• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

মুন্সীগঞ্জে বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষে বাড়ছে আগ্রহ

  মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি

৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১১:০৭
মাছ চাষের জন্য ট্যাংকি তৈরি করা হচ্ছে (ছবি : দৈনিক অধিকার)

মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ী উপজেলায় বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ করে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন যুবক মাহবুব মোল্লা। বেসরকারি একটি কোম্পানিতে চাকরি করার পাশাপাশি বায়োফ্লকের ওপর প্রশিক্ষণ নিয়ে এখন বাড়ির উঠানে মাছ চাষ করছেন। তাকে উৎসাহ দিয়ে সার্বিক সহযোগিতা করেন বাবা মোতালেব মোল্লা। মাহবুব মোল্লার দেখাদেখি উদ্বৃদ্ধ হয়ে এলাকার শিক্ষিত বেকাররা বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে চাকরির পেছনে না ছুটে স্বাবলম্বী হয়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে এমন প্রত্যাশা তাদের।

২০১৮ সালের শেষ দিকে পাশের জেলা নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষের ওপর প্রশিক্ষণ নেন মাহবুব। প্রশিক্ষণকে বাস্তবে রূপান্তরিত করতে ২০১৮ সালের শেষ দিক থেকে কার্যক্রম শুরু করেন। বাড়ির উঠানে সামান্য জায়গায় ইট, বালি ও সিমেন্ট দিয়ে ৩০ হাজার লিটার পানি ধারণ ক্ষমতার ৫টি হাউজ (ট্যাংকি) ও একটি ১০ হাজার লিটার পানি ধারণ ক্ষমতার হাউজ (ট্যাংকি) তৈরি করা হয়। এরপর নিরাপত্তার জন্য টিনের বেড়া ও ছাউনি দেয়া হয়। হাউজে সূর্যের আলো পড়তে ছাউনিতে লাগানো হয়েছে স্বচ্ছ টিন। হাউজে পানি সরবরাহের জন্য স্থাপন করা হয়েছে সাবমাসিবল পাম্প। এছাড়া হাউজে অক্সিজেন সরবরাহের জন্য ছয়টি মোটর এবং বিদ্যুৎ নিরবচ্ছিন্ন রাখতে জেনারেটর রাখা হয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে তার খরচ পড়েছে প্রায় ৮ লাখ টাকার মতো। মাহবুবের এ কাজে অর্থের জোগান দিয়েছেন তারা বাবা মোতালেব মোল্লাসহ তার নিকট বন্ধুরা। সবকিছু প্রস্তুত করার পর গত বছরের জানুয়ারি থেকে মাছ চাষ শুরু করা হয়েছে।

এতে একদিকে যেমন দেশি মাছের চাহিদা পূরণ হচ্ছে অন্যদিকে আমিষের জোগান দেয়া সম্ভব হচ্ছে। প্রতি বছর পুকুর খনন করতে গিয়ে যেমন কৃষিজমির পরিমাণ কমছে। এ পদ্ধতিতে চাষ করতে গিয়ে যেমন নতুন করে পুকুর খননের প্রয়োজন হবে না। তেমনি খাল-বিল কিংবা নদী-নালারও প্রয়োজন হয় না। বাড়ির উঠানে স্বল্প জায়গায় ও অল্প পুঁজিতে এ পদ্ধতিতে মাছ চাষ করা সম্ভব।

উদ্যোক্তা মাহবুব মোল্লা বলেন, 'বায়োফ্লক পদ্ধতিতে বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ নিই। তারপর ইউটিউবসহ বিভিন্ন বই পড়ে আগ্রহ আরও বেড়ে যায়। এরপর সাবেক এক মৎস্য কর্মকর্তার পরামর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে পরিকল্পনা মোতাবেক হাউজগুলো তৈরি করা হয়। এ কাজে পরিবারের পাশাপাশি বন্ধুরা অর্থের যোগান দিয়েছেন। হ্যাচারি থেকে শিং, কই, তেলাপিয়া মাছের রেনু সংগ্রহ করে একটি হাউজে পরিষ্কার পানিতে ছাড়া যায়। রেনু ছাড়ার ৭দিনের মধ্যে পানি জীবাণুমুক্ত এবং 'প্রবায়োটিক' এর মাধ্যমে পানি তৈরি করা হয়। এরপর নিয়মিত ফিড খাবার এবং পানির গুণগতমান পরীক্ষা করা হয়।'

মাহবুব মোল্লার দেখাদেখি এই উপজেলার দিঘীরপাড় এলাকার তৌহিদ খাঁন প্রবাস থেকে ফিরে বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ করার লক্ষ্যে ১০ হাজার লিটার পানি ধারণ ক্ষমতার দুইটি হাউজ (ট্যাংকি) তৈরি করেছেন।

তৌহিদ খাঁন বলেন, 'স্থানীয় মাহবুব মোল্লার দেখাদেখি আমি বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষে আগ্রহ সৃষ্টি হয়। পরে তার পরামর্শে আমি এই হাউজগুলো তৈরি করেছি। মুন্সীগঞ্জে সরকারি ভাবে বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষের ওপর প্রশিক্ষণ নেওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই। তাই এখনো মাছ হাউজে ছাড়ছি না। প্রশিক্ষণ নিয়ে পুরোদমে মাছ চাষ করা শুরু করবো।'

এ বিষয়ে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা সুনীল মণ্ডল দৈনিক অধিকারকে বলেন, মুন্সীগঞ্জে এখনো বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষের ওপর কোনো ধরনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেই। এ বিষয়টি নিয়ে আমরা বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা নিরীক্ষা করছি, সফল হলেই প্রশিক্ষণ সহ অন্যান্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

তিনি আরও বলেন, 'জেলায় ইতোমধ্যে বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ ব্যাপক সাড়া পড়েছে। অনেক যুবক কীভাবে এই চাষ করা হয় জানতে মৎস্য কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করেছেন। আমরা অতিদ্রুত এই বিষয়ে সার্বিক ব্যবস্থা গ্রহণ করব।'

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড