• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

বাঘ হারিয়ে ফেললেন উপজেলা চেয়ারম্যান!  

  সারাদেশ ডেস্ক

১৮ জুন ২০২০, ২৩:৪২
বাঁশঝাঁড় থেকে বেঁধে খাঁচার কাছে আনা হচ্ছে মেছোবাঘটিকে
বাঁশঝাঁড় থেকে বেঁধে খাঁচার কাছে আনা হচ্ছে মেছোবাঘটিকে (ছবি : সংগৃহীত)

পাবনার আটঘরিয়ায় গ্রামবাসী একটি মেছোবাঘ ধরেছে এমন খবর পেয়ে সেখানে ছুটে যান উপজেলা চেয়ারম্যান তানভীর ইসলাম।

বৃহস্পতিবার (১৮ জুন) সেখানে গিয়ে বাঘটি দেখে বন বিভাগের কাছে প্রাণীটি পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব স্বেচ্ছায় নেন তিনি। খাঁচাসহ বাঘটি গাড়িতে করে নিয়ে চলে যাওয়ার অনেকক্ষণ পর উপজেলা চেয়ারম্যান দাবি করেন, মেছোবাঘটি হারিয়ে ফেলে ছেন তিনি। এ ঘটনায় এলাকায় দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।

মাজপাড়া ইউনিয়নের মাজপাড়া মন্ডলপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

পাবনার আটঘরিয়া উপজেলায় পোষা কুকুরের সহায়তায় বাঁশঝাঁড়ের ওপর থেকে একটি বিরল প্রজাতির মেছোবাঘ আটক করে গ্রামবাসী। তবে নিয়ে পথের মাঝে প্রাণীটিকে হারিয়ে ফেলেছেন বলে দাবি করেন আটঘরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান তানভীর ইসলাম।

স্থানীয় গ্রামবাসী শাহীন মণ্ডল বলেন, বৃহস্পতিবার ভোরে উপজেলার মাজপাড়া ইউনিয়নের মাজপাড়া মন্ডলপাড়া গ্রামে আফজাল হাজির চিৎকার শুনে বাড়ির পাশেই আমের বাগানে ছুটে যাই। গিয়ে দেখি মোটা তাজা প্রায় সাড়ে ৪ ফিট লম্বা একটি মেছোবাঘ এসেছে সেখানে। এ সময় নিজেদের বাড়ির একাধিক পোষা কুকুর বাঘটিতে ধাওয়া দেয়। ঘটনা বুঝতে পেরে সঙ্গে সঙ্গে গ্রামের অর্ধশতাধিক মানুষও বাঘটিকে তাড়া করে। ধাওয়া খেয়ে বাঘটি সুযোগ বুঝে একটি বাঁশঝাঁড়ের ওপর উঠে বসে। তবে স্থানীয়রা তখন কৌশলে বাঁশের সঙ্গে দড়ি পেঁচিয়ে বাঘটিকে আটকে ফেলে। এরপর সবাই মিলে বাঘটিকে নিচে নামিয়ে এনে স্থানীয় মসজিদের মাইক রাখার একটি পুরাতন খাঁচায় বন্দি করে রাখে। সকাল হতে হতেই প্রচুর লোক বাঘটি দেখতে ভিড় জমায়।

শাহীন মণ্ডল বলেন, বাঘ আটকের খবর মুহূর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে বিভিন্ন স্থান থেকে ফোন আসতে শুরু করে। কিছুক্ষণ পরই আটঘরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান তানভীর ইসলাম পৌরসভার একটি ট্রাক নিয়ে সরকারি জিপে করে ঘটনাস্থলে আসেন। স্থানীয়রা নিজেরাই বাঘটি বন বিভাগের কাছে জমা দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিলেও উপজেলা চেয়ারম্যান এসে বলেন তিনি নিজ দায়িত্বে বাঘটি বন বিভাগের কাছে হস্তান্তর করবেন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি হওয়ায় আর নিজে দায়িত্ব নিতে চাওয়ায় তার কাছে বাঘটি হস্তান্তর করা হয়। তিনি পৌরসভার গাড়িতে করে বাঘটি নিয়ে যান।

এদিকে চেয়ারম্যান বাঘটি ঘটনাস্থল থেকে নিয়ে আসার কিছুক্ষণের মধ্যেই সেটি হারিয়ে গেছে বলে প্রচার শুরু হয়ে যায়। তবে বাঘটি আদৌ গাড়ি থেকে পালিয়ে গেছে নাকি এর পেছনে অন্য কোনও ঘটনা রয়েছে এ নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে ধোঁয়াশা।

বিষয়টি সম্পর্কে জানতে আটঘরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান তানভীর ইসলামের সঙ্গে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

উপজেলা চেয়ারম্যান কিভাবে পৌরসভার পিকআপ নিয়ে গেলেন এবং বাঘটি আনার পথে কেমন করে হারিয়ে গেলো, নাকি তিনি ছেড়ে দিলেন বা অন্যকিছু সে বিষয়ে চেয়ারম্যান তানভীর ইসলামের কোনও বক্তব্য পাওয়া না গেলেও গাড়িতে উপস্থিত থাকা চেয়ারম্যানের এক কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, উপজেলা চেয়ারম্যানের বাবা আটঘরিয়া পৌরসভার চেয়ারম্যান হওয়ায় তাকে জানিয়েই পৌরসভার পিকআপটি নিয়ে যান তিনি।

এরপর ঘটনাস্থল থেকে তারা বাঘটি নিয়ে সরাসরি জেলা সদরের দিকেই যাওয়ার জন্য রওনা হন। কিন্তু, মাজপাড়া মন্ডলপাড়া গ্রামটি থেকে খাঁচায় ভরা বাঘটিকে নিয়ে এক থেকে দেড় কিলোমিটার আসতে না আসতেই সড়ক এত খারাপ ছিল যে গাড়িতে জোরে একটা ঝাঁকি লাগে। এসময় খাঁচা আলগা হওয়ায় বা খাঁচার মধ্যে বাঘটি থাবা দেওয়ায় সেটি খুলে যায়। মেছোবাঘটি সঙ্গে সঙ্গে নেমে নিচের শর্ষে ক্ষেতের দিকে চলে যায়। এসময় বাঘটি জমিতে নেমে আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে থাকে বলে আমরা আর সেটিকে ধরার সাহস করিনি। এক মিনিট পরেই সেটি ক্ষেতের ভেতরে হারিয়ে যায়। আশেপাশে বসতি না থাকায় মানুষজনকে আবার ডাকা সম্ভব হয়নি।

সামাজিক বনায়নের পাবনাস্থ বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মাহাবুবুর রহমান বলেন, বাঘটি আটকের পর উপজেলা চেয়ারম্যান তানভীর ইসলাম নিজ দায়িত্বে আনছিলেন বলে শুনেছি। এও শুনেছি কিছুপথ আসার পর বাঘটি নাকি পালিয়ে গেছে। বাঘটি পালিয়ে গেছে নাকি ভেতরে অন্য কোনও রহস্য রয়েছে এমন প্রশ্নে বন কর্মকর্তা মাহাবুবর রহমান বলেন, যদি এ ধরনের কোনও ঘটনা ঘটে থাকে, তাহলে তদন্ত করে মূল ঘটনা অনুসন্ধান করা হবে।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড