শাহারিয়ার রহমান রকি, ঝিনাইদহ
বাস-ট্রাক কিংবা অন্যান্য যানবাহনের দ্রুত গতি আর ওভারটেকিংয়ের প্রতিযোগীতায় ঝিনাইদহে অনিরাপদ হয়ে উঠছে সড়ক-মহাসড়ক। মৃত্যুর মিছিলে প্রতিনিয়ত যোগ হচ্ছে নতুন নতুন নাম। অথচ এই সড়ককে নিরাপদ করতে গেল বছরের নভেম্বর মাসের ১ তারিখে কার্যকর করা হয়েছিল সড়ক পরিবহন আইন। বর্তমানে এর ছিটেফোটাও প্রভাব নেই সড়কে।
ফায়ার সার্ভিসের তথ্যেমতে, জেলায় ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে ২১ টি দুর্ঘটনায় ৩৮ জন আহত ও ৩ জন নিহত হয়। ডিসেম্বর মাসে ৩৯ টি দুর্ঘটনায় ১০২ জন আহত ও ৪ জন নিহত হয় এবং ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে ৩১ টি দুর্ঘটনায় ৩৫ জন আহত ও ১১ জন নিহত হয়।
আর হাসপাতালের তথ্যে ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে সড়ক দুর্ঘটনা আহত জনিত কারণে ২২৪ জন চিকিৎসা নিয়েছে, মারা গেছে ৮ জন, ডিসেম্বর মাসে চিকিৎসা নিয়েছে ২৯০ জন, মারা গেছে ১০ জন এবং ২০২০ সালে জানুয়ারি মাসে চিকিৎসা নিয়েছে ২২৫ জন, মারা গেছে ৭ জন।
ফায়ার সার্ভিস ও সদর হাসপাতালের তথ্য মিলিয়ে দেখা যায় প্রতি সপ্তাহে গড়ে ৭ টির বেশি দুর্ঘটনা ঘটে, আহত হয় ৬০ জন এবং নিহতের সংখ্যা দাড়াচ্ছে গড়ে ৩ জন করে।
নিরাপদ সড়ক চাই থেকে শুরু করে ছাত্র আন্দোলনের ফলে সরকার কর্তৃক কার্যকর হওয়া সড়ক পরিবহন আইন - ২০১৮ কার্যকর হয়নি সড়কে, হয়নি কোন মামলা। পুরাতন আইনেও নিষিদ্ধ থাকায় যানবাহনে হচ্ছে না কোন মামলা। আর এ সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে বাস-ট্রাকসহ মহাসড়কে চলাচল নিষিদ্ধ নসিমন, করিমন, আলম সাধু, মাহিন্দ্র, ইজি বাইকসহ ৩ চাকার যান। শহরের ভিতরেও এই ৩ চাকার যান চলছে বিশৃঙ্খল ভাবে। যেন দেখার কেউ নেই। অনিরাপদ সড়কের এমন চিত্রে চরম দু:শ্চিন্তায় পড়েছেন পথচারী থেকে শুরু করে সর্বস্তরের মানুষ।
জেলার বাস টার্মিনাল বাইপাস সড়কে পথচারী দিপু মিয়া জানান, রাস্তার পাশ দিয়ে হাটলেও ভয় করে। বেপরোয়া গতিতে গড়াই-রুপসা বাস চলছে, মনে হয় কখন যেন গায়ের উপর উঠে যাবে। এমনই গতিতে চলে মনে হয় প্লেনের আগে চলে যাবে।
অন্যান্য পথচারীরা জানান, বড় বড় যানবাহনের পাশাপাশি ছোট যানবাহনগুলো পাল্লা দিয়ে চলে। যা বড় দুর্ঘটনার শঙ্কা তৈরি করে। ফলে সড়কে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা বাহিনীর উচিত এ ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া।
চালকরা বলছেন, ৩ চাকার যানবাহন নিষিদ্ধ থাকলেও জীবিকার তাগিদে আমরা সড়কে চালাই। পুলিশ মাঝে মধ্যে ধরে, তবুও সুযোগ বুঝে চালাতে হয়।
গড়াই পরিবহনের চালক উজ্জল বিশ্বাস বলেন, বাসের গতি বেশী থাকবেই। দ্রুত গতির কারণে কোন দুর্ঘটনা ঘটে না। মুলত ছোট গাড়ি বাসের সাথে পাল্লা দিয়ে চালানো এবং যত্রতত্র মহাসড়কে উঠা-নামার কারণেই দুর্ঘটনা ঘটে।
ঝিনাইদহ ফায়ার সার্ভিসের ভারপ্রাপ্ত উপ-সহকারী পরিচালক বিপুল হোসেন দৈনিক অধিকারকে জানান, উদ্ধার অভিযানে গিয়ে দেখা যায় বেপরোয়া গতিতে ওভারটেকিং বা যত্রতত্র যানবাহন থামিয়ে রাখার কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে। পাশাপাশি লাইসেন্স বিহীন ৩ চাকার যান ও মটরসাইকেল গুলো দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। গত শুক্রবার (৩১ জানুয়ারী) এমন ঘটনা ঘটেছে। দ্রুত গতিতে মটরসাইকেল চালানোর সময় দুর্ঘটনায় জেলার মহেশপুরে ৩ বরযাত্রী নিহত হয়।
নিরাপদ সড়ক চাই জেলা ইউনিটের সভাপতি এ্যাড. মনোয়ারুল হক লাল দৈনিক অধিকারকে জানান, দীর্ঘদিনের আন্দোলন সংগ্রামের পর নিরাপদ সড়ক গড়তে সড়ক পরিবহন আইনটি যখন পাস হয়েছিল ভেবেছিলাম ভালো কিছু হবে। কিন্তু না। শুধু ছবি তোলা, প্রচারে আসার জন্য লোকজন ডেকে নিয়ে লিফলেট বিতরণ, সেমিনার করা হয়েছিল। এখন তো এর লেশমাত্র চোখে পড়ছে না। এগুলো লোকদেখানো ছাড়া আর কিছুই না বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি বলেন, এই আইন বাস্তবায়ন করলেতো কোন লাভ পাওয়া যাবে না, ফলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর গাফিলতিতে মহাসড়ক অনিরাপদ হয়ে উঠছে। এমন চলতে থাকলে আন্দোলনের ডাক দেয়া হবে বলে হুশিয়ার করে দেন তিনি।
আরও পড়ুন : ৫ দিন পর উদ্ধার হলো শিশু আশামণি
ট্রাফিক ইন্সপেক্টর কাজী হাসানুজ্জামান জানান, নতুন সড়ক পরিবহন আইন বাস্তবায়িত হতে হয়তো আরও একটু সময় লাগবে। স্পিড মিটার দিয়ে গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণে এর আগেও আমরা সড়কে অভিযান চালিয়েছি। বেশ কিছু বাসকে সতর্ক করা হয়েছে বলে যোগ করেন তিনি।
ওডি/এএইচ
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড