সারাদেশ ডেস্ক
যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার অগ্নিদগ্ধ আলোচিত সেই শিশু মারা গেছে। ১৬ দিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে শুক্রবার সে মারা যায়। আল-আমিন নামে ওই শিশু মৃত্যুবরণ করেছে তার নানির বাড়িতে।
‘ধর্ষণের ফসল’ পাঁচ বছর বয়সী ওই শিশুটি রহস্যজনকভাবে ৭ অক্টোবর অগ্নিদগ্ধ হয়। ঘটনার সময় শিশুটি তখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন ছিল।
উপজেলার শংকরপুর ইউনিয়নের বাকুড়া গ্রামে গভীর রাতে এ অগ্নিদগ্ধের ঘটনাটি ঘটে। অথচ রহস্য উদঘাটন হয়নি এর পেছনের ঘটনার।
শিশুটির নানির দাবি, তার জন্মদাতা (ধর্ষণে অভিযুক্ত) আগুনে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা করেছেন। অভিযুক্ত তা অস্বীকার করেন।
ঝিকরগাছা থানার বাঁকড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের এসআই হাফিজুর রহমান শিশুর মৃত্যুর বিষয় নিশ্চিত করে জানান, শুক্রবার শিশুটির লাশ ময়না তদন্ত করিয়েছি। মামলার তদন্ত করছে পিবিআই। বিস্তারিত তদন্ত সাপেক্ষে বলা যাবে।
প্রসঙ্গত, অগ্নিদগ্ধের ঘটনার পরের দিন শিশুকে ভর্তি করা হয় যশোর সদর হাসপাতালে। কিন্তু সারা শরীর পুড়ে যাওয়ায় তাকে ৯ অক্টোবর রেফার করা হয় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। শিশুটিকে সেখানে চিকিৎসা নিয়ে কয়েকদিন আগে তার নানি বাড়িতে নিয়ে আসেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত শিশুটি বাঁচতে পারেনি।
স্থানীয়, পুলিশ ও মামলা সূত্রে জানা গেছে, যে শিশুটি গায়ে আগুন লেগে মারা গেছে তার জন্ম একটি ধর্ষণের ফলে। প্রায় ছয় বছর আগে ঘটে এ ঘটনা। তখন এ নিয়ে মামলা করা হয়। মামলার রায়ের দিন নির্ধারিত হয়েছে আগামী ১ নভেম্বর। ইতিমধ্যে আদালত তার সব কার্যক্রম শেষ করেছে। ডিএনএ পরীক্ষাও হয়েছে। তাতে জন্মদাতা হিসেবে ধর্ষণে অভিযুক্ত ৬৮ বছরের দাউদকে নিশ্চিত করা হয়েছে।
আদালত মধ্যবর্তী আদেশে শিশুকে খোরপোশসহ নির্যাতিতাকে পাঁচ লাখ টাকা দিতে বলেছে। এ সব বিষয় নিশ্চিত করেছেন ঝিকরগাছা থানার ওসি আবদুর রাজ্জাক, অভিযুক্ত দাউদ সরদার ও পুড়ে যাওয়া শিশুটির নানি।
তবে আগুন লাগার বিষয়টি নিয়ে শিশুটির নানি ও অভিযুক্ত দাউদ পরস্পর বিরোধী কথা বলেছিলেন।
শিশুটির নানি জানিয়েছিলেন, নাতিকে নিয়ে একসাথেই ঘুমিয়েছিলাম। রাত ১টার দিকে শিশুটির চিৎকারে তার ঘুম ভাঙে। বিছানার একপাশে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলতে দেখেন। তাড়াতাড়ি পানি দিয়ে আগুন নিভিয়ে ওকে নিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যান তিনি।
শিশুটির নানির ধারণা দাউদই শিশুটিকে হত্যার জন্যে এমন ঘটনা ঘটিয়েছেন।
দাউদ কেন এমন ঘটনা ঘটিয়েছেন- এমন প্রশ্নের উত্তরে শিশুটির নানি বলেন, সম্পত্তির ব্যাপার আছে। পাশাপাশি দাউদের ছেলেমেয়েরাও বড় বড় চাকরি করে। এই বাচ্চা বেঁচে থাকলে তাদের মান-সম্মানের ব্যাপার। এ জন্যে হত্যার চেষ্টা করতে পারেন।
তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে ৬৮ বছরের দাউদ বলেছিলেন, 'ওরা যশোর থাকে। আমি গ্রামে থাকি। ওরা কখন এসেছে তা আমি জানি না। আগামী ১ নভেম্বর মামলার রায়। এর ঠিক আগ মুহূর্তে কেন এমন ঘটনা ঘটাতে যাব? আদালতের অনুকম্পা পেতে হয়তো নানিই এমনটি করেছেন।'
ঝিকরগাছা থানার ওসি আবদুর রাজ্জাক জানিয়েছিলেন, তিনি সাংবাদিকদের কাছে বিষয়টি জেনে পুলিশ পাঠিয়েছিলেন। এত বড় একটা ঘটনায় মামলা না করা বা পুলিশকে না জানানোর বিষয়টির ব্যাপারে তিনি সন্দেহ পোষণ করেন।
তিনি বলেন, আগুনে পুড়ে যাওয়া শিশুটি থাকতো নানির সঙ্গে। তার মা থাকেন অন্য খানে অন্য স্বামীর সঙ্গে। আর দাউদ থাকেন তার সংসার নিয়ে। এ অবস্থায় কেন ঘটলো এমন ঘটনা তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড