• মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৬ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

ফেনীতে চলছে কৃষি জমির মাটিকাটার মহোৎসব

  এস এম ইউসুফ আলী, ফেনী

২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১৪:৩৪
কৃষি জমি
কৃষি জমির মাটি কেটে তোলা হচ্ছে পিকআপে (ছবি : দৈনিক অধিকার)

ফেনীতে অবাধে কৃষি জমির মাটি কেটে নিচ্ছে একটি চক্র। প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞার তোয়াক্কা না করে ওই চক্র দিনরাত সমানতালে মাটি বিক্রি করে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা।

এতে করে জমি ফসল উৎপাদনের উপযোগিতা হারানোর পাশাপাশি নষ্ট হচ্ছে গ্রামীণ রাস্তাঘাটও। এ নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করলেও জনপ্রতিনিধিদের সংশ্লিষ্টতা থাকায় কেউ মুখ খুলছে না।

শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) সরেজমিনে দেখা গেছে, ফেনী সদর উপজেলার শর্শদী ইউনিয়নের সফিয়াবাদ গ্রামের কেরানী বাড়ি সংলগ্ন কৃষি জমি থেকে মাটি কাটা হচ্ছে। একটি স্কেভেটর মেশিন দিয়ে কাটা মাটিগুলো চারটি পিকআপে করে অন্যত্র নেওয়া হচ্ছে। প্রতি পিকআপ ভর্তি মাটি কিনতে খরচ হয় এক হাজার ৬শ টাকা। সেখানে মাটি কেনাবেচার কারবার করছেন স্থানীয় ইউপি সদস্য মোরশেদ আলম।

সফিয়াবাদ ও শর্শদীসহ আশপাশের এলাকায় তার মাধ্যমেই মাটি কেনাবেচা হয়। মাটি কাটার স্থানে প্রশাসনের লোকজন উপস্থিত হওয়ার আগেই গাড়ি সরিয়ে নিতে নিজস্ব লোকজন দিয়ে পাহারা বসিয়েছেন। প্রশাসনের নজর এড়াতে নিকটস্থ সড়কে গাড়ি চলাচল না করে দূরবর্তী এলাকা হয়ে মাটি গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।

স্থানীয়রা জানান, বেশ কিছুদিন ধরে ওই এলাকায় মাটি কাটার মহোৎসব চলছে। বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) রাত থেকেই কেরানী বাড়ি সংলগ্ন ওই জমি থেকে স্কেভেটর দিয়ে মাটি কাটা শুরু হয়। স্থানীয় বাসিন্দা মিন্টু মিয়ার কৃষি জমিটি বর্তমানে ডোবায় পরিণত হয়েছে।

স্থানীয়রা আরও জানায়, মোরশেদ ও তার সহযোগীরা ফসলি জমির ৫ থেকে ৬ ফুট গর্ত করে মাটি কেটে নেন। এতে করে পার্শ্ববর্তী জমিও ফসল উৎপাদনে উপযোগিতা হারিয়ে ফেলবে। যে জমি থেকে মাটি কাটা হয় সেটিতে ৫ থেকে ৬ বছর ধরে ফসল উৎপাদন সম্ভব হবে না।

মাটি কেনাবেচার অভিযোগ অস্বীকার করেন ইউপি সদস্য মোরশেদ আলম। তার দাবি, মাটি কাটার জন্য তিনি শুধু স্কেভেটর ভাড়া দিয়েছেন।

শর্শদী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জানে আলম ভূঁইয়া জানান, দিনে মাটি বিক্রি হয় না। গভীর রাতে চুরি করে কয়েকটি গাড়ি নিয়ে মাটি বিক্রি করা হয় বলে তিনি জেনেছেন।

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাসরীন সুলতানা জানান, কৃষি জমির টপ সয়েল মাটি কেটে নেওয়ার বিষয়ে জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসন অভিযান অব্যাহত রেখেছে।

এ দিকে, জেলার সোনাগাজী উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন, মহুরী প্রজেক্ট ও থাকখোয়াজেরলামছি মৌজায় সরকার দলীয় নেতাকর্মীদের ছত্রছায়ায় এক শ্রেণির দুর্বৃত্ত অবৈধভাবে জোর পূর্বক ফসলি জমির মাটি কেটে বিক্রি করে দেওয়ায় কৃষক, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও ভুক্তভোগীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। মাটি দস্যুরা প্রভাবশালী হওয়ায় ভয়ে কেউ মুখ খোলার সাহস পাচ্ছেন না। প্রকাশ্যে গোপনে প্রশাসনকে জানিয়েও তেমন কোনো প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না।

বৃহস্পতিবার সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, বগাদানা ইউনিয়নের আলমপুরের আশপাশের মুন্সীবাড়ী সড়ক, চরদরবেশ ইউনিয়নের সেনেরখিল, চর মজলিশপুর, চরছান্দিয়া, মঙ্গলকান্দি, মতিগঞ্জ আমিরাবাদ ইউনিয়নের বিভিন্ন সড়ক দেবে খানাখন্দে পরিণত হয়েছে।

পিচ ঢালা রাস্তাগুলো অত্যধিক চাপে ভেঙে পড়েছে। মেকাডম ভেঙে ইটের লালচে বালু ছড়িয়ে পড়েছে। ধুলাবালি ছড়িয়ে পড়ায় সড়কগুলো পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি ও সর্বসাধারণের চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

বগাদানা ইউনিয়ন পরিষদের এক সদস্য জানান, অত্যধিক মাটি পরিবহনের কারণে গ্রামীণ সড়কগুলো নষ্ট হচ্ছে। ধুলাবালির কারণে মানুষের বসতবাড়িতে থাকাও কষ্টকর হয়ে পড়েছে।

সড়কের পাশে বাড়িতে বসবাসকারীরা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। মহুরী প্রকল্প এলাকা এবং থাকখোয়জেরলামছি মৌজা, সোনাপুর, সুজাপুর, সুলাখালী, ছাড়াইতকান্দি থেকে মাটিখেকোরা এক শ্রেণীর সরকারদলীয় নেতাকর্মীকে ম্যানেজ করে দিনের আলোয় বড় বড় মেশিন দিয়ে ফসলি জমির মাটি কেটে বিক্রি করছে। নিরীহ কৃষকের ফসলি জমি থেকে তাকে না জানিয়ে বা জবরদখল করে মাটি কেটে নিচ্ছে।

ভূমি দস্যুরা ফসলি জমির মাটি বিক্রি করে মাছের প্রকল্পের কথা বলে শত শত একর কৃষিজমি নষ্ট করছে। এর প্রভাব বেশি পড়েছে সোনাগাজীর মুহুরী প্রজেক্ট সংলগ্ন থাকখোয়াজেরলামছি মৌজার স্লুইসগেট এলাকায়।

এ সব বিষয়ে ভুক্তভোগীরা থানা ও উপজেলা প্রশাসনের কাছে বারবার অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাচ্ছে না বলে ক্ষতিগ্রস্তরা জানান। তারা আরও জানান, মাঝে মধ্যে উপজেলা প্রশাসন লোক দেখানো অভিযান চালালেও মাটি খেকো দস্যুদের হাত থেকে ফসলি জমি রক্ষা করা যাচ্ছে না।

আরও পড়ুন : সাতক্ষীরায় ট্রলির ধাক্কায় কৃষকের মৃত্যু

বগাদানা ইউপি চেয়ারম্যান ইসহাক খোকন জানান, তিনি মাটি সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত নন। দলীয় নেতাকর্মীরা জড়িত থাকায় তিনি বাধা দিয়ে বিরাগভাজন হতে চান না।

অপর দিকে মঙ্গলকান্দি ইউপি প্যানেল চেয়ারম্যান আলমগীর মাটি সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত এমন অভিযোগ থাকলেও তিনি অস্বীকার করেন।

উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ফারুক হোসেন বলেন, আমি মাটি সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে সবসময়ই সোচ্চার।

সোনাগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অজয় দেব জানান, স্থানীয় জনগণের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বেশ কয়েকবার অভিযান চালিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তাৎক্ষণিক জরিমানা করা হয়েছে। অভিযান অব্যাহত থাকবে। কোনো অবস্থায় ফসলি জমির মাটি বিক্রি করা যাবে না। যারা এ ধরনের কাজে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।

একই চিত্র জেলার দাগনভূইঞা, ফুলগাজী, পরশুরাম ও ছাগলনাইয়া উপজেলাতেও। এমনটি জানিয়েছেন আমাদের উপজেলা প্রতিনিধিরা।

ওডি/এএসএল

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড