• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

কুষ্টিয়ার সুস্বাদু তিলের খাজা

  মাহাতাব উদ্দিন লালন, কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

১৬ জুলাই ২০২০, ১২:২০
কুষ্টিয়া
কুষ্টিয়ার সুস্বাদু তিলের খাজা

কুষ্টিয়ার সুস্বাদু তিলের খাজার খ্যাতি অনেক। জেলার সীমানা ছাড়িয়ে বেশ কয়েক বছর ধরে কুষ্টিয়ার তিলের খাজা দেশের বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে। চিনি, তিল ও দুধ দিয়ে তৈরি করা হয় এই খাজা। ৪৬ বছর ধরে কুষ্টিয়া শহরের মিলপাড়ায় কয়েকটি কারখানায় সব মৌসুমে এ খাজা তৈরি হয়ে আসছে। হাতে তৈরি খাজা রাতে তৈরি হয়ে পরের দিন সকাল থেকে বাজার, বাসস্ট্যান্ড এলাকাতে বিক্রি হয়। কুষ্টিয়া শহরের মিলপাড়ায় রয়েছে একাধিক কারখানা। প্রতি কড়াইয়ে ৭ কেজি চিনি, পানি মেশানো দুধ আধা লিটার, পানি ৪ লিটার, দেড় কেজি তিল আর প্রয়োজনমতো এলাচ দেওয়া হয়। এতে প্রায় ৮ কেজি খাজা হয়।

কুষ্টিয়ার তিলের খাজা বর্তমানে ক্ষুদ্র শিল্পে পরিণত হয়েছে। সারা বছর তিলের খাজা পাওয়া যায়। এটি তিল হতে উৎপাদন হয়। শীত মৌসুমে তিল চাষ হয় তাই শীত কালের, তিলের খাজার অন্য রকম কদর রয়েছে। ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত চলে তিলের খাজা মৌসুম। কুষ্টিয়ার হাজারো ঐতিহ্যের মধ্যে একটি তিলের খাজা। কুষ্টিয়ার তিলের খাজার নাম শুনলে জিভে জল আসে না এমন লোকের সংখ্যা কমই আছে। এক সময় শুধু স্থানীয় চাহিদা পূরণের লক্ষে তিলের খাজা তৈরি করা হতো। আর তাইতো দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ নাম শুনলেই পরিবারের জন্য কিনে নিয়ে যান এই কুষ্টিয়ার তিলের খাজা।

কুষ্টিয়ার তিলের খাজা পায়চারি দামে কিনে তা বিভিন্ন জায়গায় খুচরা বিক্রয় করছে খুচরা ব্যবসায়ীরা। এতে সামান্য কিছু লাভ হয় বলে জানান তারা। তার পরেও কুষ্টিয়ার তিলের খাজা বিক্রি করে অবাদেই স্ত্রী সন্তান নিয়ে সুখেই দিন কাটাচ্ছেন তারা।

এসব ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য ব্যাংক প্রতিষ্ঠান থেকে আর্থিক সুবিধাও সৃষ্টি করা হলে আরো এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। আর এ কারণে সম্ভাবনা সত্বেও প্রসার ঘটছে না এসব ক্ষুদ্র শিল্প প্রতিষ্ঠানের। স্বাধীনতার পরে দেশের অনেক কিছু বদলালেও, বদলায়নি এ শিল্পের সাথে জড়িত শিল্পীদের ভাগ্য। তিলের খাজা তৈরি শিল্পীদের সাথে কথা বললে এমনটিই জানান তারা। ব্যবসার জন্য যথেষ্ট পুঁজি প্রয়োজন। ব্যবসা বড় হলে এ পেশার সাথে নিয়োজিত কয়েক হাজার মানুষ’র কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হত। কুষ্টিয়ার তিলের খাজা তৈরি ও বিক্রয়ের সাথে নির্ভর করছে কুষ্টিয়ার ও বাইরের জেলার কয়েক হাজার পরিবারের জীবন-জীবিকা। এ শিল্পটিকে আরও এগিয়ে নিতে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন বলে মনে করা হয়।

কুষ্টিয়ার সুস্বাদু তিলের খাজা তৈরি করছে শ্রমিকেরা

কুষ্টিয়ার তিলের খাজার ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়, ভারতীয় উপমহাদেশের সময়ে এর আবির্ভাব ঘটে কুষ্টিয়ায়। জানা গেছে, এ অঞ্চলের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে পাল সম্প্রদায়ের লোক এ উপাদেয় খাদ্যটি তৈরি করত। ভারত, পাকিস্তান বিভক্ত হবার আগে শহরের দেশওয়ালী পাড়া এলাকার বেশ কয়েকটি পরিবার তিলের খাজা তৈরি করত। এর পর থেকেই কুষ্টিয়ায় আস্তে আস্তে তিলের খাজার প্রসার ঘটতে থাকে।

৭১’র পর থেকে কুষ্টিয়া শহরের চর মিলপাড়ায় গড়ে ওঠে তিলের খাজা তৈরির কারখানা। তখন থেকেই ক্রমে কুষ্টিয়ার তিলের খাজার সুনাম ছড়িয়ে পড়ে দেশে জুড়ে। কুষ্টিয়ার বিখ্যাত ১নং নিউ স্পেশাল ভাই ভাই তিলের খাজা নামে ঢাকা, খুলনা, রাজবাড়ী, সৈয়দপুর এবং কুষ্টিয়ায় তৈরি হচ্ছে তিলের খাজা। তিলের খাজা তৈরির প্রধান উপকরণ তিল ও চিনি। চুলায় চাপানো বড় লোহার কড়াইয়ের মধ্যে চিনি দিয়ে গণগণে আগুনে জাল দিয়ে তৈরি হয় সিরা। নির্দিষ্ট তাকে আসার পর নামানো হয় চুলা থেকে। হালকা ঠাণ্ডা হলে, চিনির সিরা জমাট বেধে যায়, তখন শিং এর মত দো-ডালা গাছের সাথে হাতে টানা হয় জমাট বাধা চিনির সিরা। এক পর্যায়ে বাদামী থেকে সাদা রঙে পরিণত হলে কারিগর বিশেষ কায়দায় হাতের ভাজে ভাজে টানতে থাকে। তখন এর ভিতরে ফাঁপা আকৃতির হয়। সিরা টানা শেষ হলে রাখা হয় পরিষ্কার স্থানে। নির্দিষ্ট মাপে কেটে তাতে মেশানো হয় খোসা ছাড়ানো তিল। এভাবেই তৈরি হয়ে গেল তিলের খাজা। পরে এগুলি প্যাকেটজাত করে চালান দেয়া হয় দেশের বিভিন্ন স্থানে।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড