট আইনজীবী বিষয়টি জানতে পেরে আদালতকে অবহিত করলে এ বিষয়ে মামলা হয়। আশা করছি পুরো চক্রটি ধরা সম্ভব হবে।

তিনি জানান, অনেক সময় আইনজীবীদের অজান্তেও ঘটনাগুলো ঘটে। এজন্য আইনজীবীদের আদালতে তথ্য-প্রমাণ উপস্থাপনের ক্ষেত্রে আরও সচেতন হওয়া প্রয়োজন।

যেভাবে হয়েছিল রেজাউলের সেই চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ড: ২০১৫ সালের ৪ মার্চ বিকালে দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার আন্ধারমুহা গ্রামের ইদ্রিস আলীর ছেলে রেজাউল ইসলাম (১৮) তার নিজের মোটরসাইকেলসহ ঘুঘরাতলী নামক স্থান থেকে অপহরণ হন।

১০ মার্চ রাতে রেজাউলের ভাই শরিফুল ইসলামের মোবাইল ফোনে কল করে দুই লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে অপহরণকারীরা। এ ব্যাপারে রেজাউলের বাবা থানায় জিডি করে এবং র‌্যাব দিনাজপুরকে জানায়। র‌্যাব সম্ভাব্য আসামিদের ফোন নম্বরগুলো ট্র্যাকিং করে ঘটনার রহস্য উদঘাটন ও ভিকটিম রেজাউলকে উদ্ধারের কার্যক্রম শুরু করে।

দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, ঢাকা, গাজীপুর, নওগাঁ, রাজশাহী এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার বিভিন্ন এলাকায় দিনাজপুর র‌্যাব ক্যাম্পের অনুসন্ধান টিম দীর্ঘ আড়াই মাস গোয়েন্দা কার্যক্রম অব্যাহত রাখে। উদঘাটন এবং জড়িতদের শনাক্ত করার পর তিনজনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। গ্রেফতারকৃতরা হল- সুইট আলম, হাসান জামিল ও মেকদাদ বিন মাহাতাব ওরফে পলাশ।

গ্রেফতারকৃতরা জানিয়েছে, অপহরণের পর মুক্তিপণের টাকা না পেয়ে ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ভানোর গ্রামে নিয়ে তারা রেজাউলকে হত্যা করে। এরপর তারা লাশ পুড়িয়ে ফেলে।

দীর্ঘ পাঁচ বছর পর সেই আলোচিত মামলার রায় হল আজ, এতে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে রেজাউলের বাবা মা সহ উপজেলাবাসী।

রাষ্ট্রপক্ষে সরকারি কৌসুলি অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ এবং আসামি পক্ষে অ্যাডভোকেট মোস্তাক আলম টুলু মামলাটি পরিচালনা করেন।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড