খোকসার আরও এক পরিবার কোয়ারেন্টিনে

কুষ্টিয়ার খোকসায় ঢাকা ফেরত এক স্কুল ছাত্র জ্বর ও সর্দিতে আক্রান্ত হওয়া পাঁচ সদস্যের পরিবারটিকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। শ্বশুর বাড়িতে আত্মগোপনে থাকা ইটালি ফেরত জামাই পালিয়ে গিয়ে আর ফেরেনি। আইন অমান্য করায় এক ব্যবসায়ীকে জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমান আদালত। ভ্যান চালক দিনমজুর ও দুস্থদের মধ্যে দ্বিতীয় দিনও সরকারি সহায়তার খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে।

করোনা ভাইরাসের রোধের সরকারি উদ্যোগের ফলে জীবন যাত্রা সঙ্কুচিত হয়ে পড়েছে। দিনমজুর শ্রেণির মানুষ অর্থ সংকটে পরেছে। পুলিশ ও স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যমতে সম্প্রতি ৬৪ থেকে ৭০ জন প্রবাসী দেশে ফিরেছে। তবে গত দুই সপ্তাহে ঢাকা থেকে প্রায় দেড় হাজার মানুষ উপজেলা ফিরে এসেছে। প্রথম অবস্থায় প্রবাসী ও ভারত ফেরতসহ ২৮ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখে প্রশাসন। এদের মধ্যে জাগলবা গ্রামের এক দম্পতিসহ ১০ জনের হোম কোয়ারেন্টিনের সময় শেষ হয়েছে। সরকারের সাধারণ ছুটি ঘোষণার পর থেকে ঢাকা ফেরতদের চাপ সামলাতে হিমসিম খেতে হচ্ছে জনপ্রতিনিধিদের।

সোমবার সকালে উপজেলার গোপগ্রাম ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ঢাকা ফেরত দশম শ্রেণির এক ছাত্রের বাড়িতে লাল নিশানা টাঙ্গিয়ে দিয়েছে প্রশাসনের কর্মকর্তারা। পাঁচ সদস্যের এই পরিবারটি বৃহস্পতিবার ঢাকা থেকে নিজের বাড়ি গোপগ্রামে ফিরেছে। পরদিন এই পরিবারের দশম শ্রেণির এক ছাত্র জ্বর ও সর্দি কাশিতে আক্রান্ত হয়। এ নিয়ে প্রশাসনের কাছে প্রতিবেশীরা অভিযোগ করেন।

অভিযোগ কারীরা জানায়, ঢাকা ফেরত ওই ব্যক্তি হোম কোয়ারেন্টিন না মেনে ব্যবসা বাণিজ্য ও গল্প-গুজব করে বেড়াচ্ছেন। অবশেষে সোমবার সকালে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের উপস্থিতে পুলিশ ওই ছাত্রের বাড়িতে লাল নিশানা টাঙ্গিয়ে দেয়। পরিবারটির সদস্যদের আগামী ১৫ দিনের জন্য হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার জন্য অনুরোধ করে।

জয়ন্তীহাজরা ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মহিষবাথান গ্রামের শ্বশুর বাড়িতে আত্মগোপনে থাকা ইটালি ফেরত জামাই রবিবার আনছার বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতে টের পেয়ে স্ত্রীকে নিয়ে পালিয়ে যায়। ওই দিনই শ্বশুর হামিদ প্রামাণিকের বাড়ির সব সদস্যদের হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়। কিন্তু পলাতক জামাতাকে আর পাওয়া যায়নি।

রবিবার সকাল থেকে উপজেলা সদরের প্রধান বাজারের সরকারি নির্দেশ অমান্য করায় এক ব্যবসায়ীকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমান আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সবুজ কুমার বসাক। গত দুই দিনে উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ বাহিনীর পক্ষ থেকে প্রায় পাঁচ শতাধিক শ্রমজীবী ও দুস্থদের বাড়িতে চাউল মুড়ি আলু তেল পৌঁচ্ছে দেওয়া হয়। এ ছাড়া স্থানীয় পর্যায়ের ব্যক্তি বিশেষেরে পক্ষ থেকে প্রায় সহস্রাধিক পরিবারের মধ্যে চাউল আলু প্রয়োজনীয় টাকা পৌঁছে দেওয়া হয়।

করোনা আক্রান্তের শঙ্কায় স্কুল ছাত্রের বাবার বাড়ির ওপর কোয়ারেন্টিন ঘোষণার সময় ওই শিক্ষার্থীর মা পারুল আক্তার ঘোরতর আপত্তি জানান। তিনি জানান, তার ছেলে সাময়িক অসুস্থ হয়েছিল। আবার সুস্থ হয়ে উঠেছে। এ ছাড়া তার স্বামী একমাস আগে ভারত সফর করে দেশে ফিরেছেন। তিনি দাবি করেন, গুজবে কান দিয়ে তাদের কোয়ারেন্টিনে রাখা হচ্ছে।

এ সময় উপস্থিত গোপগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন বলেন, তিনিও স্থানীয়দের অভিযোগে পেয়েছেন। এ ছাড়া উপজেলা ও স্বাস্থ্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই পরিবারটিকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখার নির্দেশ দিয়েছে। এই সময়ে ঘরে থাকতো খারাপ কিছু না বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

অভিযানে থাকা ভবানীগঞ্জ পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের আইসি এসআই আব্দুর রাজ্জাক বলেন, পাঁচ সদস্যের এই পরিবারটির ঢাকাতে বসবাস করে। ঢাকা থেকে ফেরার পর পরিবারের একজন যেহেতু অসুস্থ হয়ে পড়েছে তাই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে তিনি দায়িত্ব পালন করছেন। পরিবারটিকে আগামী ১৫ দিন (১৪ এপ্রিল পর্যন্ত) হোম কোয়ারেন্টিন মানার জন্য অনুরোধ করেছেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কামরুজ্জামান গোপগ্রামের স্কুল ছাত্রের বাড়ির সদস্যদের কোয়ারেন্টিনে রাখার খবরটি নিশ্চিত করেন। সব মিলিয়ে প্রায় ৩০ পরিবার ও ব্যক্তিকে হোম কোয়ারেন্টিন রাখা হয়েছিল। ইতোমধ্যে ১০ জনের কোয়ারেন্টিনে থাকার সময় শেষ হয়েছে। এক দম্পতি স্বাস্থ্য সনদ ও নিয়েছেন। তবে ঢাকা ফেরতদের চাপ বাড়ায় সব ঠিক রাখা কষ্ট সাধ্য হয়ে পড়েছে। উপজেলায় এখনো করোনা আক্রান্তের খবর পাওয়া যায়নি।