• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৩ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

বয়স্ক আর বিধবাদেরও দিতে হয় ঘুষ!

  নিজস্ব প্রতিবেদক

১৭ মে ২০২০, ২২:২৬
অগ্রণী ব্যাংক
রাসেদুল হাসান খান রাসেল

অগ্রণী ব্যাংক পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ শাখায় মিস্টার ওয়ান পারসেন্ট ম্যানেজার রাসেদুল হাসান খান রাসেল এতোদিন অপকাজগুলো করতেন গোপনে। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে ঘুষের কাজটি সারছেন বেশ ঢাক-ঢোল পিটিয়ে। আবার এই ঘুষের পরিমাণ এক শতাংশ। তাই কারও গায়েও বাধে না। কিন্তু দিনশেষে তার পরিমাণ একেবারেই মন্দ নয়। ঘটনা অগ্রণী ব্যাংক পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ শাখায়। অভিযোগ খোদ ম্যানেজারের বিরুদ্ধেই।

জিডি, ভিজিএফ, বয়স্কভাতা, বিধবা ভাতা থেকে কমিশন, কর্মসৃজন কর্মসূচীর শ্রমিকদের টাকা থেকে ১% কর্তন করে রাখা, সিসি ঋণের বিপরীতে ঘুষ দাবি, তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীকে মারধর, ইউপি সদস্যকে বেয়াদব, সাবেক সরকারি কর্মকর্তাকে আহাম্মক বলে গালি দেওয়া এসবই যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে অগ্রণী ব্যাংকের ওই শাখাটিতে।

ফলে এখানকার গ্রাহক, ব্যাংক স্টাফ, অসহায় বিধবা নারী সকলেই ক্ষুদ্ধ। তবে সবকিছুকেই থোরাই কেয়ার করেন অগ্রণী ব্যাংকের এ শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ম্যানেজার রাসেদুল হাসান খান রাসেল ওরফে পুলিশ রাসেল ওরফে বলদা রাসেল। নিজেকে ছাত্রলীগ নেতা পরিচয় দিয়ে দাবড়ে রাখেন সবাইকে। যদিও ছাত্রলীগের সাথে তার সংশ্লিষ্টতার ব্যাপারে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

বছর দুয়েক পুলিশে চাকুরি করে দুর্নীতির কারণে চাকরি হারিয়ে ২০১২ সালে পুলিশে চাকরি হারানো তথ্য গোপন করে ব্যাংকে চাকরি নেন। এরপর থেকেই তিনি শাখাটি থানায় পরিণত করেছেন বলে অভিযোগ ভূক্তভোগীদের। ম্যানেজারের এসব কর্মকাণ্ডের ফলে গ্রাহক হারাতে বসেছে ব্যাংকের এ শাখাটি। আর রাজস্ব আয় কমছে সরকারের।

অভিযোগসূত্রে জানা যায়, অগ্রণী ব্যাংক মির্জাগঞ্জ শাখার প্রিন্সিপাল অফিসার রাশেদুল হাসান খান ম্যানেজারের দায়িত্ব নিয়ে আসার পর থেকেই এক এক ঘটনার জন্ম দিয়ে যাচ্ছেন তিনি। পুলিশ থেকে চাকুরি হারিয়ে ২০১২ সালে ব্যাংকে যোগদান করে এখনো নিজেকে পুলিশ দাবি করেন তিনি। আর সরকারের সেবাখাত ব্যাংক হলেও এ শাখাটিকে তিনি থানা হাজত করে রেখেছেন এমনটি দাবি খোদ ওই শাখার কর্মরতদের।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যাংকের এক স্টাফ মুঠোফোনে জানান, তিনি দুমকি শাখা থেকে পালিয়ে এসেছেন গ্রাহকের সাথে খারাপ আচরণের কারণে। শুধুমাত্র আমাদের সাথেই নয় গ্রাহকদের সাথেও তিনি পুলিশি আচরণ করেন।

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বয়স্ক ভাতার টাকা নিতে এলে চরখালীর মেম্বর কালামকে গালাগালি দিয়ে বের করে দিয়েছেন। কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, বয়স্ক ভাতার ভাগ ম্যানেজারকে না দেওয়ায় মেম্বার কালামের সাথে তিনি এমন ব্যবহার করেন।

তিনি জানান, ৪০ দিনের কর্মসূচির টাকা চেকের মাধ্যমে ক্যাশ কাউন্টার থেকে নেওয়ার কথা থাকলেও ম্যানেজার রাশেদুল ওই টাকা তার রুমে নিয়ে যান। কখনো কখনো ব্যাংকের খাস কামরায় রেখেও লেনদেন করেন। সেখান থেকে নিজের কমিশন রেখে বাকি টাকা সচিব কিংবা ইউপি মেম্বরদের কাছে দেন।

এ শাখার সাবেক এক আনসার সদস্য বলেন, ম্যানেজার রাশেদুল হাসান লোভী মানুষ। সিসি ঋণের প্রতি তার আকর্ষণ বেশি। ব্যাংককে নিজের সম্পত্তি মনে করে যা খুশি তাই করছেন ম্যানেজার।

তিনি বলেন, এ সকল দুর্নীতির কথা বাইরে প্রকাশ না করার জন্য ব্যাংকের স্টাফদের হুমকি দিয়ে থাকেন। বদলি কিংবা চাকুরি হারানোর ভয়ে স্টাফরাও কোনো প্রতিবাদ করেনা। তিনি এ প্রতিবেদককে গ্রাহক সেজে ওই শাখায় যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে বলেন, ঋণ দরকার এমনটি বলে ব্যাংকে গেলেই ম্যানেজার রাশেদুলের চরিত্র বুঝতে পারবেন আপনি। ব্যাংকের কেয়ারটেকার লতিফ বিশ্বাস বলেন, বাজারের একটি দোকান থেকে চা এনে ম্যানেজারকে খেতে দেওয়ায় তার গায়ে ফ্ল্যাক্স ছুঁড়ে মারেন ম্যানেজার রাশেদুল। এক পর্যায়ে লতিফ বিশ্বাসকে মারতে উদ্ব্যত হন তিনি।

সিসি ঋণ গ্রহীতা আল-আমিন বলেন, তিনি সিসি ঋণের পরিমাণ বাড়িয়ে চাইলে ম্যানেজার রশেদুল তার কাছে ১০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন। দাবিকৃত টাকা না দেওয়ায় তার ঋণ পাস করা হয়নি।

ঘুষ কেনো লাগবে জানতে চাইলে ম্যানেজার রাশেদুল তাকে বলেন, জোনাল অফিসে খরচা লাগে। শুধু তিনিই নন, প্রত্যেক ঋণ গ্রহীতাই তাকে ঘুষ দিয়ে ঋণ গ্রহণ করেছেন দাবি এই গ্রাহকের।

আল-আমিন জানিয়েছেন, এ ব্যাপারে তিনি জোনাল হেডকে কার্যালয় গিয়ে জানিয়েছেন। যদিও এর কোনো প্রতিকার হয়নি দাবি করেন তিনি।

ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, চরখালী ইউনিয়নের মেম্বর কালাম ম্যানেজারের চাহিদা মতে উৎকোচ না দেওয়ায় গালাগালি দিয়ে ব্যাংক থেকে বের করে দেন তাকে। এ ছাড়া কৃষি ব্যাংকের সাবেক এক এমডির শশুর সাবেক সরকারি কর্মকর্তা ইঞ্জিনিয়ার হামিদকে আহম্মক বলে গালি দিয়েছেন এই ম্যানেজার রাশেদুল।

তিনি আরও বলেন, তাকে যখন আহাম্মক বলে গালি দিয়েছেন তখন তিনি বিষয়টি ব্যাংক জিএম শেখর চন্দ্র দাস এবং সার্কেল ডিজিএম আব্দুর রহিমকে জানিয়েছেন।

ফলে ওই দিনই ম্যানেজার রাশেদুল তার বাড়িতে গিয়ে হাত পা ধরে ক্ষমা চেয়েছেন। ব্যাংকের এক স্টাফকে পায়ে সমস্যা থাকায় তাকে খোঁড়ার বাচ্চা বলে গালি দেন।

তিনি জানান, শুনেছি পুলিশে চাকুরি করতো রাশেদুল। তাই এখানে এসে সবার সাথে পুলিশি ব্যবহার করছেন। পুর্বেকার ম্যানেজারদের প্রশংসা করে তিনি বলেন, ব্যাংকে গ্রাহকরা গেলে তাদেরকে বসতে দিতেন, আপ্যায়ন করতেন। আর বর্তমান ম্যানেজার রাশেদুল যা করেছেন তাতে গ্রাহক কমবে বৈকি বাড়বে না।

এ বিষয়ে অগ্রনী ব্যাংক পটুয়াখালী জোনের এজিএম মহিউদ্দিন বলেন, ম্যানেজার রাশেদুল এর বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়েছি তদন্ত করে দেখবো। কোনো অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট গ্রাহককে তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিতে পরামর্শ দেন।

এদিকে গত ৫/৫/২০ তারিখ ঢাকায় কর্মরত এক সাংবাদিকের সাথে খারাপ আচরণ করেন বলেও জানা যায়। ঐ সাংবাদিক এ বিষয়ে মির্জাগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ দিলে পুলিশ বিষয়টি আমলে নিয়ে তদন্ত শুরু করছে বলে জানা গেছে।

এ বিষয় রাশেদুল বলেন, ভাই লিখে কি হবে। আসেন চা খেয়ে যান। সামনাসামনি কথা বলি। এই বলে সংযোগটি কেটে দেন।

এ বিষয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই সুমন বলেন তিনি অভিযোগটি তদন্ত করছেন, খুব শীঘ্রই প্রতিবেদন দেওয়া হবে।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড