• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

করোনায় সরকারের দেয়া এডিপির অর্থ হরিলুটের অভিযোগ

  কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি

১৫ জুন ২০২০, ১৪:৩৬
কুড়িগ্রাম
উপজেলা প্রশাসনিক ভবন

করোনা দুর্যোগ মোকাবেলার জন্য স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের বার্ষিক উন্নয়ন প্রোগ্রাম (এডিপি)’র বরাদ্দকৃত অর্থ কুড়িগ্রামে হরিলুট হবার অভিযোগ উঠেছে। করোনা দুর্যোগে সাধারণ মানুষের খাদ্য নিশ্চিত এবং মাঠ পর্যায় কর্মকর্তাসহ জনপ্রতিনিধিদের সুরক্ষার জন্য এই অর্থ বরাদ্দ দিলেও সেই সুবিধা থেকে অনেকেই বঞ্চিত হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

করোনা মহামারীর দুর্যোগ মোকাবেলার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগের মাধ্যমে বার্ষিক উন্নয়ন প্রোগ্রাম (এডিপি)-র ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরের কুড়িগ্রামে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৫৮লাখ ৬৭ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়। এই অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এবং ইউএনও’র বিরুদ্ধে। করোনা দুর্যোগ চলাকালীন সময়ে মানুষের সহায়তার জন্য সরকারের একাধিক প্রকল্পের মাধ্যমে সহায়তা একসঙ্গে আসার কারণেই এডিপি’র অর্থ হরিলুট করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে অভিযোগ রয়েছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ফুলবাড়ি উপজেলায় একটি পিপিই’র মূল্য ৫হাজার ২৭০টাকা এবং ০৪হাজার ২৫০টাকা দেখানো হয়েছে। উপজেলা পরিষদ চত্বরে একটি জীবাণুনাশক টানেল নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে এক লাখ টাকা। একই মানের পিপিই নাগেশ্বরী উপজেলায় সাড়ে তিন হাজার টাকা ক্রয় দেখানো হয়েছে। অথচ মাঠ পর্যায় কর্মকর্তা এবং জনপ্রতিনিধিদের সুরক্ষার জন্য দেবার কথা থাকলেও এখনো অনেক কর্মকর্তা এবং জনপ্রতিনিধিরা তা না পাওয়ার অভিযোগ করেন। তারা নিজ উদ্যোগে করোনা দুর্যোগে কাজ করছেন। আবার অনেকেই পিপিই পেলেও সেগুলো একদম নিন্ম মানের ২শ/৩শ টাকা মূল্যের।

অপরদিকে রাজারহাট উপজেলায় এডিপির পুরো অর্থ ত্রাণ সামগ্রীতে ব্যয় করা হয়েছে। ত্রাণের প্যাকেটে দেখা যায়, স্টিমেট অনুযায়ী ৫৭টাকার ডেটল সাবানের পরিবর্তে ২২টাকার এবং ০১ কেজি সেমাই ৫৮টাকার পরিবর্তে ৩৫টাকার দেয়া হয়েছে। এছাড়াও নিন্মমানের চাল ও ডাল দেবার অভিযোগ রয়েছে।

এডিপি’র অর্থ কুড়িগ্রাম সদর উপজেলায়-০৬লাখ ০১ হাজার টাকা, ভূরুঙ্গামারী-০৫লাখ ৯১হাজার টাকা, রাজিবপুর-০৬লাখ ৩২হাজার টাকা, চিলমারী-০৭লাখ ৫৭ হাজার টাকা, ফুলবাড়ি- ০৭লাখ ১৭হাজার টাকা, নাগেশ্বরী - ৭লাখ ৬২হাজার টাকা, রাজারহাট- ০৪লাখ ০২হাজার টাকা, রৌমারী- ০৬লাখ ৪১হাজার টাকা এবং উলিপুর উপজেলায়- ০৭লাখ ৬২হাজার টাকা। জেলার ৯টি উপজেলার ৩টি পৌরসভাসহ ৭৩ইউনিয়নের করোনা প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জীবাণুনাশক, ব্লিচিং পাউডার, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, হ্যান্ড গ্লোবস,মাস্ক, এ্যান্টিসেপটিক সাবান, পিপিই এবং ত্রাণ সামগ্রী দেবার জন্য এই অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়। যা ১৫জুলাই’র মধ্যে শেষ করার নির্দেশনা রয়েছে।

রাজারহাটের ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউপি সদস্য সিরাজুল ইসলাম,জাহাঙ্গীর আলম মঞ্জুসহ অনেকেই জানান, এডিপির অর্থে এসব বরাদ্দ আমরা জানি না। এখানে যে ত্রাণ সামগ্রী দেয়া হয়েছে তা সর্বোচ্চ ৪শ থেকে সাড়ে ৪শ টাকার হবে। এছাড়াও আমরা ওয়ার্ড ভিত্তিক যে তালিকা দেই সে অনুযায়ী ত্রাণ পাইনা। চেয়ারম্যান কাছে গেলে তিনি বলেন বরাদ্দ থেকে ইউএনও স্যার, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান তাদের জন্য রেখে দেন। সে অনুযায়ী সকলের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব না।

রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান শ্রী রবীন্দ্রনাথ কর্মকার বলেন, এডিপি’র ত্রাণ সামগ্রীর প্যাকেট কত টাকার সে বিষয় আমার জানা নেই। তবে তিনি আরো বলেন, ইউএনও স্যার বিভিন্ন ত্রাণের চাল রেখে দিয়েছিলেন পরিষদে। সেগুলো কি করেছেন তা আমার জানা নেই।

নাগেশ্বরী উপজেলার নেওয়াশী ইউপি চেয়ারম্যান এবং উপজেলা চেয়ারম্যান ফোরামের সভাপতি আমজাদ হোসেন সরকার বলেন,করোনা মোকাবেলায় উপজেলা প্রশাসন হতে আমার ব্যবহারের জন্য একটি হ্যান্ড স্যানিটাইজার পেয়েছি। এছাড়া গ্লোবস,মাস্ক,পিপিই এগুলো কিছুই পাইনি।

ফুলবাড়ি উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান মোসাব্বের আলী মুসা জানান,উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি পিপিই,মাস্ক,হ্যান্ড স্যানিটাইজার দেয়া হয়েছে। একটি ওয়ান টাইম পিপিই দেয়া হয়েছে ২শ /৩শ টাকার হবে।

ফুলবাড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য ও প:প: কর্মকর্তা ডাঃ শামসুন্নাহার জানান, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১০টি পিপিই পেয়েছে। এরমধ্যে সাবেক ইউএনও একটি তার কাছে রেখে দিয়েছেন। এছাড়া আর কিছু পাওয়া যায়নি। তবে দুটি সংগঠন থেকেও কয়েকটি পিপিই পেয়েছেন বলে জানান।

ফুলবাড়ি উপজেলা প্রকৌশলী আসিফ জানান, আমরা শুধু স্টিমেট করে দেই। কিভাবে কোথা থেকে খরচ হয়েছে এটা ইউএনও এবং চেয়ারম্যান স্যার বলতে পারবেন। তবে তিনি পিপিই মূল্যের কথা স্বীকার করেন। এবং এগুলো উন্নত মানের হাসপাতালে ব্যবহারের জন্য দেয়া হয়েছে।

নাগেশ্বরী উপজেলা প্রকৌশলী বাদশার কাছে এডিপি’র অর্থ খরচের স্টিমেট চাইলে তিনি বলেন, ইউএনও’র কাছে আছে আমার কাছে কোন কপি নেই।

নাগেশ্বরী উপজেলার ইউএনও নুর আহমেদ মাছুম বলেন,পিপিইসহ করোনা মোকাবেলায় সরঞ্জামাদি ক্রয় করা হয়েছে। কিছু ত্রাণ সামগ্রীও ক্রয় করা হয়েছে। দু প্রকার পিপিই ক্রয়ে একটিতে সাড়ে তিন হাজার এবং অপরটিতে দু’ হাজার ২শ টাকা হবে আনুমানিক। স্টিমেট দেখতে চাইলে তিনি উপজেলা প্রকৌশলীকে দেখাতে বললে উপজেলা প্রকৌশলী বাদশা স্টিমেট এখনো কমপ্লিট করা হয়নি বলে সেখানে জানান।

রাজারহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা যোবায়ের হোসেন অনিয়মের কথা অস্বীকার করে বলেন, এডিপি’র বরাদ্দের টাকা পুরোটাই ত্রাণ বিতরণে ব্যয় করা হয়েছে। স্টিমেট অনুযায়ী সব কিছুই হয়েছে দাবি তার।

সদ্য যোগদানকৃত ফুলবাড়ি উপজেলার ইউএনও তৌহিদুর রহমান বলেন, এডিপির অর্থ সম্পর্কে কিছু না জানলেও তিনি বিষয়টি খতিয়ে দেখে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানোর আশ্বাস দেন।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড