নড়াইল প্রতিনিধি
নড়াইলের লোহাগড়ার গন্ডব গ্রামে ট্রিপল মার্ডারের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ ও মানববন্ধন করেছে মুক্তিযোদ্ধারা সহ গন্ডব গ্রামবাসী। বৃহস্পতিবার (২৫জুন) বেলা ১১টায় লোহাগড়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সামনে পাঁকা সড়কে এ বিক্ষোভ সমাবেশ, মিছিল ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
বিক্ষোভ সমাবেশে নিহত রফিকুল ইসলামের পিতা মুক্তিযোদ্ধা সাইফুর রহমান শেখ অভিযোগ করে বলেন, সাবেক বিডিআর থেকে চাকরীচ্যুত সন্ত্রাসী শাহাজাহান খান সাজু নিজে আমার ছেলের বুকের উপর উঠে রড দিয়ে পিটিয়ে এবং সহযোগীরা কুপিয়ে হত্যা করেছে। আমি ন্যায্য বিচার চাই।
নিহত রফিকুল ইসলামের ভাই মো. রেজাউল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, গত তিন মাস আগে ডিআইজি নাজমুল আলমের ভাতিজা ইয়াবা ব্যবসায়ী শেখ সুলতান মাহমুদ বিপ্লব ও বিডিআর থেকে চাকরীচ্যুত শাহাজাহান খান সাজু, বিএনপি নেতা কাজী সুলতানুজ্জামান সেলিম ডিবির পোশাক পরে রাতের বেলা আমার ভাইকে কা নূপুর শ্মশানের চিতার উপর ফেলে মারপিট করে। পরে সেখান থেকে আমার ভাইকে বিপ্লবের ইটভাটায় নিয়ে যায় এবং দেশীয় অস্ত্রসহ পুলিশে ধরিয়ে দেয়। সাজু, বিপ্লব, আশরাফ আলী, সেলিম কাজী, বাকের সহ অন্যরা পরিকল্পনা করে আমার ভাইকে হত্যা করেছে। ঘটনার দুইদিন আগে থেকে সাজু পুলিশের হেলমেট যোগাড় কওে এবং লোকজন জড়ো করে তিনটি হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। আমরা হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই।
জেলার সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার এমএম গোলাম কবীর বলেন, আমরা সঠিক তদন্তসহ দোষীদের শাস্তি দাবি করছি। কাশিপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মো. মতিয়ার রহমান বলেন, সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ী শেখ সুলতান মাহমুদ বিপ্লব ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীদের এনে গন্ডবের তিনটি মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের তিনজন সদস্যকে হত্যা করেছে। আমি সঠিক তদন্তসহ আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও ফাঁসি চাই।
সমাবেশে এছাড়াও বক্তব্য রাখেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোস্ত মোল্যা, বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. মোস্তফা, বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. বাচ্চু মিয়া, পঙ্গু বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ওমর মোল্যাসহ নিহত হাবিলের ছেলে আ. রহিম। বক্তারা দ্রুত আসামিদের গ্রেপ্তার ও ফাঁসির দাবি জানান। পঙ্গু বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ওমর মোল্যা অভিযোগ করেন, হত্যাকাণ্ডের দিন একজন হিন্দু দারোগা আমাকে মারপিট করে জখম করেন। বক্তারা আরো অভিযোগ করেন, ডিআইজ মো. নাজমুল আলম এবং তার ভাইপো শেখ সুলতান মাহমুদ বিপ্লব, শাহাজাহান খান সাজু ও সেলিম কাজী পরিকল্পিতভাবে তিনটি হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।
পুলিশ জানায়, গত ১৪ জুন সন্ধ্যায় নিহত রফিকুল ইসলামের পিতা সাইফুর রহমান শেখ বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা নং-১৪। মামলায় ৭৯জন আসামির নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এর আগে গত ১২জুন গন্ডব গ্রামের মোমরেজ মোল্যা বাদী হয়ে ৭৭ জনকে আসামি করে মোক্তার মোল্যা(চাচা) ও তার আপন ভাতিজা হাবিল মোল্যা হত্যার ঘটনায় অপর একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা নং-১২। বাদী, গ্রামবাসী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, কাশিপুর ইউনিয়নের গন্ডব গ্রামে দীর্ঘদিন ধরে মিরাজ মোল্যা নেতৃত্বাধীন গ্রুপ এবং শেখ সুলতান মাহমুদ বিপ্লব নেতৃত্বাধীন গ্রুপ এর মধ্যে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিরোধ চলছিল। এ বিরোধের জের ধরে শেখ সুলতান মাহমুদ বিপ্লব পক্ষের লোকের ধারালো অস্ত্রের কোপে গত ১০ জুন গন্ডব গ্রামের মৃত মাজেদ মোল্যার ছেলে মোক্তার মোল্যা (চাচা) সহ ভাতিজা একই গ্রামের মনতাজ মোল্যার ছেলে হাবিবুর রহমান ওরফে হাবিল মোল্যা নিহত হন। এছাড়াও সাইফুর রহমান শেখের ছেলে রফিকুল শেখ নিহত হন।
অভিযোগ বিষয়ে সিআইডির(ক্রিমিনাল ইনভেষ্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট) ফরেনসিক শাখার ডিআইজি শেখ নাজমুল আলম সাংবাদিকদের ফোনে বলেন, আমার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ সঠিক নয়। আমি হত্যাকাণ্ডের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। প্রকৃত হত্যাকারীদের শাস্তি হোক। আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে।
অভিযুক্ত শাহাজাহান খান সাজু পলাতক থাকলেও ফোনে বলেন, আমার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ সঠিক নয়। শেখ সুলতান মাহমুদ বিপ্লব পলাতক থাকায় যোগাযোগ করা যায়নি। কাজী সুলতানুজ্জামান সেলিম জেল হাজতে রয়েছেন।
লোহাগড়া থানার অফিসার ইনচার্জ সৈয়দ আশিকুর রহমান জানান, হত্যাকাণ্ডের পর পুলিশ প্রথম ১৩জনকে আটক করে। পরে দুটি মামলার ৭২জন আসামি থানায় আত্মসমর্পণ করলে পুলিশ তাদের আটক করে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করেছে। আসামি আটকের ব্যাপারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড