• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

মেঘনার পানিতে ভিজে যেতে হয় গজারিয়া!

  মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি

২৭ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৯:৩৭
ট্রলারে নদী পার হচ্ছেন যাত্রীরা (ছবি : দৈনিক অধিকার)

এখন ঘোর বর্ষা, উত্তাল নদী। এ সময় নদী ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে। চারদিকে থৈ থৈ পানি। এ দিকে বৈরি আবহাওয়ার কারণে বর্তমানে উত্তাল রয়েছে মেঘনা নদী। এই মেঘনা নদীর পানিতে না ভিজে পারাপার হতে পারে না গজারিয়া উপজেলাবাসী। কেননা উত্তাল মেঘনার ঢেউ আঁচড়ে পড়ছে যাত্রীবাহী ট্রলারগুলোতে। এতে কাকভেজা হচ্ছে এই নৌ-পথের যাত্রীরা।

স্থানীয়রা জানায়, সড়ক অবকাঠামো ও সার্বিক যোগাযোগ ব্যবস্থার দুরবস্থার কারণে উন্নত জীবনমান থেকে বঞ্চিত মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলা। মেঘনা নদীর উপর সেতু না থাকায় সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন রয়েছে নদী বেষ্টিত গুরুত্বপূর্ণ এই উপজেলাটি। জেলা সদরের সঙ্গে গজারিয়া উপজেলার যোগাযোগের একমাত্র বাহন হচ্ছে ট্রলার। প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মেঘনা পার হচ্ছে হাজার হাজার মানুষ। ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। এমনকি গজারিয়া থানার পুলিশকে আসামি আনা-নেয়াও করতে হয় ট্রলারের মাধ্যমে। ধলেশ্বরী-মেঘনা নদী পথে ট্রলারে করে ২ উপজেলাবাসীকে আসা-যাওয়া করতে হয়। জেলা সদরের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ না থাকায় জেলার অপর ৪টি উপজেলায়ও গজারিয়াবাসীর যোগাযোগে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত।

সরেজমিনে মুন্সীগঞ্জ-গজারিয়া নৌপথে গিয়ে দেখা যায়, ছোট ছোট ইঞ্জিনচালিত ট্রলার করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পার হচ্ছেন এই নৌপথের হাজার হাজার যাত্রী। এ সময় মেঘনা নদীর উত্তাল ঢেউ বার বার যাত্রীবাহী ট্রলারে আচড়ে পড়ছে। যাত্রীরা পানির থেকে রক্ষা পেতে একদিকে জড়ো হওয়ার ফলে যাত্রীবাহী ট্রলারগুলো একদিকে হেলে পড়ছে। এতে যে কোনো মুহূর্তে ট্রলারটি ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এই পথের যাত্রী ফয়সাল হোসেন বলেন, মুন্সীগঞ্জ-গজারিয়া পথে একমাত্র বাহন এই ইঞ্জিন চালিত ট্রলার। গজারিয়াবাসী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে উত্তাল ঢেউ উপেক্ষা করে তাদের নিত্যনামিত্ত কর্ম সারতে মুন্সীগঞ্জে আসেন। মুন্সীগঞ্জ শহরে তাদের উৎপাদিত শাক-সবজি ও পণ্যদ্রব্য বিক্রি করনে। এ ছাড়া গজারিয়া উপজেলার সকল আইনি ও অফিসিয়াল কার্যক্রম মুন্সীগঞ্জ শহরে। এ সব জরুরী প্রয়োজনে ওই উপজেলাবাসী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পার হচ্ছেন মেঘনা নদী। কিন্তু ভরা বর্ষায় এই ছোট্ট ট্রলার গুলোর দৃশ্য কেমন জেনো ভয়ানক মনে হয়। উত্তাল মেঘনার বুকে ঢেউয়ের তালে যাত্রী বোঝাই ট্রলারগুলোকে ঝুঁকিপূর্ণ মনে হয়। যদিও তারা বলে অতিরিক্ত যাত্রী ট্রলারে পরিবহন করেন না। তবে টলারগুলোতে কোনো ধরনের নিরাপত্তা সরঞ্জাম নেই।

সাইফুল ইসলাম নামের এক যাত্রী বলেন, জেলার ৬টি উপজেলার মধ্যে জেলা শহরের পূর্বাঞ্চলের গজারিয়াকে মেঘনা নদী বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে। এতে জেলার ৫টি উপজেলার সঙ্গে গজারিয়ার যোগাযোগ ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। সকাল থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত শহরের হাটলক্ষীগঞ্জ এলাকার বেড়িবাঁধ এলাকা থেকে গজারিয়ায় প্রবেশের জন্য ট্রলার বা ইঞ্জিনচালিত নৌকা যাত্রী পারাপার করে থাকে। মুন্সীগঞ্জ সদরে আসতে গজারিয়ার ইস্মানিরচর ও হোসেন্দি বাজার এলাকা থেকে ট্রলার ছাড়ে। কিন্তু বর্ষা এলে মেঘনা উত্তাল হয়ে পড়ে। সঙ্গে দেখা দেয় ঝড়ো হাওয়া। এতে এ নৌ-পথের যাত্রীরা পড়েন চরম ভোগান্তিতে।

অন্যদিকে, মেঘনা নদীতে মুন্সীগঞ্জ ও গজারিয়াবাসীর ফেরি ব্যবস্থা চালু করার দাবি থাকলেও তা দীর্ঘদিনেও কার্যকর হয়নি। নদীপথ ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় অনেকেই দীর্ঘ পথ অতিক্রম ও অতিরিক্ত অর্থ খরচ করে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ হয়ে সড়ক পথে মুন্সীগঞ্জে আসা যাওয়া করে থাকেন। গত বছরের ৩ জুন ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গণভবন থেকে গজারিয়ার মেঘনা নদীতে ফেরি সার্ভিসের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর কয়েকদিন পরেই ফেরি সার্ভিসটি বন্ধ হয়ে যায়। এলাকাবাসী বন্ধ হওয়া ফেরি সার্ভিসটি পুনরায় চালু করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাচ্ছেন মুন্সীগঞ্জ সদর থেকে গজারিয়ার উপজেলায় যাতায়াত করা বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ।

এ বিষয়ে গজারিয়া নৌ-পুলিশ ইউনিটের ইনচার্জ মো. আব্দুল হান্নান মিয়া দৈনিক অধিকারকে বলেন, 'এ সময় মেঘনা নদীতের প্রচুর পরিমাণে ঢেউ রয়েছে। যে কোনো মুহূর্তে দুর্ঘটনা ঘটারও সম্ভাবনাও থাকছে। মুন্সীগঞ্জ-গজারিয়া নৌ-পথের ট্রলারগুলোকে বৈরী আবহওয়ার সময় সার্ভিস বন্ধ রাখার জন্য নির্দেশনা দেওয়া রয়েছে। তারা আবহাওয়ার ওপর নির্ভর করে ট্রলার ছাড়ছে। এছাড়া ট্রলারগুলোতে ৫টি লাইফজ্যাকেট ও ৫টি বয়লা রয়েছে।'

এ ব্যাপারে মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো.মনিরুজ্জামান তালুকদার বলেন, 'বিষয়টি আমরা দেখবো। যাত্রীরা যেনো নিরাপদে গন্তব্যস্থানে যেতে পারে তার জন্য দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।'

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড