• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৫ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

'নলকূপ তলিয়ে যাওয়ায় টানা ৪দিন বন্যার পানি পান করছি'

সন্তানদের খাওয়াচ্ছি চাউলের গুড়া

  হুমায়ন কবীর সূর্য, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি

১০ জুলাই ২০২০, ১৩:৪৬
কুড়িগ্রাম
কুড়িগ্রামে বন্যায় অসহায় পরিবার

দেশের পিছিয়ে পরা জেলা কুড়িগ্রামের উপর দিয়ে বইছে বন্যার প্রভাব। একদিকে বন্যা আর অপরদিকে নভেল করোনা ভাইরাসের কারণে ভোগান্তিতে পরেছে জেলার শিশু, বৃদ্ধ, প্রতিবন্ধী ও গর্ভবতী নারীরা। মহামারীর প্রভাবে কর্ম সংকটে ভোগা কর্মজীবী শ্রমিকদের দৈনন্দিন আয়-রোজগারের পথ রুদ্ধ হয়ে যাওয়ায় পুষ্ঠিহীনতা ও স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে এসব পরিবারের লোকজন। ফলে সরকারের স্বাস্থ্যসেবার উন্নতিতে ঘাটতিতে থেকে যাবে এ জেলার মানুষ।

কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নের বাবুরচর গ্রামের পরিবার প্রধান রুপালী বেগম তার ছোট দু’সন্তান, শয্যাশায়ী বাবা আর বৃদ্ধ মাকে নিয়ে নলকূপ তলিয়ে যাওয়া চলতি বন্যায় টানা চারদিন বন্যার পানি পান করেছেন। বাবার জন্য কোন চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারেন নি তিনি। কুড়িগ্রাম সদরের চর ভেলাকোপা গ্রামের ৯ মাসের গর্ভবতী অটো চালক মেহেদীর স্ত্রী মুক্তা খোলা বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে। একই গ্রামের প্রতিবন্ধী জসিমকে নিয়ে আশংকায় দিন কাটে মা জোসনা বেগমের। এমন বিরূপ পরিস্থিতিতে করোনার কথা ভুলে গেছে সবাই। বন্যায় স্বাভাবিক জীবন ব্যহত হওয়ায় অনেকে ত্রাণের আশায় বসে থাকলেও বন্যা কবলিত শিশু, বৃদ্ধ, প্রতিবন্ধী ও গর্ভবতী নারীদের নিয়ে আলাদাভাবে ভাবছেন না কেউই। সামান্য তিন বেলা খাবার জোটাতে যারা প্রকৃতির সাথে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন তাদের জন্য পুষ্টিকর খাবারের চিন্তা করা যেন আকাশ কুসুম স্বপ্নের মত।

এদিকে হাতিয়া ইউনিয়নের চরবাগুয়া গ্রামের ইয়াসমিন-আবু সাঈদ দম্পতির ঘর আলো করে এই বন্যায় দু’যমজ সন্তান বাবা-মায়ের কোল জুড়ে এসেছে। ২৬জুন বন্যাকালিন সময়ে সিজার করতে গিয়ে জমানো সব অর্থ খুইয়েছে এই দম্পতি। এখন দু’সন্তান ও মাকে পর্যাপ্ত খাবার দিতে না পেরে বুক ফেটে যাচ্ছে আবু সাঈদের। একদিকে ঔষধ-পথ্যাদি অপরদিকে পুষ্টিকর খাবার। এই চরে এসব কোথায় পাবেন তিনি।

অপরদিকে চরগাবুরজান গুচ্ছগ্রামের অপর যমজ দম্পতি রিকশাচালক মঞ্জু ও খাদিজা ৭ মাসের দু’যমজ সন্তান নিয়ে চরম ভোগান্তির মধ্যে রয়েছেন। হাতে কাজ না থাকায় সংসারে যোগান দেয়া যাচ্ছে না। ফলে ঠিকমতো খাবার না পেয়ে সন্তানরা কান্নাকাটি করে। দুধ কিনে খাওয়ার সামর্থ্য তাদের নেই। ফলে বাধ্য হয়ে সন্তানদের চালের গুড়া খাওয়াচ্ছেন।

একই অবস্থা গাবুরজান গুচ্ছগ্রামের আমিন-রাসিদা দম্পতির। করোনা ও বন্যার কারণে বাড়িতে হাত গুটিয়ে বসে আছেন। সংসারে দু’মাসের কন্যা সন্তান ও তার মায়ের জন্য আলাদা কিছু কিনে দেয়ার সামর্থ্য তার নেই। পুষ্টিহীনতায় মায়ের বুকের দুধ ঠিক মতো পাচ্ছে না নবজাতকটি।

যমজ দম্পতির বাবা আবু সাঈদ দম্পতি জানান, বন্যার মধ্যেই সিজার করতে জমানো অর্থ এবং ধারদেনা করে প্রায় ১৫হাজার টাকা খরচ হয়েছে। বর্তমানে হাতে কাজ কর্ম না থাকায় সন্তানের জন্য দুধ কেনা বা পোয়াতির জন্য ওষুধ এবং ভাল খাবার দেয়া দু:সাধ্য হয়ে পড়েছে। এতে করে মা-সন্তান দু’জনেই পুষ্টিহীনায় ভুগছে।

হাতিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আবুল হোসেন জানান, করোনা এবং বন্যায় সব থেকে বেশি দুর্ভোগে রয়েছে গর্ভবতী মা ও নবজাতকরা। সরকারি ত্রাণ সহায়তার পাশাপাশি শিশু খাদ্য বিতরণ জোর দেন তিনি। এছাড়াও চিকিৎসা নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্য বিভাগ আরো কার্যকরী পদক্ষেপ নেবার দাবি তার।

জেলা মহিলা পরিষদের সভাপতি রওশন আরা চৌধুরী জানান, এমনিতেই এ জেলার নারী ও শিশুরা পুষ্ঠিহীনতায় ভুগছে। তার উপর করোনা ও বন্যার কারণে ভীষণ কষ্টকর জীবন যাপন করেছে গর্ভবতী মা ও শিশুরা। এছাড়াও বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধীরা এসময় চরম নিরাপত্তহীনতায় থাকেন। সরকারের উচিৎ বিশেষ এই শ্রেণির নাগরিকদের জন্য আপদকালিন পরিকল্পনা রাখা। কারণ আমরা এভাবে কেউ ভাবি না। এটা এখন সময়ের দাবি।

সিভিল সার্জন ডা. হাবিবুর রহমান করোনার ভয় এবং বন্যায় যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হবার কথা স্বীকার করেন। বন্যা কবলিতদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্য বিভাগের ১০টি মেডিকেল টিম মাঠে কাজ করছে বলে তিনি জানান।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড