ঝালকাঠি প্রতিনিধি
বাবা স্ব-মিলের শ্রমিক আর মা গৃহিনী। ঝালকাঠি উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র সাইফুলের সংসারে অর্থাভাবে এসএসসির পর আর লেখা পড়া হয়নি। ঝালকাঠিতে বিভিন্ন কাজের ফাকে ড্রাইভিং শিখে পিকআপ চালানো শুরু করে। পরে ঢাকায় পিকআপ ভ্যান চালানোর পেশা বেছে নেয় সাইফুল ইসলাম (২৫)। ছয় মাস আগে সে বিয়েও করে। করোনাভাইরাসের কারণে দেশে অঘোষিত লকডাউন শুরু হলে সে ঝালকাঠি শহরে এসে সাইফুল রিকসা ভ্যানে ডাব বিক্রির ব্যবসা শুরু করে।
বৃহস্পতিবার (৯ এপ্রিল) বিকাল সাড়ে তিনটার দিকে পূর্বচাদকাঠি এবাদুল্লাহ জামে মসজিদের পিছনে শাহজাহান স্বর্ণকারের বাড়িতে একটি নারকেল গাছ থেকে ডাব পাড়তে ওঠে। গাছ থেকে পড়ে তার মর্মান্তিক মৃত্যু হয়।
স্থানীয়রা জানান, শহরের গুরুধাম এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় থাকেন নিহত সাইফুলের বাবা আব্দুল খালেক। তিনি পার্শ্ববর্তী সিকদার স্ব-মিলে শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। গ্রামের বাড়ি পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া উপজেলায়। ২০/২২ বছর যাবত ঝালকাঠি শহরের গুরুধাম এলাকার বাসিন্দা আব্দুল খালেকের তিন ছেলের মধ্যে সাইফুল সবার বড়। আর্থিক কারণে এসএসসি পাস করার পর সাইফুল আর পড়াশোনা করতে পারেনি। এটাসেটা করে বছর দুয়েক আগে ঢাকায় পিকআপ ভ্যান চালানো শুরু করে। স্বপ্ন দেখে পিকআপ চালিয়ে একদিন সংসারে সচ্ছলতা আনবে। ছয় মাস আগে বিয়ে করে রিয়া নামে এক কলেজ ছাত্রীকে। মেঝ ভাই সাঈদুল ইসলাম ঢাকার একটি কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। সাইফুলের মা সাহিদা বেগম কিছুটা মানসিক প্রতিবন্ধী। ছোট ভাই আরিফুল এ বছর উদ্বোধন মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করেছে।
নিহত সাইফুলের বাবা আ. খালেক বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুরে সাইফুল পূর্বচাদকাঠি বসুন্ধরা সড়কে শাহজাহান স্বর্ণকারের বাড়ির তিনটি নারকেল গাছের ডাব ক্রয় করে ৫০০ টাকায়। ওই ডাব গাছ থেকে পাড়ার জন্য বিকাল তিনটার দিকে সে গাছে ওঠে। ডাব পারার সময় সে নারিকেল গাছ থেকে পড়ে সাথে সাথে ঘটনাস্থলেই মারা যায়। আশপাশের লোকজন সাইফুলকে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে জরুরী বিভাগের চিকিৎসক ডা. মো. জিয়াউল হাসান সাইফুলকে মৃত ঘোষণা করেন।
ডা. জিয়াউল হাসান বলেন, গাছ থেকে পড়ায় নিহতর মস্তিষ্কে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয় এবং দুটি হাত ভেঙ্গে যায়।
সাইফুলের বাবা আব্দুল খালেক আরও বলেন, আমার ছেলে নারকেল গাছ থেকে পড়ে মারা গেছে। কারো বিরুদ্ধে আমার কোন অভিযোগ নাই।
শাহজাহান স্বর্ণকারের ছেলে হাসান ঈমাম বলেন, সে আমার মায়ের কাছ থেকে তিনটি গাছের ডাব কেনে। তিনটার দিকে আমি ঘুমে ছিলাম তখন ডাব পারার জন্য গাছে ওঠা শুরু করলে আমার মা তাকে প্রচণ্ড রৌদ্রে গাছে না ওঠার জন্য অনুরোধ করেছিল।
তিনি আরও বলেন, যেহেতু সাইফুল অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারের সন্তান আমাদের পক্ষ থেকে তার পরিবারকে সার্বিক সহায়তা করা হবে।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড