মো. জাবেদ শেখ, শরীয়তপুর
৫২-র ভাষা আন্দোলন এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে প্রেরণা যোগানো কালজয়ী গান ‘মোদের গরব মোদের আশা, আ-মরি বাংলা ভাষা'-র স্রষ্টার শৈশব ও কৈশোর কেটেছে শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া উপজেলার বিঝারী ইউনিয়নের মগর গ্রামে।
সরকারি নজরদারি এবং সঠিক তদারকির অভাবে অতুল প্রসাদ সেনের বাড়িটি আজ বেদখল হয়ে গেছে। বর্তমানে অতুল প্রসাদ সেনের বাড়ির নাম হয়েছে মুন্সি বাড়ি। তার পৈত্রিক ভিটাটি জোর করে দখল করে আছেন স্থানীয় প্রভাবশালী সাবেক মেম্বার নান্নু মুন্সী ও তার ভাই রফিক মুন্সী।
১৮১৭ সালের ২০ অক্টোবর জন্ম গ্রহণের পর অতুল প্রসাদ সেন বড় হয়েছেন দাদা বাড়ি নড়িয়া উপজেলার বিঝারী ইউনিয়নের মগর গ্রামে। এখানেই কেটেছে তার শৈশব ও কৈশোর। আর লন্ডনে ব্যস্ত সময় কেটেছে ব্যারিস্টারি পড়ালেখা নিয়ে। এরই মধ্যে চলে সঙ্গীত চর্চা।
সরেজমিনে দেখা যায়, অতুল প্রসাদ সেনের স্মৃতিবিজড়িত বাড়িটি দখলে রয়েছে এবং তার মৃত্যুর পরে নষ্ট হয়ে গেছে বাড়িটির সকল স্মৃতিচিহ্ন। সম্প্রতি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় তার হাতে প্রতিষ্ঠিত পঞ্চপল্লী গুরুরাম উচ্চ বিদ্যালয়ে তার একটি ম্যুরাল নির্মাণ করলেও তার পৈত্রিক ভিটা দখল করে আছেন প্রভাবশালী মুন্সী পরিবার। শৈশবে যে বাড়িতে কেটেছে তার দীর্ঘ সময় সেই বাড়ি এখন অন্যের দখলে।
১৯৩৪ সালের ২৬ আগস্ট ভারতের লখনৌতে অতুল প্রসাদ সেন পরলোকগমন করলেও তার অমর সৃষ্টি নতুন প্রজন্মের কাছে রয়েছে গবেষণার লক্ষ্যবস্তু হিসেবে। বাংলা সাহিত্যে অতুল প্রসাদ সেনের অবদান অবিস্মরণীয় হয়ে আছে।
পাশাপাশি সরকার তার স্মৃতিবিজড়িত বাড়িটি ভূমি শিকারিদের হাত থেকে উদ্ধার করে সাহিত্য চর্চার কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। কিন্তু দাবি আজও দাবিই রয়ে গেছে।
এ বিষয়ে কবি ও শিক্ষক শ্যাম সুন্দর দেব নাথ বলেন, জেলা প্রশাসক রাম চন্দ্র দাস থাকতে অতুল প্রসাদ সেনের একটি ম্যুরাল করে দিয়েছিলেন। সেই সঙ্গে ভূমি উদ্ধারেও চেষ্টা চালিয়েছেন। আগে সেখানে একদিন মেলা হতো অথচ তিনি তিন দিনব্যাপী মেলার অনুমতি দিয়েছিলেন। এরপর ডিসি মাহমুদুল হাসান খান ভূমি উদ্ধারের চেষ্টাসহ মেলা ছয়দিন করেছিল। বর্তমান জেলা প্রশাসক আসার পর দুই বছর যাবত মেলা বন্ধ রয়েছে।
আপনারা কিভাবে এ বাড়ি দখল করে আছেন প্রশ্নের জবাবে মেম্বার নান্নু মুন্সী বলেন, এখানে চারটা খতিয়ানে সর্বমোট পাঁচ একর ভূমি আছে। এর মধ্যে আমরা তিনটি খতিয়ান নিয়েছি নিলাম মূলে।
এস এ রেকর্ড কার নামে? এর জবাবে তিনি বলেন, অতুল প্রসাদের আত্মীয়দের নামে তবে বিআরএস আমাদের নামে, তবে কিভাবে বিআরএস করল তার কোনো কাগজ দেখাতে পারেননি তিনি।
আরও পড়ুন : ৭ দিনে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ রোহিঙ্গাসহ ১১ জনের প্রাণহানি
এ বিষয়ে বিঝারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রাজ্জাক হাওলাদার বলেন, অতুল প্রসাদের জন্ম ভিটা নিয়ে ডিসি অফিস তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছিল ভূমি অফিসকে। কিন্তু ভূমি অফিস কি রিপোর্ট দিয়েছে তা আমরা জানি না। তবে মুন্সী বাড়ির লোকজন বলেন, তারা অতুল প্রসাদ সেনের আত্মীয়ের কাছ থেকে ক্রয় করেছেন। মেলার বিষয়টি একবছর নির্বাচনের কারণে, আরেক বছর এসএসসি পরীক্ষার কারণে বন্ধ রেখেছি।
নড়িয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার জয়ন্তী রুপা রায় বলেন, আসলে আমি নতুন এসেছি তবে জানতে পারলাম এখন যারা জমি ভোগ করছেন, তাদের বাবা না কি ক্রয় করেছিল। তবে আমি খোঁজ নেব। আমার মেয়াদের মধ্যে সেখানে কোনো নোটিশ করা হয়নি।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মুঠোফোনে দৈনিক অধিকারকে বলেন, আমি অসুস্থ। গলায় ব্যথা। অফিসে আসেন। ইতোমধ্যে ইউনিয়ন ভূমি অফিসকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। অফিসে এসে দেখবেন।
ওডি/এএসএল
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড