• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩১ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

১০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ বৃষ্টিতে ঠাকুরগাঁওয়ে জনজীবন বিপর্যস্ত

  ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি

২৭ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৯:১২
ঠাকুরগাঁও
জেলার প্রায় সবকটি উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে ঠাকুরগাঁওয়ের আশপাশের মানুষ ঘর থেকে বের হতে পারছেন না। শুক্র ও শনিবার ছুটির দিনে সকাল ও দুপুরে গ্রামেগঞ্জে এমনকি শহরের পথে ঘাটে মানুষের জনসমাগম ছিল খুবই কম। রবিবার বেলা ১২ টার পর কিছুক্ষণের জন্য রোদ উঠলেও ইতিমধ্যেই নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় জেলার প্রায় সবকটি উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে হাজার হাজার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। এ সময়ের বৃষ্টিকে গত ১০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ বলছে ভুক্তভোগীরা।

এদিকে শহরে ডুবে গেছে বড়মাঠের সবজি বাজার, পথ ঘাট, নিম্ন এলাকার বাড়িঘর, ট্রেজারি অফিসে যাওয়ার জনবহুল সড়কসহ অন্যান্য সড়ক। এছাড়া দিন-মজুররা কাজে যেতে না পারায় পরিবার-পরিজন নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন। ভারী বর্ষণের ফলে স্বাভাবিক জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।

এছাড়া বৃষ্টিতে অধিকাংশ কাঁচা-পাকা সড়ক ভেঙ্গে বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে ঠাকুরগাঁও-পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও-দিনাজপুর মহাসড়কের অসংখ্য স্থানের ঢালাই উঠে গিয়ে গভীর গর্ত তৈরি হওয়ায় তা যেন মরণ ফাঁদে পরিণত পরিণত হয়েছে। এসব গর্তের কারণে এরমাঝে বেশ কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটেছে এবং অসংখ্য মোটরযানের যান্ত্রিক ক্ষতি হয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আফতাব হোসেন জানান, গত তিন দিনে ১৪৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। লাগাতার বৃষ্টিতে ক্ষতি হয়েছে সবজি, নিচু এলাকার ধানক্ষেত ডুবে গেছে, মাটিতে শুয়ে পড়েছে আখ ক্ষেত। এতে কৃষকের ক্ষতি ছাড়াও জেলার একমাত্র ভারী শিল্প ঠাকুরগাঁও সুগার মিলের উৎপাদন বিপর্যয়ের আশঙ্কা করা হচ্ছে।

প্রবল বৃষ্টিপাতে নদ-নদীর পানি বিপদসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। তলিয়ে গেছে ফসলের খেত।

ঠাকুরগাঁও পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম জানান, জেলার টাঙ্গন, নাগর ও বুজরুক নদীর পানি বিপদসীমার কাছাকাছি দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে যেকোনো সময় তা বিপদসীমা অতিক্রম করবে।

শনিবার জেলা সদরে ৮৬ মিলি মিটার ও বালিয়াডাঙ্গীতে ৭০ মিলি মিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

ঠাকুরগাঁওয়ে বন্যা কবলিত অঞ্চলগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো- ঠাকুরগাঁও পৌর এলাকার খালপাড়া, নিশ্চিন্তপুর ডিসি বস্তি, মুন্সিপাড়া, কলেজপাড়া, নয়াবস্তি শেনুয়াপাড়া এবং সদর উপজেলার সালন্দর, বরুনাগাঁও এবং কুমারপাড়া।

এছাড়া রানীশংকৈল, পীরগঞ্জ ও বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার নিম্নাঞ্চলের বেশ কিছু গ্রামও বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে বলে উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ আফতাব আহমেদ জানান, অবিরাম বৃষ্টি ও মেঘলা আবহাওয়ার জন্য আমন খেতে পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে। পোকা দমনের জন্য ‘সিস্টেমেটিক ইন্সেক্টিসাইড’ কীটনাশক স্প্রে করার জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। টানা বৃষ্টিতে আগাম শীতকালীন সবজিরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে জানান তিনি।

এদিকে টানা বৃষ্টির কারণে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার নদী-নালার পানি বৃদ্ধি পেয়ে পৌরসভাসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। ডিসি বস্তিসহ টাঙ্গন নদীর কাছে বসবাসকারী মানুষজনকে জেলা শিল্পকলা একাডেমী ভবনে স্থানান্তর করা হয়েছে।

শনিবার তাদের মাঝে পরিবার প্রতি ১০ কেজি করে চাল বিতরণ করেছেন জেলা প্রশাসক। এ সময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক), ইউএনও, ঠাকুরগাঁও সদর এবং সংশ্লিষ্ট মহিলা কাউন্সিলর উপস্থিত ছিলেন।

জেলা প্রশাসক ড. কেএম কামরুজ্জামান সেলিম বলেন, নদীর তলদেশের কয়েকটি অঞ্চল জলাবদ্ধ হয়েছে। বাসিন্দাদের উদ্ধার করে জেলা শিল্পকলা একাডেমী ভবনসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) বন্যার কবলে পড়া পরিবারের তালিকা দেয়ার কথা বলা হয়েছে। এসব পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দেয়ার জন্য ইতোমধ্যে ১২ লাখ টাকা ইউএনওদের বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। কোভিড পরিস্থিতিতে বিভিন্ন ত্রাণের ইউনিটগুলোকে বন্যার্তদের সহায়তার জন্য বিশেষভাবে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড