• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

সামাজিক দূরত্বের বিষয়ে বেখেয়াল নোয়াখালীবাসী

  আরিফ সবুজ, নোয়াখালী

০৪ এপ্রিল ২০২০, ১৫:৫৯
নোয়াখালী
নোয়াখালী স্টেশন

নোয়াখালী জেলার সর্বত্র করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে সামাজিক দূরত্বের নিয়ম মানতে চরম উদাসীনতার চিত্র দেখা গেছে। সতর্কতার অংশ হিসেবে অবাধ চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে কিন্তু মানছেন না কেউই। প্রশাসনও এ বিষয়ে হতাশা ব্যক্ত করেছে। ইতোমধ্যে জেলা শহর মাইজদীসহ বিভিন্ন উপজেলায় অযথা ঘোরাফেরা না করে বাড়িতে অবস্থান করা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সহ নানা সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করেছে সেনাবাহিনী।

গত সোমবার (৩১ মার্চ) নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক তম্ময় দাস বিকাল ৫টার পর ওষুধের দোকান ছাড়া অন্য সব দোকান বন্ধ রাখার আদেশ দেন কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তা মানা হচ্ছে না। শনিবার (৩ এপ্রিল) অন্যান্য দিনের তুলনায় রাস্তায় গণপরিবহনের সংখ্যা কিছুটা বেশি দেখা গেছে। বিশেষ করে গ্রামের বিভিন্ন পাড়া মহল্লার মোড়ে মোড়ে চা ও মুদি দোকানেও ভিড় দেখা যায়। এসব দোকানগুলোতে চা বিক্রির পাশাপাশি মুদি দোকান খোলা রাখা হয়েছে। মুদি দোকান খোলা রেখে তার ভেতরে চায়ের আড্ডা চলছে রাত ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত।

নোয়াখালী জেলা শহর মাইজদি, সদর উপজেলা,সূবর্ণচর,কবিরহাট,কোম্পানীগঞ্জ,বেগমগঞ্জ সহ প্রায় সব উপজেলার হাটবাজার ও পাড়া মহল্লার ছোটখাটো দোকানে একই চিত্র দেখা গেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, অফিস-আদালত বন্ধ থাকায় ঢাকা, চট্টগ্রাম থেকে লোকজন গ্রামের বাড়িতে ফিরে আসার পর বাজারগুলোতে আগের চেয়ে লোক সমাগম বেড়েছে।

এদিকে জেলার বিভিন্ন স্থানে গরীব ও অসহায়দের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করছেন জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনিক কর্মকর্তারা। এ সময় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের দূরত্ব বজায় রাখতে দেখা যায়নি। কোন কোন স্থানে একজনের সাথে আরেকজন গা ঘেঁষে লাইনে দাড়িয়ে ত্রাণ নিতে দেখা গেছে। এধরণের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখে অনেকেই শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

বুধবার (১ এপ্রিল) জেলার বিভিন্ন উপজেলায় টিসিবি নিত্যপ্রয়োজনী পণ্য বিক্রির স্থানে ছিলো উপচে পড়া ভিড়। জেলা শহর মাইজদীতে দেখা গেছে মানুষ গায়ে গা ঘেঁষে হুড়োহুড়ি করছেন। মাঝে ১০ ইঞ্চি জায়গাও নেই। মাস্ক ব্যবহার করছেন না। বিক্রেতা ও ক্রেতার মাঝখানেও দূরত্ব রক্ষা করা হচ্ছে না। এসময় আনছার উদ্দিন নামে টিসিবি’র পণ্য কিনতে আসা এক ক্রেতা বলেন, তিন ফুট দূরত্বে থাকার বিষয় জানি। তবে দাঁড়ানোর পর পাশে আরও একজন দাঁড়ালে তাকে তো দুরে সরে যেতে বলতে পারি না।

এবিষয়ে জেলা শহর মাইজদির লক্ষীনারায়নপুরের বাসিন্দা মো. লাভলু বশিরের দোকান এলাকার চিত্র তুলে ধরে বলেন, ঘরে কোনো খাবার নেই। মাছ, শাক-সবজিও শেষ। তাই ধীরে ধীরে বাজারে এলাম। কিন্তু বাজারে এসেই মনে হলো, আমি একাই বাড়িতে ছিলাম। আমিই শুধু হোম কোয়ারেন্টিন কঠোরভাবে মানছি। কিন্তু সবাই বাইরে স্বাভাবিক চলাফেরা করছে। বাজার, সড়ক, ছোট ছোট মাঠ মানুষে ভরা। গলিতে যুবকদের জমজমাট আড্ডা চলছে।

এদিকে ফ্যামেলী মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. মো. রেজাউল বারী দৈনিক অধিকারকে জানান, মুখোমুখি দাঁড়ালে একজন থেকে অপরজনের দূরত্ব হতে হবে ছয় ফুট আর সারি বেঁধে দাঁড়ালে তিন ফুট দূরত্ব থাকতে হবে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে না চললে করোনাভাইরাস আরও বেশি সংখ্যক মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হতে পারে।

এবিষয়ে সুধারাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. নবির উদ্দিন বলেন, আমরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দায়িত্ব পালন করছি। সব এলাকার দোকানপাট বন্ধ রাখতে বলেছি। তবুও চায়ের দোকানদাররা চোখ এড়িয়ে দোকান খোলা রাখছে। পুলিশ দেখলেই পালিয়ে যায়, আবার পুলিশ চলে গেলে ২০/৩০ জনের আড্ডা জমে।

সিভিল সার্জন ডা. মোমিনুর রহমান এক সাক্ষাৎকারে বলেন, এমন দশা চলতে থাকার কারণে আগামী সপ্তাহে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা প্রবল হয়ে উঠছে। এখনই হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করা প্রয়োজন। তা না হলে বড় ধরনের বিপদ হতে পারে। সকলকে সামাজিক দূরত্বের নিয়ম মেনে চলার জন্য আহবান জানান তিনি।

অন্যদিকে জেলা প্রশাসক তন্ময় দাস বলেন, প্রশাসনের কঠোর নজরদারির পরও প্রত্যন্ত অঞ্চলের চায়ের দোকানগুলো অনেক সময় খুলে ফেলে। এজন্য খাবারের দোকান এবং কাঁচা বাজার বিকাল ৫টার পর বন্ধ থাকবে। এর বাইরে শুধুমাত্র ঔষধের দোকান ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকবে।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড