• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

লকডাউন, তারপরও সিদ্ধিরগঞ্জে মতি বাহিনীর তাণ্ডব!

  নিজস্ব প্রতিবেদক

৩০ এপ্রিল ২০২০, ২০:৪০
কাউন্সিলর
আশরাফ উদ্দিন ও কাউন্সিলর মতি

করোনা লকডাউনের মধ্যেই মতি বাহিনীর অত্যাচারে উত্তাল সিদ্ধিরগঞ্জ। সন্ত্রাসী আটক না হওয়ায় পুলিশের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী।

রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে হত্যাচেষ্টার কারণে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে উত্তাল অবস্থা বিরাজ করছে। চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের আসামি করে মামলা হলেও তাদের আটক না করায় ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী।

সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বলছে, করোনার কারণে ব্যস্ত আছি। তবে অভিযান থেমে নেই। যেকোনো মুহূর্তে সন্ত্রাসী পাকড়াও হবে।

কিন্তু পুলিশের কথায় আস্থা পাচ্ছেন না এলাকার মানুষ। করোনার লকডাউন ভেঙে তাই রাস্তায় নেমেছেন নির্যাতিতের স্বজনেরা।

সূত্র বলছে, গত ২৩ এপ্রিল রাত ন’টার দিকে বাড়ি ফিরছিলেন সিদ্ধিরগঞ্জের দেলোয়ার হোসেনের ছেলে মাসুম। হঠাৎ রাস্তা থেকে তাকে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করে মুখোশধারী সন্ত্রাসীরা। মাসুমের চিৎকারে আশপাশের লোকজন ছুটে এলে ক’জনকে চিনে ফেলে স্থানীয়রা। যাদের অধিকাংশই নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর মতিউর রহমান মতির লোকজন।

এ সময় অপহরণ চেষ্টাকারীদের বাধা দেন এলাকাবাসী। যাদের অধিকাংশই আবার মতিবাহিনীর অন্যতম আশরাফ উদ্দিনের পেটোয়াবাহিনী হিসেবে পরিচিত।

এলাকাবাসী বাধা দেয়ার আগেই মাসুমকে বেদম মারধর করে কুপিয়ে জখম করে। এ ঘটনার পর মাসুমের বাবা দেলোয়ার হোসেন বাদী হয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় মামলা করেন। এ মামলার নম্বর ৭।

আর এতে আসামি হলেন কাউন্সিলর মতির ডান হাত আশরাফ উদ্দিন, বিএনপি’র গুপ্তচর হিসেবে পরিচিত তেল সেক্টরের নিয়ন্ত্রণকর্তা মানিক মাস্টার ওরফে পেটকাটা মানিক। যিনি এলাকার মাদক ব্যবসাও নিয়ন্ত্রণ করেন।

ঘটনায় দায়ের করা মামলার নথি বলছে, আসামিদের অন্যতম মতিউরের ভাই মাহবুব, মতির ছেলে মশিউর রহমান বাবু, আশরাফের ক্যাডার শামীম ওরফে ফেন্সি শামীম, দেলায়ার হোসেন ওরফে ইয়াবা মুন্না, মোতালিব, মামুন ওরফে ভাগিনা মামুন, ইয়াকুব, মাসুদ, আক্তার ওরফে পানি আক্তার, মহিউদ্দিন সানি, ইফতি, নাজির, খোরশেদ,ওহাব ওরফে বোমা ওহাব, আরিফ, রাজিব, জাহিদুলসহ আরও বেশ ক’জন।

সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি হাজী কামরুল ফারুক মামলার সূত্র ধরে বলেন, প্রক্রিয়া চলছে আসামি গ্রেপ্তারের। অভিযানের ব্যাপারে গড়িমসির কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জ এমনিতেই করোনার হটস্পট। তাই করোনা নিয়ে আমাদের ব্যস্ততা। তবে এ ব্যাপারেও আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

এলাকাবাসী জানান, নাসিকের প্যানেল মেয়র মতিউর রহমান মতি সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। মতি আগে জাতীয় পার্টির ক্যাডার ছিলন। এরশাদের আমলে আদমজীতে রেহান বাহিনীর সঙ্গে প্রতিদিন মতি বাহিনীর ওপেন ফাইট হতো। উভয়পক্ষের বেশ ক’জন নিহতও হয়েছে সেসময়।

সেই থেকে মতির নাম ‘মতি ক্যাডার’ হিসেবে সামনে চলে আসে। বিভিন্ন থানায় রয়েছে বেশ কিছু মামলা। সাম্প্রতিক মতির ডানহাত হিসেবে কাজ করে যাওয়া আশরাফ উদ্দিন এক সময় বিএনপির সক্রিয় ক্যাডার হিসেবে কাজ কররেও এখন দলে নিষ্ক্রিয়। তাই আশরাফ মতি বাহিনীর প্রধান হয়ে কাজ করছে বলে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সূত্র নিশ্চিত করেছে। মতি ও আশরাফবাহিনীর ক্যাডারদের বিরুদ্ধে হত্যা, দাঙ্গা, বিস্ফোরক, অস্ত্র, মারামারি, চুরি, ছিনতাইসহ মামলা রয়েছে ২২টি। চাঁদাবাজির টাকায় বেশ ক’টি থেকে খালাশ পেলেও চলমান রয়েছে ৭টি।

এদিকে, এলাকার একাধিক সাংবাদিক বলছেন, কাউন্সিলর মতিউর ১৯৯৮ সালে জাতীয় পার্টি থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। পরে আদমজীতে এাসের রাজত্ব কায়েম করে। গড়ে তোলে নতুন বাহিনী আর অস্ত্রভান্ডার।নারায়ণগঞ্জের ভয়ঙ্কর সব ক্রাইমের সঙ্গে যুক্ত তারা। দেশের বিভিন্ন জেলায় মতিবাহিনীর সন্ত্রাসী ও অস্ত্র এখনো ভাড়ায় চলে-এমন গুঞ্জনও রয়েছে সিদ্ধিরগঞ্জে।

সেই থেকে মতিউর বনে যান সিদ্ধিরগঞ্জের রাজা-উজির। বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর কিছুদিন এলাকা থেকে পালিয়ে থাকেন । অত:পর স্থানীয় এক নেতার মাধ্যমে সখ্য গড়ে তোলেন বিএনপির হাইকমাণ্ডের সঙ্গে। আবার শুরু হয় মতি বাহিনীর তাণ্ডব।

নারায়ণগঞ্জের এ মাথা থেকে আরেক মাথা অব্দি মতি বাহিনীর সন্ত্রাসীরা দাবড়ে বেড়াত অস্ত্র নিয়ে প্রকাশ্যে। মতির অস্ত্রভাণ্ডার আর অপ্রতিরোধ্য সন্ত্রাসবৃত্তির কারণে ২০০৫ সালে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী আটক করে। নারায়ণগঞ্জের একজন শক্তিধর বিএনপি নেতার সুপারিশে ক্রসফায়ার থেকে রেহাই পান মতিউর। মুচলেকা দেন, তার কিংবা তারবাহিনীর কেউ আর খারাপ কাজ করবে না।

কিন্তু এক বছর যেতে না যেতেই আবারও সন্ত্রাসে সম্পৃক্ত হন মতির লোকজন। পুলিশের মোস্ট ওয়ান্টেড মতিউর রহমান মতি অতপর জীবন বাঁচাতে দেশ ত্যাগ করেন। সুযোগ বুঝে ফিরে আসেন ২০০৯ সালে।

তখন মতির সঙ্গে যোগ দেন বিএনপি’র গুপ্তচর আশরাফ উদ্দিন, মানিক মাষ্টার, বোমা ওহাব, ফেন্সি শামীম, কিশোর গ্যাং লিডার পানি আক্তারসহ অন্যরা। গড়ে তোলেন নতুন বাহিনী।

এ বাহিনী বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত হয়ে নিয়ন্ত্রণ নেয় সিদ্ধিরগঞ্জের বিভিন্ন এলাকার পাশাপাশি ৬ নম্বর ওয়ার্ড। তেল সেক্টর নিয়ন্ত্রণে নেয় র্সোস আশরাফ। দখল করে মেঘনা তেল ডিপো। রাতের আঁধারে নদীর পাড়ে জাহাজ থেকে তেল চুরির অভিযোগ রয়েছে এদের বিরুদ্ধে।

এলাকার কেউ এসবের প্রতিবাদ করলে সাজানো মামলা দিয়ে হয়রানি করেন আশরাফের লোকজন। সাংবাদিকরা কিছু লিখতে চাইলে দেওয়া হয় হত্যার হুমকি। তাই সব সময় সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় এদের পছন্দের পুলিশ কর্মকর্তা আনতে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন মতিউর রহমান-এমন অভিযোগ নারায়ণগঞ্জজুড়েই বহুদিন।

যদিও নিজেকে বিভিন্ন সন্ত্রাসী কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকার ব্যাপারটি জোড় গলায় অস্বীকার করেন কাউন্সিলর মতিউর রহমান। তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জ নানা কারণেই আলোচিত। এখানে একটি গোষ্ঠী বিভিন্ন সময় তাকে অপদস্থ করে উপরে উঠতে চায়। প্রতিপক্ষরাই তার বিরুদ্ধে বিষোদগার করেন সবসময়। তবে মামলার ব্যাপার কোনো সদুত্তর দিতে পারেন নাই কাউন্সিলর মতি।

এদিকে মাসুমকে অপহরণ চেষ্টার পর থেকে সিদ্ধিরগঞ্জের মানুষ একাধিকবার থানায় গিয়ে এই বাহিনীর সদস্যদের আটকের দাবি জানান। বলেন, করোনার কারণে চারদিকে সুনসান নিরব। সবাই খুব ভয়ে ভয়ে রাত কাটাচ্ছেন। মতি-আশরাফ বাহিনীর লোকজন রাতে-দিনে ইচ্ছেমতো ঘুরেফিরে বেড়াচ্ছে । সিদ্ধিরগঞ্জের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাজী কামরুল বলেন, চেষ্টার কোন কমতি নেই। যেকোনো মুহূর্তে চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের আটক করা হবে।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড